অনলাইন ডেস্ক : করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন শুরুর সময় থেকেই কঠোর অবস্থানে পুলিশ। তবে তাদের সে কঠোরতা সবার জন্য সমান নয়।
সেখানেও দেখা যাচ্ছে বৈষম্য। দুর্বল সেখানেও নিপীড়িত। বিষয়টি আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও। তবু নির্বিকার পুলিশ। তারা বলছে, এটাই ঠিক আছে।
মানুষ ও যানবাহনের চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাজাধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চেকপোস্টে প্রথম দিন থেকেই নিয়মিত থামানো হচ্ছে অনেক মোটরসাইকেল, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও রিকশা। দেওয়া হচ্ছে মামলা। তবে ছাড় পাচ্ছে অনেক প্রাইভেটকার। ভুক্তভোগীদের প্রশ্ন– লকডাউন কী শুধু গরিব ও নিম্ন মধ্যবিত্তদের জন্য? কঠোর লকডাউনের প্রথম দিন থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সিএনজি, রিকশা ও মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে দেখা যায় ঢাকা মহানগর পুলিশকে (ডিএমপি)। নানান কারণে এসব যানবাহনের মালিক ও চালকদের বিরুদ্ধে মোটা অংকের মামলা দায়ের করা হয়। রাজধানীর অনেক পয়েন্টেই সিট খুলে নিয়ে উলটো করে রাখতে দেখা গেছে রিকশাকে।
সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় এক শারীরিক প্রতিবন্ধী রিকশাচালকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সময় পুলিশের একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতে দেখা যায়, রিকশাটির সিট নিয়ে আটকের চেষ্টা করছিল পুলিশ। অভিযোগ আছে, রিকশাচালকের গায়েও হাত তোলেন দায়িত্বরত ওই পুলিশ কনস্টেবল।
এসময় শারীরিক প্রতিবন্ধী ওই রিকশাচালক বলে ওঠেন, আমি প্রতিবন্ধী, আমার বুকে ব্যথা। বলার পরেও আমার সঙ্গে এমন করেছেন উনি (কনস্টেবল)।
অন্যদিকে রুজি-রুটির আশায় বাইরে বের হওয়া সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চালকদের অনেককেই গুণতে হচ্ছে মোট অংকের মামলা-জরিমানা।
রাজধানীর মিরপুর-১০ নম্বর গোলচত্বরে অবস্থান করা এক সিএনজি অটোরিকশা চালক আবদুর রশীদ বলেন, প্রথম কিছুদিন বের হয় নাই। কিন্তু আমাদের তো দৈনিক আয়। কতদিন আয় রোজগার ছাড়া থাকবো। গতকাল নিয়ে বের হইছিলাম আর গতকালই দুই হাজার টাকার মামলা দিছে। এখন সিএনজি চালায়া নিজে খামু নাকি মামলা ভাঙ্গামু? ওদিকে প্রাইভেটকার, বড় বড় গাড়ি সব যাইতে দেয় পুলিশ। শুধু আমাদের মতো গরিবদেরই ধরে। লকডাউন মনে হয় শুধু গরিবের।
সাধারণ সময়ে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্ট টাইম চাকরি করতেন নুরে আলম। করোনার কারণে চাকরি চলে গেলে শুরু করেন রাইড শেয়ারিং। নুর বলেন, আমি যদি আজ রাইড না দেই তাহলে আগামী ১ তারিখ কীভাবে বাসার ভাড়া দেবো? রাইড দিয়েই তো এতদিন চলছিলাম। যারা সরকারি চাকরি করে তাদের তো আর বেতন থেমে নেই। সমস্যা তো হয় আমার মতো অভাবীদের। লকডাউনে সবই তো চলছে দেখেন। শুনতেছি মার্কেটও নাকি খুলে দেবে। তো আমরা রাইড দিলে সমস্যা কী। দু’দিন আগে আমাকে এক হাজার ৫শ টাকার মামলা দিছে।
তবে নিম্ন মধ্যবিত্তরা যাই বলেন না কেন কঠোর অবস্থানের পক্ষে পর্যাপ্ত যুক্তি ও আইনি ব্যাখ্যা আছে পুলিশেরও। মাঠ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করা ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগের সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধে গণপরিবহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আছে। রিকশা, অটোরিকশা বা চুক্তির বাইক সেই হিসেবে তো গণপরিবহন হয়।
‘এর বিপরীতে প্রাইভেট গাড়ির গণপরিবহন হিসেবে ব্যবহার হওয়ার সম্ভাবনা কম। যারা প্রাইভেটকার নিয়ে বের হচ্ছেন তারা হয়তো ব্যক্তিগতভাবে জরুরি প্রয়োজনে বের হচ্ছেন। তারপরেও যে আমরা প্রাইভেটকার চেক করি না, তা না। কোনো কোনো প্রাইভেটকার দেখি ভাড়ায় বের হয়। সেগুলোকে আমরা থামাচ্ছি, জিজ্ঞাসাবাদ করছি এবং আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা পুলিশ যাই করি তাতেই দোষ। আমরা ব্যবস্থা নিলে একপক্ষ বলবে যে, পুলিশ অমানবিক। ব্যবস্থা না নিলে বলবে যে, পুলিশ কিছুই করে না। ’
সম্প্রতি গণভবনের সামনে একটি দুর্ঘটনার উদাহরণ দিয়ে সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার বলেন, গতকালই গণভবনের সামনে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। মূল সড়কে চলে আসা একটি ব্যাটারিচালিত রিকশাকে বাঁচাতে গিয়ে একটি ট্রাক ধাক্কা মারে প্রাইভেটকারে। তাহলে এভাবে রিকশা যদি সড়কে চলে আসে বিশেষ করে ব্যাটারিচালিত রিকশা তখন তো দুর্ঘটনার আশংকাও থাকে।
সব যানবাহনকেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় এবং কোনো যানবাহনের বিষয়েই ‘শ্রেণিবিন্যাস’ করা হয় না বলে বাংলানিজকে জানান ডিএমপির জনসংযোগ ও মিডিয়া বিভাগের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার ইফতেখারুল ইসলাম।
তিনি বলেন, জিজ্ঞাসাবাদ ও আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষেত্রে আমরা যানবাহনে কোনো ক্ল্যাসিফিকেশন করি না যে প্রাইভেটকার ধরবো না কিন্তু সিএনজি-রিকশা ধরবো। বিষয়টা মোটেও এমন না। ব্যাটারিচালিত রিকশার ক্ষেত্রে উচ্চ আদালতের একটি নির্দেশনাই আছে। আমরা শুধু সেটি বাস্তবায়ন করছি। ’
‘রিকশা বা ভাড়ায়চালিত মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে মানুষ এখনও ঘর থেকে কম বের হচ্ছেন। নইলে প্রধান সড়কে রিকশা দিয়ে পূর্ণ থাকতো। কাজেই বিষয়টিকে এমন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার সুযোগ নেই। ’