জাতীয়

মামুনুলের রিসোর্ট-কাণ্ড লাইভ করা সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা-মারধর

By Daily Satkhira

April 06, 2021

অনলাইন ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হকের রিসোর্ট-কাণ্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে যাওয়ায় স্থানীয় এক সাংবাদিকের বাড়িতে হামলা চালিয়েছেন সংগঠনটির কর্মীরা। এ সময় ওই সাংবাদিককে পিটিয়ে আহত করার পাশাপাশি তার ঘরের আসবাব ভাঙচুর করা হয়েছে। সোনারগাঁ উপজেলার সনমান্দি ইউনিয়নের নাজিরপুর ভান্টি চর এলাকায় সোমবার (৫ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৯টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

আহত সাংবাদিক হাবিবুর রহমান ‘চ্যানেল এস’ নামের একটি বেসরকারি সংবাদমাধ্যমের সোনারগাঁ প্রতিনিধি। তাকে আহত অবস্থায় সোনারগাঁ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

হাবিবের ছোট ভাই মোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘ঘরে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিল আমার বড় ভাই হাবিব। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হেফাজতের নেতা-কর্মীরা লাঠিসোঁটা নিয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা করে। তারা ঘরের বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। টেনেহিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে গেছে হাবিবকে।

তিনি আরো বলেন, মামুনুল হকের বাহিনী কয়েক দফায় লাঠি দিয়ে পিটিয়েছে আমার ভাইকে। মারধর করে তার দাঁত ভেঙে ফেলেছে। তাদের কাছ থেকে ভাইকে বাঁচাতে না পেরে ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশকে খবর দিই। কিছুক্ষণ পর পুলিশ এসে তাদের কাছ থেকে ভাইকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়।

এ ঘটনায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশিত একটি ভিডিওতে দেখা যায়, হেফাজতের নেতা-কর্মীরা হাবিবকে মারধর করে ঘরের বাইরে নিয়ে আসেন। এরপর ফেসবুকে ক্ষমা চাইতে বলেন মামুনুলের কাছে। তাদের মধ্যে একজনকে বলতে শোনা যায়, হুজুরের (মামুনুল হক) কাছে মাফ চাইতে হবে, হুজুর যাতে আপনাকে ক্ষমা করে দেয় এ জন্য।

আরেকজন বলছেন, আপনি বলবেন, “হুজুরের (মামুনুল হক) কাছে আমি ক্ষমা চাই। সাংবাদিক হিসেবে সেখানে গিয়ে ভুল করেছি। আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিবেন।”

এ ঘটনায় মঙ্গলবার দুপুরে সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বাদী হয়ে ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৭০/৮০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে সোনারগাঁ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।

আহত সাংবাদিক হাবিবুর রহমান বলেন, মামুনুল অনুসারীরা শনিবার থেকেই আমাকে নানাভাবে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছিল। তাদের ভয়ে আমি শনিবার থেকেই ঘরবন্দি। গতকাল শতাধিক হেফাজতকর্মী বাড়িতে হামলা চালালে আমি সোনারগাঁ থানা পুলিশের সহযোগিতা চাই। পুলিশ পৌঁছানোর পূর্বেই তারা আমাকে মারধর করে। আমার চিৎকারে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। বর্তমানে আমি ও আমার পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।

সোনারগাঁ থানার পুলিশ পরিদর্শক খন্দকার তবিদুর রহমান জানান, এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ নেওয়া হয়েছে। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

গত শনিবার নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ের একটি রিসোর্টে এক নারীকে নিয়ে গিয়ে অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। কয়েক ঘণ্টার হাঙ্গামার পর হামলা চালিয়ে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে আসে হেফাজতে ইসলামের কর্মীরা। মামুনুল দাবি করতে থাকেন ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তারা বিয়ে করেছেন। তবে মামুনুল তার কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী ও তার বাবার যে নাম বলেছেন, বাড়ি যেখানে বলেছেন, তার সঙ্গে সেই মেয়ের বক্তব্যের মিল নেই।

মামুনুল দাবি করেন, তার স্ত্রীর নাম আমেনা তাইয়্যেবা। শ্বশুরের নাম জাহিদুল ইসলাম। বাড়ি খুলনায়। তবে মেয়ে জানান, তার নাম জান্নাত আরা ঝর্ণা। বাবা ওলিয়র রহমান। বাড়ি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গার কামারগাঁও গ্রামে।

এর মধ্যে মামুনুলের আসল স্ত্রীর সঙ্গে তার, স্ত্রীর সঙ্গে মামুনুলের বোনের আর ঝর্ণার সঙ্গে হেফাজত নেতার মোবাইল কথোপকথন হিসেবে তিনটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হয়। এগুলো বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রকাশ হয়।