ফিচার

‘ভুয়া’ ডক্টরেট ডিগ্রি নিয়ে মুখ খুললেন মমতাজ

By Daily Satkhira

April 14, 2021

বিনোদন ডেস্ক : ভারতের তামিলনাড়ুর গ্লোবাল হিউম্যান পিস বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি পেয়েছেন ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ। গত শনিবার বিশ্ববিদ্যালয়টি তাকে ‘ডক্টর অব মিউজক’ পদকে ভূষিত করে। তবে মমতাজের পাওয়া সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রির গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এরই মধ্যে বিতর্ক উঠেছে।

অনেকেই দাবি করেছেন, ভারতে গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি নামে বৈধ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। আর প্রতিষ্ঠানটি ‘ডক্টরেট ডিগ্রি’ বিক্রি করে বলেও মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

মমতাজের ডক্টরেট ডিগ্রি পাওয়ার বিষয়টি অনুসন্ধান করে দেখেছে ‘বিডি ফ্যাক্টচেক’। তাদের অনুসন্ধানে জানা যায়, ভারতে গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি নামে বৈধ কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তবে এই নামে একটি ওয়েবসাইট আছে, যারা টাকার বিনিময়ে সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি দিয়ে থাকে, যা ভারতের দ্যা ইউনিভার্সিটি গ্রান্টস কমিশন (ইউজিসি) অ্যাক্ট- ১৯৫৬ অনুযায়ী অবৈধ। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে যোগাযোগ করা হলে মমতাজ বলেন, ‘এই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে গত এক বছর আগে আমাকে এই সম্মাননা দেওয়ার বিষয়ে কথা হচ্ছিল। করোনার কারণে আমি সময় নিয়েছি। আর এই সময়টা আমি নিজেও এই বিশ্ববিদ্যালয়ের খোঁজ-খবর নিয়েছি। আমার কাছে এটি ভুয়া মনে হয়নি। হ্যাঁ, এই নামে অনেক ভুয়া প্রতিষ্ঠান বা ঠিকানার খবর আমিও পেয়েছি। তখন এটি নিয়ে আরও বেশি সতর্ক হয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া শুরু করি। এটা নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, এই বিশ্ববিদ্যালয়টি সেটি নয়।’

মমতাজ আরো বলেন, ‘আমি নিজে গিয়ে সম্মাননা গ্রহন করেছি। আমি দেখেছি, সেখানে কত লোক উপস্থিত ছিল। এই আ‌য়োজ‌নে চেন্নাইয়ের অনেক গণ্যমান্য ব্যক্তি অতিথি হিসেবে ছিলেন। এর মধ্যে সাবেক রাষ্ট্রপতি এ পি জে আবুল কালাম ইনস্টিটিউটের ডিরেক্টর, লোকাল চ্যানেলের মালিক, কমিশনারসহ অনেকই ছিলেন। আর সবচেয়ে বড় কথা হলো, প্রতিষ্ঠানটি শুধু আমাকে একাই নয়, তাদের দেশের অনেক গুণী মানুষজনকেও সম্মানসূচক ডিগ্রি দিয়েছে। সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেছেন চেন্নাইয়ের সাবেক জেলা জজ থিরু এজে মুরুগানানথাম, তামিলনাড়ুর আধ্যাত্মিক ধর্মগুরু খলিফা মাস্তান সাহেবসহ অনেকে। সেখানে হাজির হয়ে বিষয়টি কোনো ভাবেই ভুয়া মনে হয়নি আমার কাছে।’

এদিকে, গ্লোবাল হিউম্যান পিস ইউনিভার্সিটি পক্ষ থেকে জানানো হয়, শিল্পী হিসেবে সাতশ’র বেশি একক অ্যালবামের রেকর্ড, সুদীর্ঘ ৩০ বছর বাংলা গানকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরা ও সমাজসেবা ছাড়াও নানামুখী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত রেখে নিজেকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন মমতাজ। সে কারণে তারা বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাকে ‘ডক্টর অব মিউজিক’ ডিগ্রি প্রদান করে। এটি দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান ড. পি. ম্যানুয়েল।

মমতাজ তিন দশকের বেশি সময় ধরে পেশাদার শিল্পী হিসেবে কাজ করছেন। সংগীতজীবনে সাত শতাধিক একক অ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে তার। ২০০০ সালে হানিফ সংকেতের আমন্ত্রণে জনপ্রিয় অনুষ্ঠান ‘ইত্যাদি’তে গান করেন তিনি। মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের কথায় ও সোহেল আজিজের সুরে ‘রিটার্ন টিকিট’ গানটি গেয়েছিলেন সে সময়। এরপরই রাতারাতি সারা দেশের শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে যান তিনি। ২০১৪ সালে দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন নিয়ে সাংসদ নির্বাচিত হন মমতাজ। ২০১৮ সালে মানিকগঞ্জ-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন এই শিল্পী। তার আগে ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কর্তৃক সংসদ সদস্য মনোনীত হন।

গান ও রাজনীতির বাইরেও নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রেখেছেন মমতাজ। দায়বদ্ধতা থেকে ২০০৪ সালের জানুয়ারিতে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মমতাজ চক্ষু হাসপাতাল। ২০০৮ সালে সিঙ্গাইরে তার গ্রামে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘মমতাজ শিশু ও চক্ষু হাসপাতাল’। বাংলাদেশ বধির ক্রীড়া ফেডারেশনের সভাপতি তিনি। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার শুভেচ্ছাদূত হিসেবে কাজ করছেন ২০১০ সাল থেকে। মমতাজ বেগম আন্তর্জাতিক চক্ষু চিকিৎসা সংস্থা অরবিসের দৃষ্টিদূত ও অস্ট্রেলিয়ার একটি শিক্ষাবিষয়ক সংস্থার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর।