দেশের খবর : দেশে মহামারি করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাবের ৩৮৭তম দিনে গত ২৪ ঘণ্টায় রেকর্ড সংক্রমণ হয়েছে। এই সময়ে নতুন ৫ হাজার ১৮১ জন আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৪৫ জনের। এ নিয়ে মোট মৃত্যুর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৯৪৯ জনে। এখন পর্যন্ত মোট করোনা রোগীর সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৮৯৫ জনে।
এর আগে গত বছরের ২ জুলাই দেশে আক্রান্ত শনাক্তের সংখ্যা রেকর্ড ৪ হাজার ১৯ জনের সর্বোচ্চ অঙ্কে পৌঁছে যায়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (প্রশাসন) ডা. নাসিমা সুলতানার সই করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার (১৯ মার্চ) সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় (অ্যান্টিজেন টেস্টসহ) ২৮ হাজার ১৯৫টি নমুনা পরীক্ষায় ৫ হাজার ১৮১ জন এই ভাইরাসে আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছেন। এই সময়ে পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৩৮ শতাংশ। মৃত্যুহার ছিল ১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। রোববারও সংক্রমণের হার ছিল ১৭ দশমিক ৬৫।
তবে শুরু থেকে মোট পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্তের হার ১৩ দশমিক ০১ শতাংশ। গত ২৪ ঘণ্টায় সুস্থ হয়েছে ২ হাজার ৭৭ জন। এ নিয়ে দেশে মোট ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৮ জন সেরে উঠলেন প্রাণঘাতি এই ভাইরাস থেকে। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৮৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত ৩৫ লাখ ৫৪৮টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় পরীক্ষা হয়েছে ১১ লাখ ১৬ হাজার ৪৭৭টি নমুনা। অর্থাৎ, মোট পরীক্ষা করা হয়েছে ৪৬ লাখ ১৭ হাজার ২৫টি নমুনা। এর মধ্যে শনাক্ত হয়েছেন ৬ লাখ ৮৯৫ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় যে ৪৫ জন মৃত্যুবরণ করেছেন তাদের মধ্যে ৩০ জন পুরুষ ও ১৫ জন নারী। তাদের ৪৪ জনের হাসপাতালে ও ১ জনের বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে। তারাসহ মৃতের মোট সংখ্যা আট হাজার ৯৪৯। মোট শনাক্ত বিবেচনায় মৃত্যুহার এক দশমিক ৪৯ শতাংশ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, এখন পর্যন্ত ৬ হাজার ৭৪৬ জন পুরুষ মারা গেছেন যা মোট মৃত্যুর ৭৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ এবং ২ হাজার ২০৩ জন নারী মৃত্যুবরণ করেছেন যা মোট মৃত্যুর ২৪ দশমিক ৬২ শতাংশ।
বয়সভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২৪ ঘণ্টায় করোনায় মৃত ৪৫ জনের মধ্যে বিশোর্ধ্ব ১ জন, ত্রিশোর্ধ্ব ৫ জন, চল্লিশোর্ধ্ব ৪ জন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ৮ জন এবং ষাটোর্ধ্ব ২৭ জন রয়েছেন। আর বিভাগওয়ারী হিসাবে ঢাকা বিভাগে ২৮ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন, রাজশাহী বিভাগে ৫ জন, খুলনা বিভাগে ৩ জন, বরিশাল বিভাগে ১ জন, রংপুর বিভাগে ১ জন ও ময়মনসিংহ বিভাগে ১ জন।
বাংলাদেশে গত ৮ মার্চ প্রথম করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হলেও প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ১৮ মার্চ। দিন দিন করোনা রোগী শনাক্ত ও মৃতের সংখ্যা বাড়ায় নড়েচড়ে বসে সরকার। ভাইরাসটি যেন ছড়িয়ে পড়তে না পারে সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ সব সরকারি-বেসরকারি অফিস বন্ধ ঘোষণা করা হয়। করোনার বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যেই ৩১ মে থেকে দেশের সরকারি-বেসরকারি অফিস খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বেশ কয়েক ধাপ বাড়ানোর পর আগামী ২২ মে স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার কথা রয়েছে।
বিশ্ব পরিস্থিতি
ব্রাজিলে গত ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে রেকর্ড এক হাজার ৬০৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। এবং সবচেয়ে বেশি করোনা সংক্রমণ হয়েছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারতে ৬৮ হাজার ২০৬ জন। সোমবার সকালে করোনাভাইরাস পরিসংখ্যান ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার এমনটি জানিয়েছে।
তথ্য অনুযায়ী, ২১ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার ব্রাজিলে এ পর্যন্ত ৩ লাখ ১২ হাজার ২৯৯ জন মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। করোনায় সর্বোচ্চ মৃত্যুর দিক দিয়ে বিশ্ব তালিকায় শীর্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এরপরেই ব্রাজিলের অবস্থান। দেশটিতে একদিনে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৩০৬ জন।
গত ২৪ ঘণ্টায় পরিসংখ্যান বলছে, ভারতে করোনায় ২৯৫ জনের মৃত্যু হলেও রেকর্ড সংখ্যাক সংক্রমণ ঘটেছে এই দেশটিতে। যা বিগত সময়ের রের্কড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে বিশ্বব্যপী সবচেয়ে বেশি মৃত্যু এবং করোনা রোগী শীর্ষে থাকা দেশ যুক্তরাষ্ট্রের মৃত্যু হার কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দেশটিতে একদিনে মৃত্যু ৫১০ জন, আক্রান্ত হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬ জন। দৈনিক হিসাব মতে, ৪র্থ অবস্থানে মেক্সিকো, একদিনে মৃত্যু ৫৬৭, আক্রান্ত ৪ হাজার ৯২১ জন,৫ম অবস্থানে রয়েছে রাশিয়া। দেশটিতে একদিনে মৃত্যু ৩৩৬জন, আক্রান্ত ৯ হাজার ৪৪জন, তবে ফ্রান্সে মৃত্যু ১৩১ জন হলেও আক্রান্ত ৩৭ হাজারের বেশি।
২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহানে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। চীনে করোনায় প্রথম রোগীর মৃত্যু হয় গত বছরের বছরের ৯ জানুয়ারি। ওই বছরের ১৩ জানুয়ারি চীনের বাইরে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় থাইল্যান্ডে। পরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে করোনা ছড়িয়ে পড়ে।
করোনার প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ৩০ জানুয়ারি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। গত বছরের ২ ফেব্রুয়ারি চীনের বাইরে করোনায় প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যুর ঘটনা ঘটে ফিলিপিন্সে। এরপর ২০২০ সালের ১১ মার্চ করোনাকে বৈশ্বিক মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
বর্তমানে সারাবিশ্বে ১২ কোটি ৭৭ লাখেরও বেশি মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত আর প্রাণ হারিয়েছে ২৭ লাখ ৯৬ হাজারের বেশি মানুষ।