জাতীয়

কারাবন্দী লেখকের মৃত্যু : স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঘেরাওয়ের ঘোষণা

By Daily Satkhira

February 26, 2021

অনলাইন ডেস্ক : ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় কারাবন্দী অবস্থায় লেখক মুশতাক আহমেদের মৃত্যুর প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। তারা এই মৃত্যুকে ‘রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড’ হিসেবে অভিহিত করছেন। একই সঙ্গে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানিয়েছেন।

শুক্রবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টা ১০ মিনিটের দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র (টিএসসি) এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন বাম ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। মিছিলটি শাহবাগ ও পরীবাগ মোড় ঘুরে শাহবাগে ফিরে আসে। পরে তারা শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বিক্ষোভ সমাবেশ শুরু করেন তারা। অবরোধের ফলে শাহবাগের মূল সড়কের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। তবে শুক্রবার ছুটির দিন হওয়ায় ভোগান্তি অনেকটা কম। দুপুর সাড়ে ১২টায় টিএসসি অভিমুখে বিক্ষোভ মিছিলের মাধ্যমে কর্মসূচি শেষ হয়।শাহবাগের অবস্থান থেকে সন্ধ্যায় টিএসসিতে মশাল মিছিল এবং ১ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এ কর্মসূচি থেকে নেতাকর্মীরা নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনের দাবি জানান।

মুশতাকের মৃত্যুর পর রাতেই টিএসসিতে বিক্ষোভ মিছিল করেন প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। পরে রাত একটার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশ থেকে শুক্রবার শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচি দেওয়া হয়েছিল।

শাহবাগে অবস্থান কর্মসূচিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সভাপতি আল কাদেরী জয় বলেন, সরকার দেশে লুটপাট ও মাফিয়াতন্ত্র তৈরি করেছে। পুরো দেশকে একটি পুলিশি রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন দিয়ে সরকার জনগণের কণ্ঠরোধ করছে। তারই বলি হয়েছেন লেখক মুশতাক। আমরা এ ঘটনার তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই। একই সাথে অবিলম্বে এই নিবর্তনমূলক ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাই। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে। অন্যথায় আমাদের আন্দোলন চলবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের (বাসদ) কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন প্রিন্স অভিযোগ করেন, গত বছরের এপ্রিলে করোনার সময়ে লেখনীর মাধ্যমে ত্রাণ নিয়ে দুর্নীতি-লুটপাটের প্রতিবাদ করেছিলেন লেখক মুশতাক। তার অপরাধ ছিল, তিনি সাধারণ মানুষের পক্ষে, অব্যবস্থাপনা-দুর্নীতির বিরুদ্ধে কলম ধরেছিলেন। কারাগারে আটকে তাকে নির্মম নির্যাতন করা হয়েছে। তিনি ছয়বার জামিনের আবেদন করলেও তা নির্বিকারভাবে নাকচ করা হয়েছে। তাকে কারাগারে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে৷ এর বিচার করতেই হবে।

নাসির উদ্দীন প্রিন্স আরো বলেন, দেশে আজ ত্রাসের রাজত্ব কায়েম হয়েছে। মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্মমভাবে দমন করা হচ্ছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মতো কালা কানুনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের প্রতিবাদ জানাচ্ছেন তারা। তারা অবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন।

বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক জাহিদ সুজন বলেন, লেখক মুশতাক নয় মাস ধরে কারারুদ্ধ ছিলেন। মানুষের অধিকারকে অস্বীকার করার জায়গায় চলে গেছে বর্তমান সরকার।

ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক মাহির শাহরিয়ার রেজা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর ক্রসফায়ার, গুম, খুনের সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ। বেড়েছে বিচার বহির্ভূত হত্যা। মানুষের কথা বলার অধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। আওয়ামী লীগ তাদের রাজত্ব কায়েম করে রাখার জন্য ভিন্নমত দমনের জন্য যা যা করার দরকার সব করছে। এই ধরনের ত্রাসের রাজত্বের অবসান দরকার।

বিক্ষোভে আরো বক্তব্য দেন গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আরিফ মঈনুদ্দীন, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক অমল ত্রিপুরা, দপ্তর সম্পাদক রাজেন্দ্র চাকমা, ছাত্র ইউনিয়নের নেতা রাগীব নাঈম, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা প্রমুখ।

এসময় লেখক মুশতাকের মৃত্যুর দায় সরকারকে নিতে হবে উল্লেখ করে অনতিবিলম্বে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের দাবি জানান তারা। আন্দোলনে অংশ নেন পাহাড়ী ছাত্র পরিষদ, গণতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, উদিচী, ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীরা। আজ বিকাল ৩ টায় শাহবাগ জাদুঘরের সামনে মুশতাক আহমেদের গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে বন্দী লেখক মুশতাক আহমেদ (৫৩) বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কাশিমপুর কারাগারে মারা যান। কারা সূত্রে জানা গেছে, সন্ধ্যায় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন মুশতাক আহমেদ। তাকে প্রথমে কারা হাসপাতালে নেয়া হয়। পরে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে মৃত ঘোষণা করেন। তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।

অসুস্থ মুশতাক আহমেদ গত বছরের মে মাস থেকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে বন্দী ছিলেন।

তিনি লালমাটিয়ায় স্ত্রী ও বৃদ্ধ বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকতেন। তিনি বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে সন্তান। বাণিজ্যিকভাবে দেশে কুমির চাষের অন্যতম প্রবক্তাও ছিলেন তিনি।

গত বছরের মে মাসে রমনা থানায় মুশতাকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে র‌্যাব তিনটি মামলা করে। গত ১১ জানুয়ারি ডিজিটাল‌ নিরাপত্তা আইনের মামলায় কার্টুনিস্ট আহমেদ কবির কিশোর, লেখক মুশতাক আহমেদ ও রাষ্ট্রচিন্তার কর্মী দিদারুল ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ।