স্পোর্টস ডেস্ক : জয়ের জন্য সিডনি টেস্টের শেষ দিনে ভারতের দরকার ছিলো ৩০৯ রান। আর অস্ট্রেলিয়ার দরকার ছিলো ৮ উইকেট। এই অবস্থায় পঞ্চম দিনের খেলা শুরু করে শুরুতেই ধাক্কা খায় সফরকারীরা। যদিও ধাক্কা সামলে চেতশ্বর পূজারার দৃঢ়তার পর ঋশভ পান্তের আগ্রাসী এক ইনিংস আর হনুমা বিহারি, রবীচন্দ্রন অশ্বিনের নিবেদনে ম্যাচ বাঁচিয়ে ফেলেছে ভারত।
৪০৭ রানের অসম্ভব এক লক্ষ্য তাড়ায় তাড়ায় শেষ দিনের পুরোটা ব্যাট করে ভারত করেছে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান। ফলে ম্যাচ হয়েছে ড্র। বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফিতেও তাই থাকলো ১-১ সমতা। ব্রিসবেনে শেষ টেস্টেই জমবে সিরিজ মীমাংসার লড়াই।
আগের দিনের ২ উইকেটে ১০২ রান নিয়ে নেমেই উইকেট হারায় ভারত। অফ স্পিনার ন্যাথান লায়নের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরে যান মাত্র ৪ রান করা রাহানে। এরপর দারুণ এক জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় সফরকারীরা। এক প্রান্তে পূজারা ছিলো দৃঢ়তার ছবি, অন্যদিকে আগ্রাসী মেজাজ নিয়ে নামেন পান্ত। নিজের স্বভাবের সঙ্গে মাননসই ব্যাট চালাতে থাকেন তিনি।
অজি বোলারদের উপর চালান পাল্টা আক্রমণ। তার ব্যাটের ঝাঁজে এক পর্যায়ে ম্যাচ জিতে যাওয়ার অবিশ্বাস্য সম্ভাবনাও দোলা দিতে থাকে ভারতের। পান্ত শেষ পর্যন্ত টিকে থাকলে হয়তো সেই সমীকরণও মিলে যেতে পারতো। চতুর্থ উইকেটে পূজারার সঙ্গে পান্ত যোগ করেন ১৪৮ রান। সেঞ্চুরির একদম কাছে থাকা এই বাঁহাতি কিপার ব্যাটসম্যান লায়নকে উড়াতে গিয়ে পয়েন্ট ক্যাচ দিয়ে দেন। মাত্র ৩ রানের জন্য হাতছাড়া হয় তার সেঞ্চুরি। নিভে যায় ভারতের অবিশ্বাস্য এক সম্ভাবনারও। ৯৭ রানের ইনিংস খেলতে পান্তের খরচ হয় ১১৮ বল। ১২ চার আর ৩ ছক্কাও মেরেছেন তিনি।
পান্তের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি উইকেটে পুজারা। ইনিংসের ৮৯তম ওভারে জশ হ্যাজলউডের বলে সোজা বোল্ড হয়ে যান তিনি। পুজারার ব্যাট থেকে আসে ২০৫ বলে ১২ চারের মারে ৭৭ রানের ইনিংস।
ভারতের সংগ্রহ ৮৮.২ ওভারে ৫ উইকেটে ২৭২ রান। ম্যাচ বাঁচাতে শেষের ৫ উইকেটে খেলতে হতো আরো ৪৩.৪ ওভার। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান হানুমা বিহারি পায়ে চোট পেলে আরো কঠিন হয় তাদের কাজ। কিন্তু সেই চোট নিয়েই ব্যাটিং চালিয়ে যান বিহারি। সঙ্গী হিসেবে পেয়ে যান অশ্বিনকে। দু’জন মিলে অবিশ্বাস্য জুটি গড়েন। যার সুবাদে আর কোনো উইকেটই হারাতে হয়নি ভারতকে। টেস্টের কঠিনতম শেষ সেশনটি বিনা বিপদেই পার করে দেন তারা।
ইনিংসের ১৩১তম ওভার শেষে যখন ড্র মেনে নেন অসি অধিনায়ক, তখন বিহারি-অশ্বিন জুটির সংগ্রহ ২৫৯ বল বা ৪৩.১ ওভারে ৬২ রান। মূলত এ জুটির সুবাদেই ম্যাচটি ড্র করতে সক্ষম হয়েছে ভারত। কেননা এদের যেকোনো একজন আউট হলেও তখন বাকি থাকতেন শুধুই বোলাররা। অবশ্য বিহারিকে আউট করার সুযোগ তৈরি করেছিলেন মিচেল স্টার্ক। কিন্তু উইকেটের পেছনে আবারো ক্যাচ ছেড়ে দেন অধিনায়ক পেইন। ফলে ম্যাচ জিততে না পারার বেদনা নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছে অস্ট্রেলিয়াকে। শেষপর্যন্ত বিহারি ১৬১ বলে ২৩ ও অশ্বিন ১২৮ বলে ৩৯ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৩৩৮ রান করে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে ভারত অলআউট হয় ২৪৪ রানে। ফলে স্বাগতিকরা পেয়ে যায় ৯৪ রানের লিড। নিজেদের দ্বিতীয় ইনিংসে ৬ উইকেটে ৩১২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে অস্ট্রেলিয়া। ভারতের সামনে জয়ের জন্য লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৩২ ওভারে ৪০৯ রান।
এর বিপরীতে ১৩১ ওভার খেলে ৫ উইকেটে ৩৩৪ রান করে তারা। দিনের শেষ ওভারের আগেই ড্র মেনে নেয় দুই দল। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট ড্র করার পথে ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে এটি দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ। ১৯৯১ সালে এডিলেইডে ম্যচের শেষ ইনিংসে ৩৩৫ রান নিয়ে ড্র করেছিল ইংল্যান্ড।
এছাড়া ওভারের হিসেবে ভারতের ম্যাচ বাঁচানোর তালিকায় এটি চলে এসেছে চতুর্থ স্থানে। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে পাকিস্তানের বিপক্ষে দিল্লি টেস্টে ১৩১ ওভার ব্যাট করে ম্যাচ ড্র করেছিল তারা। চতুর্থ ইনিংসে সর্বোচ্চ ১৫০.৫ ওভার ব্যাটিং করে ম্যাচ ড্র করার রেকর্ড রয়েছে ভারতের। যা তারা করেছিলো ইংল্যান্ডের বিপক্ষে, ১৯৭৯ সালের ওভাল টেস্টে।