নিজস্ব প্রতিনিধি : নিজেদের মধ্যে ভেদাভেদ ও বিভক্তি ভুলে এক কাতারে এসে সাতক্ষীরার উন্নয়নে কাজ করার আহবান জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রনালয়ের সংসদীয় কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক এমপি। তিনি বলেন, দেশজুড়ে উন্নয়ন হচ্ছে, আমরা এই ধারা থেকে বাইরে থাকতে পারি না। এই লক্ষ্যে পৌছাতে এখনই উদ্যোগ নিতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে সাতক্ষীরা সার্কিট হাউজে সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একথা বলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. রুহুল হক। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, সহসভাপতি অধ্যক্ষ আবু আহমেদ, শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক লায়লা পারভিন সেঁজুতি ও স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. সুব্রত ঘোষ। ডা. রুহুল হক এমপি বলেন, সাতক্ষীরায় মাছ, ধান এবং সবজি সহ সকল কৃষি উৎপাদন জেলার প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুন বেশী। এই জেলার এসব সম্পদ দেশের অন্যান্য ঘাটতি এলাকায় চলে যাচ্ছে। এছাড়া হিমায়িত চিংড়ী রপ্তানি করে বাংলাদেশ অর্জন করছে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা। ভোমরা স্থলবন্দরে লক্ষ্যমাত্রার কয়েকগুন বেশী রাজস্ব আদায় হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারকে সাতক্ষীরা এসব অর্জন উপহার দিয়ে যাচ্ছে। সেই তুলনায় সাতক্ষীরার উন্নয়ন হয়নি বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি সাতক্ষীরায় টেকনিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়, সাতক্ষীরায় অর্থনৈতিক জোন, রেলসংযোগ স্থাপন, ভোমরা বন্দরের উন্নয়ন ও সুন্দরবন টেক্সটাইল মিলস ফের চালু করার ওপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, উন্নয়নের এইসব লক্ষ্যে পৌছাতে হলে সবাইকে কাজ করতে হবে। বিশ^ব্যাপী রাজনৈতিক পরিবর্তন হচ্ছে উল্লেখ করে সাবেক এই স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, গত এক বছরে করোনার কারনে বাংলাদেশের অর্থনীতি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য সহ অন্যান্য সকল খাত পর্যুদস্ত হয়ে পড়েছে। অর্থনীতিকে তবুও সচল জায়গায় নিয়ে আসার সর্বাত্মক চেষ্টা করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতসবের পরেও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকারের গত এক যুগের উন্নয়ন কর্মকান্ডের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, তার দল আওয়ামী লীগকেও জনগনের কাছে নিয়ে যেতে হবে। হাজার হাজার দরিদ্র মানুষের জন্য গৃহনির্মান এবং তা তাদের হাতে তুলে দেওয়ার বিরল দৃষ্টান্ত তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশে^র অন্য কোন দেশে দরিদ্র মানুষের জন্য এমন ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী এখনও দরিদ্রদের হাতে গৃহ তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। ডা. রুহুল হক বলেন, সাতক্ষীরার প্রানসায়ের খাল খনন একটি অতি জরুরী বিষয়। এই খাল খননে নানা সমস্যা দেখা দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অচিরেই তা সমাধান করা হয়ে যাবে। ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে অন্য যেকোন সময়ের চেয়ে বর্তমান সময়ে ছাত্র ভর্তির সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার শিক্ষামুখী ছেলেমেয়েরা নিজেদের গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। যারা বিসিএস করেছেন তাদের কাছ থেকে নানা ধরনের সহযোগিতা নিয়ে উন্নয়নকাজ এগিয়ে নিতে হবে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাতক্ষীরায় পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন করা একটি সময়ের চাহিদা। সুন্দরবনকে বিশ^বাসীর কাছে দৃশ্যমান করে তুলতে হলে পর্যটনের বিকল্প নেই। সাতক্ষীরার যে সম্পদ আছে তা কাজে লাগিয়ে এই জেলার ২২ লাখ মানুষের জন্য উন্নয়ন করা অসম্ভব কিছু নয়। বছরের প্রথম দিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌছে যাচ্ছে জানিয়ে তিনি বলেন, শিক্ষায় গতি এসেছে। এখন দরকার এই গতিকে আরও শানিত করে একটি শিক্ষিত সমাজ গড়ে তোলা। তিনি সাতক্ষীরার উন্নয়নে গনমাধ্যম কর্মীদের একযোগে কাজ করার আহবান জানান। এ প্রসঙ্গে ডা. রুহুল হক এমপি বলেন, আগামীতে জেলার ৪ জন সংসদ সদস্য একইভাবে এক মতবিনিময়ের মাধ্যমে জেলার সমস্যা চিহ্নিত করবেন এবং তা সমাধানের পথ বের করবেন। মতবিনিময় সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, সাংবাদিকরা আরও বেশী করে সমস্যা সমূহ নিজ নিজ গনমাধ্যমে তুলে ধরতে পারেন এবং স্বাস্থ্যবিভাগের আইকন ডা. রুহুল হকের নেতৃত্বে সেসব সমস্যা সমাধানের পথে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো। মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সুভাষ চৌধুরী, আরটিভির রামকৃষ্ণ চক্রবর্তী এবং দেশটিভির শরিফুল্লাহ কায়সার সুমন প্রমুখ। এসময় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজে পিসিআর ল্যাব চালু করা, কিডনী ডায়ালাইসিস সেন্টারে ওষুধ সংকট সহ নানা বিষয় উঠে আসে। এসব বিষয়ে সমাধানের পথ বের করার জন্য ডা. রুহুল হকের প্রতি আহবান জানানো হয়। মতবিনিময় সভা শুরুর আগে সদ্য প্রয়াত সাতক্ষীরার বর্ষীয়ান রাজনীতিক দুইবারের সাবেক সংসদ সদস্য, সাবেক জেলা পরিষদ প্রশাসক এবং জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মুনসুর আহমেদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।