অনলাইন ডেস্ক : সাত বছর বয়সী এক শিশুকে ধর্ষণের ঘটনায় তিন ধরনের প্রতিবেদনে গরমিল পাওয়ায় অসন্তোষ জানিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন, সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক ও পুলিশ সুপারসহ (এসপি) সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আসামির জামিনের শুনানি নিয়ে রোববার (১৭ জানুয়ারি) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও কে এম জাহিদ সারওয়ারের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে আজ জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মো. শাহপরান চৌধুরী। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম। সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুর্টি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনিরুল ইসলাম আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
আইনজীবীরা জানান, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে ৭ বছরের এক শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে ১১ বছর বয়সী আরেক কিশোরের বিরুদ্ধে করা মামলায় ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষায় একাধিক চিকিৎসকের ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন দেয়া এবং তদন্তে গাফিলতির জন্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট ১০ চিকিৎসক ও এসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তাকে তলব করেছেন হাইকোর্ট।
আগামী ১৮ ফেব্রুয়ারি তাদেরকে সশরীরে হাজির হয়ে এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। ওই দিন এ বিষয়ে শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে, চিকিৎসকদের বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সচিব এবং পুলিশদের জন্য মহাপরিদর্শককে (আইজিপি) ৩ সদস্য বিশিষ্ট পৃথক কমিটি গঠন করে তদন্ত শেষে এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া ধর্ষণ মামলার কার্যক্রম ৩ মাসের জন্য স্থগিত করেছেন আদালত।
আইনজীবীরা বলেন, ১১ বছর বয়সী ওই কিশোরের জামিন আবেদনের ওপর শুনানির সময় দাখিল করা নথিতে ধর্ষণ বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য বা গরমিল পাওয়া যায়। তাই আদালত উষ্মা প্রকাশ করেন।
এর আগে ২০২০ সালের ১১ সেপ্টেম্বর ভুক্তেভোগীর বাবা নাসিরনগর থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেন। মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৪ সেপ্টেম্বর তার ৭ বছরের মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে। মামলায় আসামি তার প্রতিবেশী, যার বয়স উল্লেখ করা হয় ১৫ বছর।
মামলার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ধর্ষণের শিকার শিশুটিকে পরদিন নাসিরনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। পরবর্তীতে শিশুটিকে জেলা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয় ৮ সেপ্টেম্বর। এ অবস্থায় ৬ সেপ্টেম্বর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে একটি ডাক্তারি প্রতিবেদন দেয়া হয়।
এদিকে আসামি হাইকোর্টে আগাম জামিন আবেদন করলে গত ৩ নভেম্বর এর শুনানি হয়। সেদিন আসামির বয়স প্রমাণের জন্য তার জন্মসনদ দাখিল করা হয়। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ছিল ১০ বছর। এ অবস্থায় হাইকোর্ট তাকে জামিন দেন এবং মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে এক মাসের মধ্যে তদন্ত সম্পন্নের নির্দেশ দেন। পাশাপাশি মামলার কেস ডকেট (সিডি) এবং তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন।
পরে তদন্ত কর্মকর্তা আসামির বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আইনের ৯(১) ধারায় অভিযোগপত্র দাখিল করেন। একই সঙ্গে তদন্ত কর্মকর্তা ও নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেন। এ সময় জেলা সদর হাসপাতাল থেকে ১২ সেপ্টেম্বর দেয়া ডাক্তারি প্রতিবেদন দাখিল করা হয়। সে প্রতিবেদনেও অসঙ্গতি দেখার পর আদালত তদন্ত কর্মকর্তাকে তদন্তের বিষয়ে প্রশ্ন করেন। এরপর তদন্ত কর্মকর্তা জেলা সদর হাসপাতালের আরেকটি প্রতিবেদন দাখিল করেন। সে আবেদনেও ভুক্তভোগীর শিশুর ডাক্তারি পরীক্ষায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একাধিক চিকিৎসক ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেদন এবং তদন্তে গাফিলতি প্রতীয়মান হওয়া এমন আদেশ দেন হাইকোর্ট।