কালিগঞ্জ প্রতিনিধি : কালিগঞ্জে চাকরি প্রদান ও বসতঘর তৈরি করে দেয়ার নামে প্রায় কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগে ৩ জনকে থানা হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ।
বুধবার বেলা ১টায় উপজেলার ধলবাড়িয়া ইউনিয়নের রঘুরামপুর এলাকা থেকে থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে পুলিশ তাদেরকে আটক করেন।
আটককৃতরা হলেন, উপজেলার কুশুলিয়া ইউনিয়নের ঘোজাডাঙ্গা গ্রামের মুজিবুর রহমানের ছেলে ও কথিত মানবাধিকার সংগঠন ক্লাইমেট ডেভলপমেন্ট এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি’র (সিডিএইসআরএস) বিভাগীয় প্রধান শাহিনুর রহমান (৩০), খুলনা বিভাগীয় পরিদর্শক ও কালিগঞ্জের আইডিয়াল (ডিআরএম) কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম (৪৫), বিভাগীয় সমন্বয়কারী ও একই কলেজের প্রভাষক নুর মোহাম্মাদ (৪০)।
একাধিক সূত্রে জানা যায়, উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের কথিত মানবাধিকার সংগঠন ক্লাইমেট ডেভলপমেন্ট এন্ড হিউম্যান রাইটস সোসাইটি (সিডিএইসআরএস) নামে কতিপয় ব্যক্তি অসহায় গরীব দুঃখী মানুষের বসতঘর দেওয়ার নামে জেলার দেবহাটা, কালিগঞ্জ ও শ্যামনগর উপজেলার ২৪২ পরিবারের অধিক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৬ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে। অথচ ওই মানবাধিকার সংগঠনের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই।
এছাড়া এই চক্র কালিগঞ্জ উপজেলায় ৮২টি স্কুল তৈরি করে দেওয়ার নামে শতাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকা। শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ প্রদানের প্রতিশ্রুতিতে তারা জনপ্রতি ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। দীর্ঘদিন যাবত ওই চক্রটি সাধারণ মানুষের সাথে প্রতারণা করার বিষয়টি কালিগঞ্জের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোজাম্মেল হক রাসেলের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তিনি সর্ব সাধারণের অবগতির জন্য ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে সবাইকে সতর্ক করে দেন। কিন্তু ওই চক্র গোপনে তাদের কাজ চালিয়ে যাচ্ছিল।
সরেজমিনে যেয়ে তাদের তৈরি করা কোন স্কুল খুঁজে পাওয়া না গেলেও টিনের তৈরি দু’একটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগী ধলবাড়িয়া গ্রামের শাহাজান আলী, কাসেম আলী, নূর কবির, নূর ইসলাম, রবি গাজী, মন্টু গাজীসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, প্রতারক চক্রের ওই তিন সদস্য গত বছর তাদের নিকট হতে ঘর বানানোর নামে ১৬ হাজার টাকা করে উত্তোলন করে। এসময় ওই প্রতারক চক্র তাদেরকে রেশন কার্ড, টয়লেট তৈরিসহ বিভিন্ন প্রতিশ্র“তি দেন। এক বছরের বেশি হয়ে গেলেও তারা কোন কিছু না দিয়ে বিভিন্ন তালবাহানা শুরু করেছে।
একই গ্রামের মীর আরশাফ হোসেনের স্ত্রী সেলিনা পারভীন জানান, তার মেয়ে ও মেয়ের ননদের জন্য ৬০ হাজার টাকা নিয়েছে। রঘুরামপুর এলাকার শফিকুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম ও আসমা পারভীন তাদেরে কাছ থেকেও স্কুলে চাকরি দেওয়ার নামে ৫ হাজার করে টাকা নিয়েছে। তারা আরও বলেন চাকরি দেওয়ার নামে প্রায় দেড় শতাধিক যুবক যুবতীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ওই প্রতারক চক্র।
ধলবাড়িয়া ইউপি চেয়ারম্যান গাজী শওকাত হোসেন জানান, চক্রটি তার এলাকার বিভিন্ন মানুষকে ভুল বুঝিয়ে সর্বশান্ত করেছে। চাকরি ও বাড়ি দেয়ার নামে হাতিয়ে মোটা অংকের অর্থ।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) দেলোয়ার হুসেন জানান, প্রতারণার অভিযোগে তিনজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।