ইমরাতুস সাদিয়া ,(অনীক স্মৃতি সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণার্থী ও ইন্টার্ন): আলিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় সাতক্ষীরার আলিপুর ইউনিয়নের একটি স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ১৯৬৭ সালে রূপচাঁদ সরদার এলাকায় শিক্ষা-বিস্তারের কথা বিবেচনা করে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন বলেন বিভিন্ন মাধ্যমে জানা গেছে। কথিত আছে, প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থী নিয়ে পথ চলা শুরু হয়েছিল এই স্কুলের। প্রতিষ্ঠাকালিন সময়ে অবকাঠামো বলতে ছিল মাটির দেওয়ালে গোলপাতা দিয়ে ছাউনি ৬টি কক্ষ। ২ একর ৬০ শতক জমির উপর প্রতিষ্ঠিত স্কুলের বাকি অংশ ছিল প্রাঙ্গণ বা খেলার মাঠ। প্রধান শিক্ষক আব্দুল মান্নানসহ মোট শিক্ষক ছিলেন ৯জন। হাবিবুর রহমান, আব্দুল মাজেদ, আব্দুল মমিন, গোলাম মোস্তফা, মোহাম্মদ নূরুল ইসলাম, মোহাম্মদ নূর আহম্মেদ, বাবু নরেন্দ্র নাথ, মোহাম্মদ রবিউল ইসলাম ছিলেন প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক। এছাড়াও রজব আলী নামের একজন অফিস সহকারী ও ছিলেন। তৎকালিন সময়ে ষষ্ঠ, সপ্তম, অষ্টম, নবম ও দশম শ্রেণিতে পাঠদান করা হত। ২০২১ সালে স্কুলটির ৫৪ বছর পূর্ণ হয়। এই ৫৪ বছরে স্কুলের অনেক কিছুই পরিবর্তিত হয়েছে। ৬ কক্ষ বিশিষ্ট সেই স্কুলটিতে বর্তমানে ২৯টি কক্ষ রয়েছে। ছাত্রদের জন্য বোডিং সুবিধা। রয়েছে নামাজের ঘর, কম্পিউটার ল্যাব, কমনরুম ইত্যাদি। ১৯৮৫ সালের পহেলা সেপ্টেম্বর স্কুলটি এম পি ও এর আওতাভুক্ত হয়। তখন থেকে স্কুলের নতুন এক যাত্রা শুরু হয়। তখন থেকে স্কুলের নতুন এক যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে স্কুলের শিক্ষার্থী সংখ্যা ১২০০ অধিক। প্রধান শিক্ষক হারান চন্দ্র সরকার এবং ৬ জন শিক্ষিকাসহ মোট ২১জন শিক্ষক রয়েছেন স্কুলটিতে। রয়েছেন ৪জন অফিস সহকারী ও ১জন আয়া। যেহেতু শিক্ষার বিকাশে সুস্থ শরীর ও মনের ভূমিকা অপরিসীম তাইস্কুলটিতে শিক্ষার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক চর্চার উপরেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। পড়াশোনার পাশাপাশি স্কুলের বাইরেও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠানে যোগ দেয় ছাত্রছাত্রীরা। তাদের এরূপ মানসিকতা তৈরির ক্ষেত্রে স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকাদের যথেস্ট অবদান রয়েছে। স্কুলের বহু ছাত্র-ছাত্রীই বর্তমানে সমাজের নানা পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছে। এতে স্কুলের গৌরব বেড়েছে। বিদ্যালয়ে পার করা সময়টা শিক্ষার্থীর জীবনের সর্বাধিক গঠনমূলক সময়। আলিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের সাফল্যের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য একটি উত্তেজক পাঠ্যক্রম এবং একটি সহায়ক পরিবেশ সরবরাহ করে। শিক্ষাগত বিকাশ, ব্যক্তিগত বৃদ্ধি এবং নৈতিক সমৃদ্ধির দিকে ও