জি. এম তোফায়েল আমীন , (অনীক স্মৃতি সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণার্থী ও ইন্টার্ন) : সাতক্ষীরার অশংখ্য জ্ঞানী-গুণী মানুষের গর্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রাণনাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বহুকাল দলে এখান থেকে শিক্ষা নিয়ে সারাদেশের গুরুত্বপূর্ন পদে সহ বিশে^র বিভিন্ন দেশে আলোর মিছিল জ¦ালিয়ে যাচ্ছেন। প্রতিষ্ঠানটির স্থপতি তৎকালিন জমিদার প্রাণ নাথ রায় চৌধুরী। সাতক্ষীরার শিক্ষা বিস্তারে প্রাণ নাথ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের স্থান সুউচ্চে। যে কারণে বিদ্যালয়টিকে সাতক্ষীরার প্রাণ বলা হয়। প্রাণনাথ (বহুমুখি) মাধ্যমিক বিদ্যালয় সাতক্ষীরার শিক্ষা প্রসারে টোল, পাঠশালা থেকে পি.এন উচ্চ বিদ্যালয় নাম নামকরণ হয়ে অদ্যবধী আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন। জানা গেছে, গুরুমহাশয়, বুড়ন খাঁ থেকে প্রথম প্রধান শিক্ষক কেদারনাথ মজমুদার এবং বতর্মান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হাফিজুর রহমানসহ প্রত্যেকে তাদের নিজ নৈতিকতার দায়িত্ববোধ থেকে প্রায় দুইশত বছরের পুরাতন এই স্কুলটিকে পরিচালনা করে আসচ্ছেন।
দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি প্রতিটি ক্ষেত্রে এবং আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে স্কুলের অসংখ্য ছাত্রদের অবদান লক্ষ্যণীয়। তাদের মধ্যে অন্যতম প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক ডা: এম আর খান। তিনি ১৯২৮ সালে সাতক্ষীরা শহরের রসুলপুরে জন্মগ্রহণ করেন। পি. এন. স্কুল থেকে কৃতিত্বের সাথে প্রবেশিকা এবং কলকাতা মেডিকেল কলেজ থেকে এম.বি. বি. এস পাশ করেন। পরে এডিনবার্গ থেকে এম. আর. সি. পি এবং এফ. আর. সি. পি সহ অনেক ডিগ্রি ও ডিপ্লোমা অর্জন করেন। ইংল্যান্ড ও আমেরিকায় বেশ কয়েকটি হাসপাতালে সিনিয়ার হাউজ অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন বিখ্যাত শিশু বিশেষজ্ঞ। সাতক্ষীরায় নির্মিত শিশু হাসপাতাল তারই অবদান।
অবদানের জন্য একুশে পদক : তারিক আনাম ১৯৫৩ সালে সাতক্ষীরা শহরে জন্মগ্রহন করেন। পি. এন. স্কুল, সাতক্ষীরা কলেজ এবং ঢাকা শহরে পড়াশোনা করেন। দিল্লির ন্যাশনাল স্কুল অব ড্রামার ডিপ্লোমা পেয়েছেন। ছাত্রাবাস থেকেই সাংস্কিৃতিক সংগঠন কোরকের সাথে যুক্ত ছিলেন। বাংলদেশের অন্যতম টেলিভিশন , মঞ্চ ও চরচ্চিত্র অভিনেতা। বর্তমানে থিয়েটার এর সাথে যুক্ত আছেন।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ডা: মুজিবর রহমানেরও জন্ম সাতক্ষীরার বাঁশদহা এলাকায়। প্রথমিক শিক্ষা শেষে ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে সাতক্ষীরা পি. এন, হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দে কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে আএসসি ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে ঢাকা মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাশ করে ১৯৫৯ খ্রিস্টাব্দে সাতক্ষীরা ফিরে এসে সাতক্ষীরা কলেজের জীব বিজ্ঞান বিভাগে কিছুদিন অধ্যাপনা করেন তিনি মাত্র ১০ টাকা ফি তে রোগী দেখতেন। সে সময় সাতক্ষীরায় মাত্র ৪/৫ জন এমবিবিএস ডাক্তার সাতক্ষীরাতে রোগী দেখতেন। তিনি তাদের মধ্যে একজন।
বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুল মজিদ (২০০৪-২০১৮) জানান, সাতক্ষীরা অঞ্চলে সর্বপ্রথম যে মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠে তা প্রাণনাথ (বহুমুখী) উচ্চ বিদ্যালয়। প্রেসিডেন্সি বিভাগের অর্ন্তগত খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহাকুমা উল্লেখযোগ্য ইংরেজি বিদ্যালয়গুলির মধ্যে অন্যতম সাতক্ষীরা পি. এন. হাইস্কুল। এ প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা জমিদারপুত্র তাঁর কুলশ্রেষ্ঠ সাতক্ষীরা শহরের গোড়াপত্তনকারী জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরীর নামে প্রাণনাথ উচ্চ বিদ্যাালয় রাখেন। ১৮৩০ খ্রিস্টাব্দে প্রাণসায়ের দীঘির দক্ষিণ কোণে জমিদার বাড়ির পূজো মন্ডপে প্রথমে স্কুলটির কার্যক্রম শুরু হয়। সে সময়ে স্কুলটি দোলা বাড়ি স্কুল অথবা দোল ঘর নামে পরিচিত ছিল। এটি মূলত ১৮৪৬ সালে এম. ই স্কুল অর্থাৎ কলেজ হিসাবে স্থাপিত হয়। ১৮৬১ খ্রিস্টব্দের পূর্বে সাতক্ষীরায় কোন প্রাথমিক স্কুল ছিল না। প্রাথমিক শিক্ষার প্রথম পর্যায়ে কিছু টোল ছিল। বিশেষ করে কালিগঞ্জের চম্পাফুল, শ্যামনগরের নকিপুর, দেবহাটার টাউন শ্রীপুর টোল উল্লেখযোগ্য। ( আঠারো শতকের শেষ দিকে সাতক্ষীরা মহাকুমাতে প্রাথমিক বিদ্যালয় ছিল মাত্র ১০ টি)। ১৮৬২ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীনে প্রাণনাথ উচ্চ বিদ্যালয় হিসাবে চিরস্থায়ী স্বীকৃতি লাভ করে। ১৮৬২ সালে জাতীয় করণ হয়। জাতীয় করণের আগে প্রথম থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম স্কুল হিসাবে পাঠদান করা হতো। ১৮৬২ সালের পর দক্ষিণ বাংলার প্রথম বিজ্ঞান বিভাগ এখানেই চালু হয় এবং বাংলা মিডিয়ামে পাঠদান শুরু হয়। প্রথম পরিক্ষা কেন্দ্র এটা । ১৯৯৫ সালে স্কুলটি কারিগরী বোডের্র অধিনে ভোকেশনাল ৪ টা টেড্র চালুকরে। জমিদার প্্রাণনাথ রায় চৌধুরি তার নিজ উদ্দ্যোগে স্কুল প্রতিষ্ঠার জন্য পলাশপোল মৌজায় প্রায় ৭একর জামি দান করেন।
জমিদার প্রাণনাথ চৌধুরী ও তার ভাতিজা গিরিজা নাথ রায় চৌধুরির উদ্দোগে স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৩০খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯২৭ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত জমিদার প্রাণনাথ রায় চৌধুরি নিজের খরচে স্কুলটি পরিচালনা করেন। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে সাতক্ষীরার এস.ডি.ও স্কুলের সভাপতি নির্বাচিত হন।
বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শেখ শফি অহমেদসহ ১১ জন সদস্য। বর্তমান স্কুলটিতে প্রায় ৫০০ জন ছাত্র ছাত্রী অধ্যায়নরত। কলেজ পর্যায়ে প্রায় ২০০ জন ছাত্র ছাত্রী স্কুল পর্যায়ে ৩০০ জন ছাত্র কলেজ পর্যায়ে ৬ জন শিক্ষক, ৩য় শ্রেনির ২জন এবং কর্মচারী ১ জন নিয়ে কলেজটি পরিচালিত হচ্ছে। স্কুল পর্যায় ১২ জন শিক্ষক, ৩য় শ্রেণির ১জন এবং ৪র্থ শ্রেণির ১জন নিয়ে স্কুলটি পরিচালিত হচ্ছে।