নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার বছরের শুরুতেই আবারও জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি’র) অনুমোদনহীন ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত গাইড বই মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বাজারজাত করতে চুক্তিবদ্ধ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। বর্তমানে অনুমোদনহীন এ সমস্ত বই জেলা শহর ও এর আশপাশের বাজারে সয়লাব হয়ে গেছে বলে জানা গেছে। যেখানে অবৈধ নোট গাইড বই নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। তারপরও সয়লাব হয়ে যাচ্ছে অবৈধ নোট গাইডে। একটি গোপন সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের ২ নভেম্বর বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতি সভা করে তার একটি লিখিত চিঠি প্রেরন করে সাতক্ষীরা জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির নিকট। বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি মো” আরিফ হোসেন স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, গত ২০২০ সালে যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সমিতিতে যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানের পাঠ্যপুস্তক ও সৃজনশীল অনুশীলনমূলক পুস্তক পাঠ্য ছিল তা ২০২১ সালে অব্যাহত থাকবে। কেন্দ্রীয় পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতির নেতৃত্বে সাতক্ষীরা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকের সহযোগীতায় এই করোনার মধ্যেও ছাত্র-ছাত্রীদের মেধা ধ্বংস করতে এনসিটিবির অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ গাইড বাজারজাত করছে। এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারী সাতক্ষীরা জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কমিটি গঠন করা হয়। কমিটিতে জেলা বিএনপি নেতা সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিবের আপন ভাইপো সাইফুল ইসলাম বাবু কে সভাপতি ও আবু সালেক কে সাধারণ সম্পাদক করে ২১ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি দেয়া হয়। কমিটি গঠনের পর কেন্দ্রীয় কমিটির পরিদর্শকের একটি দল সাতক্ষীরায় এসে অবৈধ নি¤œমানে নোট গাইড পাঠ্য করতে অনুমোদন দিয়েছেন। এনসিটিবির অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ গাইডের মধ্যে রয়েছে পাঞ্জেরী, লেকচার, অনুপম, নবদূত, একটিভ প্লাস, স্কয়ার সহ বিভিন্ন গাইডে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কোন রচনা নেই। এমনকি স্বাধীনতার ঘোষক হিসেবে কোথাও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরও নাম লেখা নেই। তারপরও বীরদর্পে এসব অবৈধ নোট গাইড তারা শিক্ষকদের ম্যানেজ করে বাজার সয়লাব করে দিচ্ছে। আর এসব গাইড সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন উপজেলার বই মালিকরা বিক্রয় করতে মজুদ করে রেখেছে। এরমধ্যে সাতক্ষীরা শহরের পপুলার লাইব্রেরী এক থেকে দেড় শ‘ বস্তা, বই মেলা ৫ শ, পপি লাইব্রেরী ৩শ‘ থেকে ৪ শ, সাতক্ষীরা বুক হাউজ কয়েক শ সহ কলারোয়ার বই বিতান ও জাহাঙ্গীর লাইব্রেরী ১৫০, কালিগঞ্জের মডার্ণ বুক হাউজ ২-৩ শ, শ্যামনগরের রোকন বুক ডিপো ৪-৫ শ বস্তা বই মজুদ করে রেখেছে। কিন্তু প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন নজরদারী ও ব্যবস্থা না নেওয়ায় এসব অবৈধ নোট গাইড পড়ে ছাত্র-ছাত্রীরা সেভাবে গড়ে উঠতে পারছেনা। সূত্র আরো জানান, চলতি বছরের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিরোধী বই বাজারজাত করতে জেলার সবগুলো শিক্ষক সমিতি বই প্রকাশনীর সাথে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। জেলায় বিভিন্ন প্রকাশনীর প্রতিনিধিরা বিভিন্ন স্কুলে স্কুলে গিয়ে গোপনে বইয়ের প্রচার করছে। তারা সমিতির নেতাদের সাথে মোটা টাকা বই পাঠ্য করতে চুক্তিবদ্ধ হচ্ছে। মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত বই সমিতির মাধ্যমে পাঠ্য করতে তৎপর হচ্ছেন অসাধু কতিপয় শিক্ষকরা। অতীতের মতো মোটা টাকা দিয়ে সমিতির নেতাদের ম্যানেজ করছে। এ ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসনের বিধি-নিষেধকেও ভঙ্গ করা হচ্ছে। যদিও বুধবার বিকালে শহরের কয়েকটি বইয়ের দোকানে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনা করে। এতে জরিমানাও করা হয়। যদি এনসিটিবি’র অনুমোদনহীন এসব অবৈধ নোট গাইড যদি এখনই বন্ধ করা না যায়, তবে আগামী দিনে ছাত্র-ছাত্রীরা ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যাবে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বই ব্যবসায়ীরা জানান, ভ্রাম্যমান আদালতের সময় পপি লাইব্রেরীর মালিক মিলন আহম্মেদ আদালতকে ভূল বুঝিয়ে প্রতারনা করেছেন্। এব্যাপারে সচেতন মহল ও অভিভাবকরা তার এই প্রতারণার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন। এদিকে, গত ১৬ জানুয়ারী অবৈধ নোট গাইড বই নিষিদ্ধ করে শিক্ষা আইনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। ওই আইনের খসড়ার ১৬ ধারার ১ ও ২ উপধারায় বলা হয়েছে, কোনো ধরনের নোট বই বা গাইড বই মূদ্রণ, বাঁধাই, প্রকাশ বা বাজারজাত করা যাবে না। এই বিধানের লঙ্ঘন করলে অনূর্ধ্ব তিন বছর কারাদন্ড বা পাঁচ লাখ টাকা অর্থদন্ড অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এব্যাপারে সাতক্ষীরার সচেতন মহল মনে করেন, এনসিটিবির অনুমোদনবিহীন এসব অবৈধ গাইডের বিরুদ্ধে এখনই ব্যবস্থা নেয়া উচিত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে যদি এখনই কোন ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তা হলে ইতিহাস সম্পর্কে বিশেষ করে স্বাধীনতার মূল ইতিহাস থেকে ছাত্র-ছাত্রীদের অজানাই থেকে যাবে। এব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা পুস্তক প্রকাশক ও বিক্রেতা সমিতির কমিটির সভাপতি সাইফুল ইসলাম বাবুর মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমরা নিষিদ্ধ গাইড বইয়ের কোন সহযোগীতা করিনা। এব্যাপারে এ্যাড. ফাহিমুল হক কিসলু বলেন, আমাদের শিক্ষা পদ্ধতি বর্তমান শিক্ষকরাই জানেনা। তারা নিজেরাই ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে তারাও গাইড বইয়ের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া শিক্ষরা দূর্ণীতিগ্রস্থ হওয়ায় নিষিদ্ধ গাইড বই ছড়িয়ে দিচ্ছে। আর নাম মাত্র জরিমানা না করে বইয়ের দোকান মালিকদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। এব্যাপারে এনডিসি আজহার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমরা নিষিদ্ধ নোট গাইড ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ভ্যাম্যমান আদালত পরিচলনা করেছি। ৪ টি দোকানে আড়াই হাজার টাকা জরিমানা ও নিষিদ্ধ নোট গাইড জব্দ করেছি। এব্যাপারে জেলা প্রশাসক এস,এম মোস্তফা কামালের মুঠো ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে রিসিভ না করায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।