মনোনিবেশ করে। যার ফলে শিক্ষার্থীরা হয়ে ওঠে সতন্ত্র এবং আত্মবিশ^াসী, অনুসন্ধানী এবং উৎসাহী, দায়বদ্ধ এবং সহানুভূতিশীল। এ বিদ্যালয় থেকে জ্ঞান অর্জন করা শিক্ষার্থীরা এখন সারা দেশসহ বিদেশেও আলো ছড়াচ্ছেন। সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। তাদের মধ্যে রয়েছেন ডা: আজমল হোসেন। যিনি খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আছেন। রয়েছেন ডা: হুমায়ুন কবির। এম এ ওহাব (মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ), মো: শামছুল আলম জেলা ও দায়রা জজ (যশোর) এবং পুলিশ সুপার হিসেবে মুহম্মদ রকিব উদ্দীন আহমেদ আলো ছড়াচ্ছেন। মো: শাহজাহান আলী(বাণিজ্য বিভাগ থেকে যশোর বোর্ডে প্রথম) বলেন, ২০২১৪ সালে আমি এই স্কুল থেকে এস এস সি পাশ করি। বর্তমানে ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ে আইন বিভাগে অধ্যয়নরত। আমি আলিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র হিসাবে সব সময় গর্ববোধ করি। এ স্কুল আমাদের ভিত্তিটাকে মজবুতভাবে গড়ে দিয়েছেন যার উপর আমরা আমাদের স্বপ্নগুলোকে ইচ্ছা রূপ দিতে পারি। তিনি বলেন, জীবনে মেধাবী হওয়ার থেকে জ্ঞানী ও আদর্শবান মানুষ হওয়া জরুরি। যে শিক্ষাটা আমরা এই স্কুল থেকে পেয়েছি। এই প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি শিক্ষার্থী আদর্শ মানুষ হয়ে উঠুক। আমাদের স্কুল দেশের সেরা স্কুল হয়ে উঠুক। এই স্কুলের স্মৃতিগুলো যে কত আনন্দের, কত খুশির তা বলে বোঝানো যাবে না। আলিপুর ইউনিয়ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় আমার গর্বের জায়গা প্রাণের জায়গা। বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ বলেন, প্রতিটি শিক্ষার্থীকে মানুষ হিসাবে গড়ে তোলাই আমাদের লক্ষ্য। আমরা শিক্ষাকে ব্যয় নয় বিনিয়োগ হিসাবে বিশ^াস করি। দেশ ও জাতির উন্নয়নে শিক্ষার কোন বিকল্প নেই। আমাদের শিক্ষার মানের উপর নির্ভর করে সমাজের উন্নয়ন। শুধুমাত্র পরিক্ষায় পাশ করা শিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্য হলে তা, কখনো কল্যাণ বয়ে আনবে না। কল্যাণকর কিছু করার জন্য জ্ঞান চর্চার কোন বিকল্প নেই। বিদ্যালয় হচ্ছে সেই সম্মান যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান চর্চার মাধ্যমে তাদের সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ ঘটায়। বিদ্যালয় মূলত একটি প্রতিষ্ঠান যেখানে শিক্ষকের তত্ত্বাবধানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান লাভ করে। তিনি বলেন, বিদ্যালয় যে সব সময় দালান কোঠায় আবদ্ধ হবে এমন নয় বরং একজন শিক্ষক কিছু শিক্ষার্থী এবং শিক্ষা সহায়ক পরিবেশই বিদ্যালয় হওয়ার জন্য যথেষ্ট। আমাদের সন্তানেরা যেন শিক্ষার সাথে নৈতিকতার সম্পর্ক উপলদ্ধি করতে পারে, দেশের প্রতি দ্বায়িত্ববোধ নিয়ে বেড়ে উঠে সেই লক্ষ্যেই বিদ্যালয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কল্যাণময় মানুষ হয়ে উঠুক সেই কামনা করি।