দেবহাটা

কৃষিতেই সফলতার মুখ দেখেছেন আলীপুরের কৃষকরা

By daily satkhira

April 17, 2021

বিলকিস নাহার, ইমরাতুস সাদিয়া ও আসমাউল হুসান, (অনীক স্মৃতি সাংবাদিকতা প্রশিক্ষণার্থী ও ইন্টার্ন) : বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। যে কারনে একসময় এদেশের মানুষকে বলা হতো মাছে ভাতে বাঙালি। এতে আমরা বুঝতে পারি সুদুর অতীতকাল থেকেই এদেশে প্রচুর ধান ও মাছ উৎপাদিত হতো। কৃষি প্রধান জেলা হিসেবে সাতক্ষীরা তার মধ্যে অন্যতম। সাতক্ষীরা সদরের আলীপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকাতেও প্রচুর পরিমানে ধান,সবজি ও সাদা মাছ মাছ উৎপাদিত হয়। কিন্তু কৃষকরা বরাবরই ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়। তারপরও এখানকার মানুষ কৃষিতে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন অনেকেই। বর্তমানে ধান চাষের পাশাপাশি এসব এলাকায় সরিষা চাষেও লাভের মুখ দেখছেন কৃষকরা। কৃষি পেশায় সফলতার মুখও দেখেছেন অনেকেই।

আলিপুর ইউনিয়নের তালবাড়িয়া এলাকার কৃষক মো: রুহুল কুদ্দুস জানান, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদন করার জন্য দশ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। জমি তৈরি, বপন, রোপন, ধান কাটা, মাড়াই করা ইত্যাদি কাজের জন্য মোট বাইশ জন শ্রমিকের প্রয়োজন পড়ে প্রতি এক বিঘা জমিতে।

ধানী জমিতে তিন চালান সার প্রয়োগ করতে হয়। এক বিঘা ধানী জমিতে কোনো ধরনের প্রাকৃতিক দূর্যোগের সম্মুখিন না হলে প্রায় ১৫ মণের মতো ধান উৎপাদিত হয়। আমন, আউশ ও বোরো মৌসুমে উৎপাদিত হয়। তার মধ্যে বোরো মৌসুমে ব্রি ধান, ১৩০-১৩৫ দিনের মধ্যে পাকতে শুরু করে। ফলনের দিক থেকে আমনের থেকে আউশ মৌসুমে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। আবার আউশের থেকে বোরো মৌসুমে বেশি ধান উৎপাদিত হয়। কিন্তু বর্তমানে শ্রমিক ও সারের মূল্য বেশি হওয়ায় কৃষক ধানের ন্যায্য মূল্য পায় না এবং একই কারণে কৃষকের খুব স্বল্প পরিমানে লাভ হচ্ছে।

ধান উৎপাদনে কৃষক বেশি লাভ করতে না পারায় কৃষক মো: রুহুল কুদ্দুস সিদ্ধান্ত নেন বোরো মৌসুমে ধান উৎপাদন শেষে সেই একই ঝমিতে তিনি সরিষা রোপন করবেন। সরিষা প্রধানত শীতকালীন ফসল। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে সরিষার বীজ বপন করা হয়। কৃষকের মতে, যতো বেশি শীত পড়বে সরিষার উৎপাদন ততো ভালো হবে। দেশি সরিষা টরি-৭, পঁচাত্তর থেকে আটাত্তর দিনের মধ্যে উৎপাদিত হয়। কৃষক রুহুল কুদ্দুস বলেন, এক বিঘা জমিতে সরিষা উৎপাদন করতে ৩৫০০ টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি সরিষা ৩ মণ করে উৎপাদিত হলেও ফলন ভালো হলে ৫ মণ পর্যন্ত উৎপাদন সম্ভব। বিঘা প্রতি সরিষা উৎপাদনে কৃষক খরচের এক তৃতীয়াংশ পর্যন্ত লাভবান হন। এ বছর সরিষা কত টাকা করে বিক্রয় হয়েছে জানতে চাইলে কৃষক মো: রুহুল কুদ্দুস বলেন, প্রতি মণ ২৪০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। তার সরিষা চাষে সফলতা দেখে আশে পাশের আরও অন্যান্য কৃষকগণও সরিষা চাষে উদ্ধুদ্ধ হয়েছেন। সরিষা থেকে প্রধানত তেল উৎপন্ন হলেও গ্রামের মহিলারা সরিষা বিভিন্ন তরিতরকারি রান্নাতে দিয়ে থাকেন। এতে রান্নার স্বাদও বেড়ে যায়।

তবে কৃষক রুহুল কুদ্দুস ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষি নির্ভর বাংলাদেশ। কিন্তু কৃষক এখনো বঞ্চিত থাকে। দিন সারের দাম বৃদ্ধিসহ নানা কারণে অনেকেই কৃষি পেশা থেকে মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। তিনি সারের উপর ভূর্তকি প্রদানসহ সারের দাম কমিয়ে দরিদ্র কৃষকদের চাষাবাদে উৎসাহ দেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।

এছাড়া মাছ চাষের সাথে সবজিও চাষ করে সফল হচ্ছেন। আলিপুর গ্রামের মো: আছাদুল হক একজন সফল মাছ চাষী। তিনি তাঁর হিরার চকে নলবোন নামের ৬০ বিঘা জমিতে একজন কর্মচারী দিয়ে সমন্বয় পদ্ধতিতে মাছ চাষ করেন। তিনি ঘেরে মাছ ছাড়ার আগের ঘেরের পানি শুকিয়ে নেন। তারপর মাটিতে ১০ বস্তা চুন প্রয়োগ করেন। এরপরে এক সপ্তাহ পর ১০ বস্তা ড্যাপ সার প্রয়োগ করেন। এভাবে ঘেরে মাছ ছাড়ার জন্য মাটিকে প্রস্তুত করে নেন। তিনি আরও জানান, খালে যখন জোয়ারের পানি ওঠে তখন তিনি খাল থেকে পানি নিয়ে ঘেরে দেন। লোনা পানি নেওয়ার ৩-৪ দিন পর বাগদার পোনা ছাড়েন। দুই-তিন মাস পর বাগদার পোনা বড় হয়ে যাওয়ার পর সেগুলো বাজারজাত করা হয়। সাতক্ষীরা জেলাতে চিংড়ির উৎপাদন ভালো হয়। এসব চিংড়ি দেশ বিদেশে রপ্তানি করা হয়। চিংড়িকে সাদা সোনা বলা হয়ে থাকে। এসব চিংড়ি বড় হয়ে যাওয়ার পর ঘেরে বৃষ্টির পানি দিয়ে লোনা পানিকে মিঠা পানিতে রুপান্তরিত করে মাছ চাষীরা রূই, কাতলা, মৃগেল, ট্যাবলেট, তেলাপিয়া প্রভৃতি সাদা মাছ ছাড়েন। মাছ চাষ করার পাশাপাশি ঘেরের ভেড়িতে কুমড়া, টমেটো, ঢেড়শ, পুঁইশাক ইত্যাদি।

শাক সবজিও চাষ করেন। এসব শাক সবজি ভেড়িতে রোপন করার জন্য ভেড়িতে বেশি মাটি দিয়ে ভেড়ি বড় করা হয়। মাছ উৎপাদন করে মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি মাছ চাষীগণ আর্থিকভাবেও লাভবান হন। মাছ চাষের সাথে শাকসবজি চাষ করে মানুষের ভিটামিনের চাহিদা মেটানোও সম্ভব হচ্ছে।

মাছ চাষী আছাদুল হক বলেন, আমি মাছ সাথে ভেড়িতে কুমড়া ও টমেটো চাষ করে বেশ লাভবান হয়েছি। ঘেরের কুমড়া চাষ করে ৩৫ হাজার টাকার কুমড়া বিক্রি করেছি। আর টমেটো চাষ করতে আমার ১৭ হাজার টাকা খরচ হয়েছিল। আর সেই টমেটো বিক্রি করেছি ৪৫ হাজার টাকায়। বর্তমানে তিনি একজন সফল কৃষক।