সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরা থানা লকআপ থেকে নিখোঁজ মোখলেছুর ; চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ হাইকোর্টের

By Daily Satkhira

May 17, 2017

নিজস্ব প্রতিনিধি : জঙ্গি সন্দেহে আটক করে তিন দিন সদর থানা লকআপে রাখার পর নিখোঁজ হোমিও প্যাথিক চিকিৎসক শহরের কুখরালি গ্রামের ডা: মোখলেছুর রহমান জনি সম্পর্কে  আগামী জুলাইয়ের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাইকোর্টের বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও  বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ’র সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ গত মঙ্গলবার এ আদেশ দেন। এ দিকে রিটকারি নিখোঁজ ডাক্তার মোখলেছুর রহমান জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার রেশমা অভিযোগ করে বলেন, তার স্বামীর সন্ধানে গত ৯ মে হাইকোর্ট সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলার খবর প্রকাশ হওয়ার পর থেকে তাকে মোবাইল ফোনে নানাভাবে হুমকি ধামকি দেওয়া হচ্ছে। একপর্যায়ে তিনি মোবাইল ফোন বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছেন। সাতক্ষীরা ‘ল’ কলেজের চূড়ান্ত বর্ষের ছাত্রী ও নিখোঁজ জনির স্ত্রী জেসমিন নাহার রেশমার জারি করা গত ২ মার্চ রিট পিটিশনে (২৮৩৩/১৭) তিনি উল্লেখ করেন, গত বছরের ৪ আগষ্ট রাত সাড়ে ৯টার দিকে অসুস্থ বাবার জন্য  বাইসাইকেলে ঔষধ কিনতে যেয়ে লাবনী সিনেমা হলের মোড় এলাকা থেকে সদর থানার উপ-পরিদর্শক হিমেল তার স্বামী হোমিও চিকিৎসক মোখলেছুর রহমান জনিকে থানায় ধরে নিয়ে যায়। গত বছরের ৫, ৬ ও ৭ আগষ্ট তিনি শ্বশুর ও স্বজনদের নিয়ে সদর থানা লকআপে তাকে খাবারও দিয়েছেন, তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তৎকালীন ওই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এমদাদুল হক শেখ ও উপ-পরিদর্শক হিমেলের সঙ্গে কথা বললে জনির জঙ্গি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানানো হয়। স্বামীর মুক্তির বিনিময়ে তৎকালীন সদর থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপ-পরিদর্শক হিমেল তার কাছে দাবি করেন মোটা অংকের টাকা। এরপর ৮ আগষ্ট থানায় গেলে জনিকে আর পাওয়া যায়নি। পুলিশ জনির অবস্থান সম্পর্কে জানাতে পারেননি। বিষয়টি  সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধি, ক্ষমতাসীন দলের নেতা, মানবাধিকার কর্মী জেলা প্রশাসক ও পুলিশের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে অবহিত করেন। এক পর্যায়ে ২৪ আগষ্ট জানানো হয় সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারকে। ২৬ ডিসেম্বর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেননি। একের পর এক হয়রানি হওয়ার পর বাধ্য হয়ে তিনি চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। স্বামীর খোঁজে গত সাত মাস ধরে প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ধর্না দিয়েছেন তিনি। একপর্যায়ে তার সন্ধান না করতে পেরে চলতি বছরের ২ মার্চ হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন তিনি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মহাপুলিশ পরিদর্শক, উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শক (খুলনা), সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক, সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার, সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, উপ-পরিদর্শক হিমেল ও সাতক্ষীরা কারাগারের