অনলাইন ডেস্ক : মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ক্লিনিকে করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন। তবে সাংবাদিকদের অনুরোধ রাখতে গিয়ে রীতিমতো বিপাকে পড়েছেন মন্ত্রী। শনিবার আ ক ম মোজাম্মেল হকের টিকা নেওয়ার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। যেখানে দেখা যাচ্ছে, তিনি টিকা নেওয়ার ‘অভিনয়’ করছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চলছে ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা। মন্ত্রী দাবি করেছেন, তিনি টিকা নিয়েছেন। ভিডিওটিতে দেওয়া বার্তা সত্য নয়, ভুয়া।
বিষয়টি নজরে এলে শনিবার (১৩ মার্চ) মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে মন্ত্রীর একটি ব্যাখ্যা সম্বলিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিভিন্ন গণমাধ্যমে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য কর্মকর্তা সুফি আব্দুল্লাহিল মারুফ স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয় ক্লিনিক ভবনে করোনা টিকা গ্রহণ করেন। সাংবাদিকরা সে সময় ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেন। তবে টিকা দেওয়ার কক্ষে স্থান সংকুলান না হওয়ায় উপস্থিত সাংবাদিকরা কেউ কেউ ছবি ও ভিডিও ফুটেজ নিতে পারেননি। পরে ক্যামেরাপারসনরা অনুরোধ করলে মন্ত্রী টিকা নেওয়ার পর তাদের ছবি ও ভিডিও নেওয়ার সুযোগ দেন।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর টিকা নেওয়া বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারিত একটি ভিডিও এডিট করে মন্ত্রী টিকা নেননি বলে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে। উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ভিডিও এডিট করে মন্ত্রী টিকা নেননি বলে যে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে তা স্বাধীনতাবিরোধী কুচক্রী মহলের মুক্তিযুদ্ধমন্ত্রী তথা সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচারের অংশ। ভিডিও সম্পাদন করে এ ধরনের মিথ্যা অপপ্রচার যারা চালাচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলেও মন্ত্রী সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সচিবালয়ের ক্লিনিকে এসে করোনার টিকা গ্রহণ করেন। ক্লিনিকের সিভিল সার্জনের রুমে বসে টিকা নেন তিনি। স্বাস্থ্য সচিব আবদুল মান্নান ও সচিবালয় ক্লিনিকের সিভিল সার্জন এসময় মন্ত্রীর পাশে দাঁড়িয়ে ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী টিকা নিয়ে বেরিয়ে এসে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রতিক্রিয়াও দেন। কিন্তু কয়েকটি চ্যানেলের সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যান মন্ত্রীর টিকা গ্রহণের ছবি না পাওয়ায় তারা মন্ত্রীকে আবারও টিকা গ্রহণের ভঙ্গিতে পোজ দেওয়ার অনুরোধ করেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে মন্ত্রী আবারও টিকা গ্রহণের অভিনয় করেন এবং রীতিমতো বিপাকে পড়েন তিনি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোজ দেওয়ার ছবিটি পোস্ট করে বলা হচ্ছে- মন্ত্রী করোনার টিকা গ্রহণ করেননি। অভিনয় করেছেন মাত্র।
সেদিন সচিবালয়ে টিকা গ্রহণের পর অনুভূতি জানতে চাইলে হাসতে হাসতে মন্ত্রী গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘খুবই স্বাভাবিক, মনেই হয়নি যে টিকা নিলাম। বুঝতেই পারিনি কখন টিকা পুশ করেছে। পরে সেবিকা বলল যে, টিকা পুশ করা হয়ে গেছে। কোনোরকম খারাপ কিছু মনে হওয়া বা ব্যথা পাওয়া এমন কিছুই নয়। অত্যন্ত সুন্দরভাবে টিকা দিয়েছে। আমার ভ্যাকসিন নেওয়ার তারিখ আগে ছিল, জ্বরের কারণে আমি প্রথমদিন টিকা নিতে পারিনি। পরে আবার রেজিস্ট্রেশন ট্রান্সফার করে আজ টিকা নিয়ে নিলাম।
সচিবালায় ক্লিনিকের দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াস চৌধুরী মন্ত্রীর টিকা গ্রহণের কথা জানান। গণমাধ্যমকে তিনি বলেন, মন্ত্রী টিকা নিয়েছেন৷ তার দ্বিতীয় ডোজ নেয়ারও সময় চলে এসেছে। তবে যে ভিডিওর কথা বলা হচ্ছে এটা টিকা দেয়ার পরে নেয়া। টিকা নেয়ার পর কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের অনুরোধে মন্ত্রী পরে আবার টিকা নেয়ার পোজ দেন। এটা অনেকের ক্ষেত্রেই হয়েছে।
ক্লিনিকে সিনিয়র স্টাফ নার্সের দায়িত্বে থাকার স্বপ্না রাণীর কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার ঠিক মনে নাই, তবে আমি তিনজন মন্ত্রীকে টিকা দিয়েছি। সম্ভবত তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীও ছিলেন।
তিনি বলেন, বুথে জামা খুলে অনেকেই টিকা নেন। তাই বাইরে এসে জামা পরে আবার পোজ দেন ছবি তোলার জন্য। এরকম অনেকেই করেছেন। তখন আমরা ছবি নেয়ার সময় টিকা দেয়ার মত ডেমো করি।
যোগাযোগ করলে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ জানান, মন্ত্রী ভ্যাকসিন নিয়েছেন। তিনি বলেন, সেদিন আমরা দু’জনেই ভ্যাকসিন নিয়েছি। মন্ত্রী আমার আগেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। উনি নেওয়ার পর আমি নিয়েছি। পরে ডেমো বা অন্য কিছু হয়েছে কি না, সে বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না।
শনিবার ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে দেখা যায়, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব তপন কান্তি ঘোষ ও স্বাস্থ্য সচিব মো. আব্দুল মান্নানের সঙ্গে সংসদ সচিবালয় ক্লিনিকের কোভিড ভ্যাকসিন প্রয়োগ কেন্দ্রের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন আ ক ম মোজাম্মেল হক। কিছুক্ষণ পর তারা একটি রুমে প্রবেশ করেন। এসময় মন্ত্রী চেয়ারে বসলে একজন নার্স একটি সিরিঞ্জ নিয়ে তার বাম হাতে ভ্যাকসিন প্রয়োগের অভিনয় করেন। এসময় হাসিমুখে চেয়ারে বসেছিলেন মন্ত্রী। পরে বের হয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গ কথা বলেন তিনি।
এদিকে মন্ত্রীর টিকা নেওয়ার আসল ও ভাইরাল হওয়া দুটি ছবি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, মন্ত্রী টিকা গ্রহণের সময় টিকাদানকারী নার্স মন্ত্রীর বাম হাতে টিকা দিচ্ছেন। এ সময় টিকা দানকারী নার্সের সহযোগী অপর একজন নার্স মন্ত্রীর ডান দিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। পরে অভিনয় করা ভিডিওতে ওই সহকারী নার্সকে মন্ত্রীর বাম পাশে টিকাদানারী নার্সের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।
মন্ত্রী বলছেন, এই অভিনয়টুকু করলেও এর আগেই ভ্যাকসিন নিয়েছেন তিনি। গণমাধ্যমের অনুরোধ ফেলতে না পেরেই তিনি এই অভিনয় করেছেন।
আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৭ তারিখে (১৭ ফেব্রুয়ারি) আমি ভ্যাকসিন নিয়েছি। ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সচিবের সঙ্গে আমরা যখন বাইরের দিকে যাচ্ছি, ওই সময় একটি চ্যানেলের সাংবাদিক এসে বলেন, তারা ফুটেজ পাননি। ওই সাংবাদিক অনুরোধ করেন, আমি যেন আবার একটু ভ্যাকসিন নেওয়ার ‘ডেমো’ করি। মূলত তার অনুরোধেই আবার একটু ভ্যাকসিন নেওয়ার ডেমো করতে হয়েছে।
আ ক ম মোজাম্মেল হক আরো বলেন, আমার ভ্যাকসিন নেওয়ার ফুটেজ বিটিভি’র কাছে রয়েছে। কেউ যদি চ্যালেঞ্জ করতে চায় যে আমি ভ্যাকসিন নিইনি, আমি ওই ফুটেজ দেখাতে পারবো।
ভিডিওটি দেখেছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভিডিওটি দেখে আমি খুব কষ্ট পেয়েছি। কারণ, এই ভিডিওটির বার্তা ভুয়া। টিকা নেওয়ার অরজিনাল ভিডিওটি ভাইরাল হলো না, অথচ একটি ভিডিওকে ভাইরাল করে ভুল ও মিথ্যা বার্তা দেওয়া হলো, যা উচিত হয়নি। এটা নিন্দনীয়।