অনলাইন ডেস্ক : হেফাজতে ইসলামের নেতা মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না উল্লেখ করে তার বড় ছেলে আবদুর রহমান একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন।
শনিবার (১০ এপ্রিল) রাতে রাজধানীর পল্টন থানায় এ জিডি করা হয় বলে জানিয়েছেন ওসি আবদুল লতিফ। একই সঙ্গে আবদুর রহমান জিডিতে নিজের নিরাপত্তা চেয়েছেন। জিডি নম্বর-৫৪৫।
সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে জনতার হাতে মামুনুলের সঙ্গে অবরুদ্ধ হন ঝর্ণাও। তখন ঝর্ণাকে নিজের দ্বিতীয় স্ত্রী বলে দাবি করেন মামুনুল। যদিও পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে মামুনুলের ওই দাবি প্রশ্নের মুখে পড়েছে।
ওই ঘটনার পর ঝর্ণার সঙ্গে তার প্রথম সংসারের ছেলে আবদুর রহমানের ফোনালাপও ফাঁস হয়, যেখানে রহমানকে মামুনুলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শোনা যায়। পরে ফেসবুক লাইভে এসে ঝর্ণার প্রথম সংসারে ভাঙনের পেছনে মামুনুলকে অভিযুক্ত করেন রহমান।
মামুনুল হকের বিচার চেয়ে লাইভে আবদুর রহমান বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের মানুষের কাছে আশা করব- এর যেন সঠিক বিচার হয়। আপনারা কারও অন্ধ ভক্ত হয়েন না।… এই লোকটা আলেম নামধারী একটা মুখোশধারী, একটা জানোয়ার। এর মধ্যে কোনো মনুষত্ব নেই। সব সময় সুযোগের অপেক্ষায় থাকে, কাকে কীভাবে দুর্বল করা যায়।’
জিডিতে আবদুর রহমান উল্লেখ করেছেন, ‘আমি বেশ কিছুদিন ধরে আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে ধানমন্ডির নর্থ সার্কুলার রোডের বাসায় যাই। বাড়ির মালিক আমাকে জানান, গত ৯ এপ্রিল তিনি (ঝর্ণা) বাসা থেকে বের হয়ে গেছেন। আর আসেননি। আমি আমার মায়ের কক্ষে প্রবেশ করি এবং দেখতে পাই আমার মায়ের ব্যক্তিগত তিনটি ডায়েরি। একটি সাদা রঙের ক্লিপ দিয়ে স্পাইরাল করা নীল ও ধূসর রঙের। অন্য একটি ডায়েরি আরবি লেখা এবং নিচের দিকে জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম পলাশ নরসিংদী লেখা। সেটিতে কভারপেইজ ছাড়া ১ থেকে ৮৭ পৃষ্ঠা রয়েছে। এছাড়া অন্য রঙের আরেকটি ডায়েরি আমার হস্তগত হয়।’
তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, ‘শনিবার (১০ এপ্রিল) আনুমানিক সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাড়ির পথে রওনা দিলে পল্টন মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত কয়েকজন আমাকে অনুসরণ করা শুরু করে। এতে আমার নিকট প্রতীয়মান হয় যে, আমার জীবন এবং আমার মা জান্নাত আরা ঝর্ণার জীবন ঝুঁকির মুখে। আমি ডায়েরিগুলো সংরক্ষণের বিষয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছি। এমতাবস্থায় আমার ও আমার মায়ের জীবনের নিরাপত্তা বিধানের জন্য সাধারণ ডায়েরি করলাম।’
প্রসঙ্গত, ৩ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়্যাল রিসোর্টে এক নারীর (জান্নাত আরা ঝর্ণা) সঙ্গে অবস্থান করার সময় অবরুদ্ধ হন মামুনুল হক। ওই দিন তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে জানান, সঙ্গে থাকা ওই নারী তার দ্বিতীয় স্ত্রী। দুই বছর আগে তিনি বিয়ে করেছেন। যদিও কয়েকটি ফাঁস হওয়া ফোনালাপের সূত্রে জানা যায়, দ্বিতীয় বিয়ে করার বিষয়টি মামুনুল হকের প্রথম স্ত্রী জানতেন না। তা ছাড়া রিসোর্টে কথিত স্ত্রী ঝর্ণার সঠিক নাম বলেননি মামুনুল।
মামুনুল হক হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক এবং খেলাফত মজলিসের মহাসচিব। রয়্যাল রিসোর্টে তিনি ঘেরাও থাকা অবস্থায় স্থানীয় হেফাজতে ইসলামের নেতাকর্মীরা সেখানে ব্যাপক ভাঙচুর করেন। পরে মামুনুল হককে ছিনিয়ে নিয়ে যান তারা।
মামুনুল হকের কথিত দ্বিতীয় স্ত্রী জান্নাত আরা ঝর্ণার দুই সন্তান আবদুর রহমান ও তামিম তাদের বাবার সঙ্গে খুলনায় থাকে। আবদুর রহমান কয়েক দিন আগে ফেসবুক লাইভে এসে মামুনুল হক সম্পর্কে ক্ষোভ প্রকাশ করে তার বিচার দাবি করে। পাশাপাশি আবদুর রহমান তার মা-বাবার বিচ্ছেদ ও তাদের পরিবার ধ্বংসের জন্য সরাসরি মামুনুল হককে দায়ী করে।