জাতীয়

হারিছ-আনিসকে ক্ষমা নিয়মের বাইরে নয় : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

By Daily Satkhira

February 18, 2021

অনলাইন ডেস্ক : সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই হারিছ আহমেদ ও আনিস আহমেদকে যাবজ্জীবন সাজা থেকে অব্যাহতি দেয়ার ক্ষেত্রে আইনের কোনো লঙ্ঘন হয়নি বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।

বৃহস্পতিবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে রাজধানীতে একটি অনুষ্ঠানে এসে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এই কথা বলেন। এর আগে মগবাজারের ওয়ারলেস এলাকায় নজরুল শিক্ষালয় নামের একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নতুন ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন মন্ত্রী।

৪০১ ধারায় আসামি হারিছ ও আনিসের সাজা মওকুফ করার বিষয়ে সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে কি না? স্পর্শকাতর বিষয়টি এতদিন কেন গোপন রাখা হলো? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘৪০১ ধারার সকল নিয়ম মেনেই দুই আসামিকে সাজা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। আসামিদের পরিবারের পক্ষ থেকে যথাযথ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার এ সিদ্ধান্ত নেয়।’ তবে আসামিদের পক্ষ থেকে কে এই আবেদন করেছেন সে বিষয়ে কিছু বলেননি মন্ত্রী।

বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো ‘লুকোচুরি’ নেই দাবি করে তিনি বলেন, ‘এটা নিছক কমিউনিকেশন গ্যাপ। এই ধারার বিষয়ে ইতিমধ্যেই আইনমন্ত্রী সহজ বিশ্লেষণ দিয়েছেন। সে জায়গা থেকে এ প্রশ্নের জবাব আপনারা আগেই পেয়েছেন।’

হারিছকে যদি ক্ষমাই করা হয়, তাহলে বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামির তালিকায় তার নাম কেন এখনো দৃশ্যমান? এমন প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা ঠিক হয়ে যাবে।’

এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, ‘সামনের নতুন বিল্ডিংটা কিন্তু আমি আপনাদের কথা মতো করে দিয়েছিলাম। পুরান বিল্ডিং ভেঙে নতুন বিল্ডিং করতে চেয়েছেন। সেটাও করে দেব। আমাদের দাবি কিন্তু আছে। সরকারের দাবি হচ্ছে আপনি ভালো রেজাল্ট করবেন এবং এখানে যেন সবাই শিক্ষার সুযোগ পায়।’

মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সরকার কী চায়? আমরা যে দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছি আমাদের প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই ধারাটা অক্ষুণ্ন রাখে। তারা যেন শিক্ষা-দীক্ষায় জ্ঞানে তাদের প্রতিভা বিকশিত করে। তারা যেন দায়িত্ব নিতে পারে এবং উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখে।’

আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমরা ২০৪১ সালের স্বপ্ন দেখছি। আমাদের ডেল্টা প্লান বাস্তবায়নে তারা যেন নেতৃত্ব দিতে পারে। এখানে যারা পড়তে আসবে তারা স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে এটাই আমাদের আশা।’

দেশের সব গৃহহীন ঘর পাবে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতি জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, যিনি এ দেশটাকে স্বপ্ন দেখতেন একটা অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ। যেখানে সবাই স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং গৃহের সন্ধান পায়। তারই কন্যা সেই কাজটি করছেন। তিনি গৃহহীনদের একটি করে ঘরের ব্যবস্থা করে দিচ্ছেন। একটা মাস্টার প্লান তিনি নিয়েছেন।’

মন্ত্রী আরো বলেন, ‘তিনি ঘোষণা করেছিলেন সবাইকে জ্ঞানের আলোকে শিক্ষার আলোকে আলোকিত করবেন। আমরা যদি পেছনে ফিরে তাকাই ২০০১ যখন আমরা ক্ষমতা থেকে সরে গিয়েছিলাম, মানে আমাদের ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বিদায় দিয়েছিল, তখন শিক্ষার হার ছিল ৬০ শতাংশ। যখন আমরা আবার ক্ষমতায় এলাম তখন দেখলাম শিক্ষার হার ৪৫ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষ এগিয়ে যায়, দেশ এগিয়ে যায়, আর আমরা পিছিয়ে আসছিলাম, সেই অভিজ্ঞতা তো আমাদের আছে।’

সম্প্রতি বাংলাদেশ প্রধানমন্ত্রী ও সেনাপ্রধানকে জড়িয়ে আল জাজিরায় ‘অল দ্যা প্রাইম মিনিস্টারস ম্যান’ শিরোনামে ঘণ্টাব্যাপী একটি প্রতিবেদন সম্প্রচার করা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদের দুই ভাই খুনের মামলায় যাবজ্জীবন সাজার পরোয়ানা নিয়ে পলাতক থেকে বিদেশে জীবনযাপন করছেন। তাদের সরাসরি সহযোগিতা করছেন সেনা প্রধান নিজেই।

তবে ওই প্রতিবেদন প্রকাশের সময় যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছিলেন জেনারেল আজিজ আহমেদ। তিনি দেশে ফেরার পর গত সোমবার রাতে আইএসপিআরের এক প্রতিবাদলিপিতে সেনা প্রধানের দুই ভাই আগেই অব্যাহতি পাওয়ার কথা জানানো হয়।

পরের দিন দৈনিক প্রথম আলোয় খবর প্রকাশিত হয়, ২০১৯ সালের ২৮ মার্চ দুই ভাই হারিছ ও আনিসের যাবজ্জীবন সাজা মওকুফ করে প্রজ্ঞাপন দিয়েছে সরকার।

এদিন রাজধানীর তেঁজগাওয়ে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে একই কথা বলেন সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদও। আর্মি এভিয়েশনের গ্রুপের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, ‘একটা ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ছিল (হারিসের বিরুদ্ধে), যেটা থেকে ইতিমধ্যে অব্যাহতিপ্রাপ্ত ছিল। সে অব্যাহতি মার্চ মাসে হয়েছিল। আমি এপ্রিল মাসে গিয়েছিলাম। এখানে আল আজিরা যে স্টেটমেন্ট দিয়েছে, তা সম্পূর্ণ অসৎ উদ্দেশ্যে দিয়েছে। আমি যদি বলি, সেদিন আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে না কোনো সাজা ছিল, না কোনো মামলা ছিল। যে মামলাটা ছিল সেটা থেকে আগেই তাদের অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।’

কিন্তু বাংলাদেশ পুলিশের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, এখনও হারিছ আহমেদের ছবি আছে মোস্ট ওয়ান্টেড আসামিদের তালিকায়।