অর্থনীতি

লকডাউনে দেবহাটার সিটিগোল্ডের রুলি ব্যবসায়ীদের কপালে চিন্তার ভাজ

By Daily Satkhira

April 15, 2021

কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা : কিছু দিন আগে টুং টাং শব্দে মুখরিত হতো দেবহাটা উপজেলার উত্তর সখিপুর সিটিগোল্ডের পল্লীগুলো। সকাল না হতেই বাড়ির মহিলা-পুরুষেরা তৈরি করতো চোখ ধাঁধানো সব হাতের রুলি কিন্তু এই ১৪ ই এপ্রিল থেকে সার্বিক লকডাউন দেয়ার কারনে এখন টুং টাং শব্দ বন্ধ হয়ে গেছে। বর্তমানে প্রায় ৪০-৫০টি পরিবারের লোকজন এ কাজে নিয়োজিত ছিলো কিন্তু এখন সব বন্ধ।

এই পল্লীতে ৫টি বড় কারখানা আছে। কারখানা থেকে এলাকার মহিলারা কাজ নিয়ে বাড়িতে বসে রুলির উপর নকশা করে থাকে। প্রতি জোড়া রুলি মজুরি হিসেবে পেতো ৬০-৮০টাকা। এক জোড়া রুলি নকশা করতে প্রায় ১ঘন্টা সময় লাগে। এভাবে মহিলা কারিগররা প্রতিদিন ৫-৬ জোড়া রুলি তৈরি করেন। যা তারা মজুরি হিসেবে ৩শ’ থেকে ৪শ’ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারতো কিন্তু এখন তারা এক টাকাও আয় করতে পারছেন না।

এই ব্যাপারে ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাইলে তারা বলেন প্রথমে ঢাকা থেকে কাসার পাত এনে হাতের মাপ অনুযায়ী বিভিন্ন মাপের রুলির ডিজাইন করা হয়। এরপর এর উপর নকশা তৈরির জন্য কারিগরদের নিকট পাঠানো হতো। কারিগররা নকশা শেষ করলে কারখানায় এটি ভাল করে পরিষ্কার করে এর উপর স্বর্ণ রঙের প্রলেপের তাপ দিয়ে শুকানো হয়, তারপর এটি বাজারজাত করা হতো। ঢাকা, যশোর, খুলনা সহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের অর্ডার অনুযায়ী এই রুলি সরাসরি অথবা কুরিয়ারের মাধ্যমে পাঠানো হয়। কিন্তু গত ১৪ এপ্রিল থেকে লক ডাউন দেওয়ার কারনে তারা ঢাকা থেকে কাসা আনতে পারছেনা বা রুলি তৈরি করে দেশের কোথাও বিক্রয় করতে পারছেননা।

উল্লেখ্য, ১ কেজি কাষ্টিং পিতল থেকে ৫০ জোড়া রুলি তৈরি করা হয়। প্রতি রুলির উৎপাদন খরচ ১শ’ ৮০ টাকা এবং বাজারে বিক্রি মূল্য ২শ’ ৩০ টাকা থেকে ২শ’ ৫০ টাকা। বর্তমানে উত্তর সখিপুরে ৬-৭ টি এ জাতীয় কারখানা আছে। যার সাথে এলাকার ১শ’ ৫০ থেকে ২শ’ জন কারিগর কাজ করে থাকে। যার উপরে ভর করে এলাকার বেকার যুবক ও মহিলারা স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছিলো কিন্তু তারা এখন সব বেকার হয়ে পড়েছে। রুলি ব্যবসায়ী মৃত গোলাপদি মোল্ল্যার পুত্র সেলিম হোসেন প্রতিবেদককে জানান, তিনি এখানে ২০১০ সালে এ কাজ শুরু করেন। বর্তমানে বিভিন্ন বাজারে এ সকল পণ্য বিক্রয় করে তারা সংসারিক ব্যয় নির্বাহ করেন। এর সাথে এলাকার অনেক মানুষ এ পেশায় নিয়োজিত থেকে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সরকার যদি তাদের স্বল্প সুদে আর্থিক ঋণ প্রদান করে থাকেন তাহলে তারা আরো বেশি রুলি তৈরি করতে সক্ষম হবেন এবং এলাকার অসংখ্যা বেকার যুবক-যুবতি তাদের কর্মসংস্থান খুঁজে পাবেন বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমরা এ কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পুরস্কারও পেয়েছি’। তাই তিনি তাদের প্রতি সুনজর দিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।