জেলরকে বিবাদি করা হয়। রিট দায়েরের পর গত ৬ মার্চ  শুনানী শেষে আদালত রুল জারির পাশাপাশি নিখোঁজের বিষয়ে সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যা চেয়ে ১৯ মার্চ দিন ধার্য করেন। ১৯ মার্চ রোববার আদালতে উপস্থাপন করা পুলিশ সুপারের ব্যাখ্যায় বলা হয়, নিখোঁজ মোখলেছুর রহমান নিষিদ্ধ সংগঠন ‘আল্লাহ’র দল’ এর সঙ্গে যুক্ত এবং তাকে গ্রেফতার করা হয় নাই। ১৯ মার্চ শুনানী শেষে আদালত ডা: জনিকে ১২ এপ্রিলের মধ্যে বিচারিক আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন। একই সাথে ৯ মে এ সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ১৯ মে আদালত থেকে তাকে চিঠি ইস্যু করা হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা যায়, আদালতের নির্দেশ পেয়ে ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসান খুলনা রেঞ্জের অতিরিক্ত মহা পুলিশ পরিদর্শক মো: একরামুল হাবিবকে ( প্রশাসন ও অপারেশন, খুলনা, অনুসন্ধান শাখা) নির্দেশ দেন। একরামুল হাবিব সাতক্ষীরা পুলিশ সুপার আলতাফ হোসেন পিপিএম, নিরস্ত্র পুলিশ পরিদর্শক ফিরোজ হোসেন মোল্লা (সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, সদর থানা), এমদাদুল হক শেখ (সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সদর থানা), আব্দুল হাশেম( ওসি তদন্ত সদর থানা), উপ-পরিদর্শক হিমেল হোসেন (সাবেক উপ-পরিদর্শক সদর থানা, সাতক্ষীরা ও বর্তমান উপ-পরিদর্শক কোতোয়ালি থানা, যশোর), উপ-পরিদর্শক আনছার আলী (সাবেক উপ-পরিদর্শক সদর থানা, সাতক্ষীরা ও বর্তমান উপ-পরিদর্শক কোতোয়ালি, যশোর), উপ-পরিদর্শক সুলতানা পারভিন, সদর থানা সাতক্ষীরা, সিপাহী বাবুল হোসেন, সিপাহী মনিরুজ্জামান, সিপাহী এমদাদুল হক (সাতক্ষীরা সদর থানা), সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর দক্ষিণপাড়ার মোশারফ হোসেন, তার স্ত্রী আনোয়ারা বেগম, শহরের মুনজিতপুরের আব্দুল্লাহ সরদারের ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন, শহরতলীর চালতেতলা খ্রীষ্টানপাড়ার রাধাকান্ত গাইনের ছেলে মিলন গাইন ও কাটিয়া মাস্টারপাড়ার মৃত আজিজ বিশ্বাসের ছেলে পৌরসভার কর্মী ও সদর থানার দালাল ইদ্রিস বিশ্বাস ওরফে সাগরের কাছ থেকে নিখোঁজ ডা: মোখলেছুর রহমান জনি সম্পর্কিত জবানবন্দি নেন। জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতে পাঠানো প্রতিবেদনে ঢাকা লিগ্যাল সেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এএসএম জাভিদ হাসান উল্লেখ করেছেন যে, মোখলেছুর রহমান জনিকে গত বছরের ৪ আগষ্ট পুলিশ আটক করেনি। তাকে কেউ থানার মধ্যে দেখেনি। প্রতিবেদন পর্যালোচনা শেষে রিটকারি পক্ষের আইনজীবী অ্যাড. মো: মতিয়ার রহমান যুক্তিতর্ক উপস্থাপনে উল্লেখ করেন যে, রাষ্ট্রপক্ষ যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন তা একপেশে ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। যাদের বিরুদ্ধে ডা: মোখলেছুরকে আটক ও নিখোঁজ করার অভিযোগ উঠেছে তারাই ও তাদের কিছু পকেটের লোককে দিয়েই পুলিশের বিরুদ্ধে সাফাই গাওয়ানো হয়েছে। তাই বিষয়টি বিচার বিভাগীয় তদন্ত হওয়া উচিত। সেকারণে বিচারকদ্বয় আগামী ৩ জুলাই তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সাতক্ষীরার চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটকে নির্দেশ দিয়েছেন। একইসাথে আগামি ৩ জুলাই এ মামলাটি শুনানীর জন্য কার্যতালিকায় রাখার জন্য বলা হয়েছে। এমামলায় রাষ্ট্রপক্ষে আইনজীবী ছিলেন ডেপুটি এটর্নি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস।