অনলাইন ডেস্ক : দেশের বাজারে ভোজ্যতেলের দাম যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন সর্বোচ্চ। এরপরেও আরেক দফা ভোজ্যতেলের দাম বাড়াতে চাচ্ছে উৎপাদন ও বিপণনকারী কোম্পানিগুলো। নতুন করে প্রতি লিটার ভোজ্যতেলের দাম গড়ে ৫ টাকা বাড়ানো হবে। লিটারে বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৪৪ টাকা ও সুপার পাম তেল ১১৩ টাকা খুচরা মূল্য নির্ধারণ করে চিঠি দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের সংগঠন।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনে গত ১৯ এপ্রিল চিঠি দিয়ে নতুন দর জানিয়ে দিয়েছে ভোজ্যতেল পরিশোধনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন। নিয়ম অনুযায়ী, ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর আগে তা ট্যারিফ কমিশনকে জানাতে হয়। সাম্প্রতিক মূল্যবৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি ১৫ দিন পরপর নতুন দাম ঠিক করার কথা ছিল বলে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আগে আলোচনা হয়েছিল।
এর আগে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গত ১৫ মার্চ ভোজ্যতেলের দাম বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন দিয়েছে। ভোজ্যতেলের মূল্য পর্যালোচনা করে নতুন দর অনুমোদন দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তখন প্রতি লিটারে ৪ টাকা বাড়িয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৩৯ টাকা ও সুপার পাম তেল ১০৯ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া পাঁচ লিটারের বোতল ৬৬০ টাকা করা হয়।
সংগঠনের চিঠিতে জানানো হয়, নতুন করে সর্বোচ্চ খূচরা মূল্য হবে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৪৪ টাকা ও খোলা সয়াবিন তেল ১২২ টাকা। আর পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ৬৮৫ টাকা হবে। সুপার পাম তেল ১১৩ টাকা। এতে নতুন দরে খোলা ও বোতলজাত সয়াবিনের দাম লিটারে ৫ টাকা বাড়বে। পাঁচ লিটারের বোতলে বাড়বে ৫৫ টাকা। পাম সুপার তেলের দাম বাড়বে লিটারে ৪ টাকা। তবে বাজার পর্যায়ে এখন পর্যন্ত কোনো কোম্পানি নতুন দরে তেল বিক্রি শুরু করেনি।
চিঠিতে সংগঠনটি দাম বড়ানোর বিষয়ে দাবি করে জানায়, বিশ্ববাজারে দাম বেড়ে যাওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে ভোজ্যতেলের মূল্য পুননির্ধারণের জন্য সমিতির পক্ষ থেকে ১০ মার্চ বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে প্রস্তাব পাঠানো হয়। এতে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলের দাম প্রস্তাব করা হয়েছিল ১৫০ টাকা। সমিতির পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ট্যারিফ কমিশন ২৯ মার্চ মূল্য নির্ধারণের বিষয়টি পর্যালোচনায় রয়েছে বলে জানায়। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম আরও বেড়েছে। তবে পবিত্র রমজানের কথা বিবেচনা করে বিপণনকারীরা বোতলজাত সয়াবিন তেলের লিটারে ৭ টাকা ছাড় দিয়ে নতুন খুচরা মূল্য ১৪৪ টাকা নির্ধারণ করবে। এই দর ২৪ এপ্রিল থেকে কোম্পানিগুলো কার্যকর করার কথা বলেছে।
এ দিকে ভোজ্যতেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী কর প্রত্যাহারের জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে সুপরিশে করেছে। এর ভিত্তিতে গত ১১ এপ্রিল ভোজ্যতেল আমদানিতে ৪ শতাংশ অগ্রিম কর প্রত্যাহার করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড। তবে কোম্পানিগুলো দাবি করছে, আগাম কর প্রত্যাহার করায় তেলের দামের ওপর তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না। পার্থক্য এটুকুই, সরকার আগে ভ্যাট অগ্রিম আদায় করত। এখন বিক্রির পরে আদায় করবে। এতে কোম্পানিতে নগদ টাকার প্রবাহে কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
ভোজ্যতেল বিপণনকারী সিটি গ্রুপের পরিচালক বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, গত ১০ মার্চ দাম বাড়ানোর প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে পর্যালোচনা করেছে ট্যারিফ কমিশন। এর পরেও বিশ্ববাজারের দাম বাড়ছে। এ কারণে নতুন দর নির্ধারণ করে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যেই নতুন দর বাজার পর্যায়ে কার্যকর হবে বলে জানান তিনি।
বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজার থেকে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ১ হাজার ৩৬০ ডলার ও পাম তেল ১ হাজার ১৪০ ডলারে আমদানি করতে হচ্ছে। এই দরে আমদানি করে কম দামে বিক্রির সুযোগ নেই কোম্পানিগুলোর।