সাতক্ষীরা

সাতক্ষীরায় পিপির নেতৃত্বে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতির উপর হামলা

By daily satkhira

April 26, 2021

নিজস্ব প্রতিনিধি : ভার্চুয়াল আদালতে ধর্ষণ মামলার এক আসামীর জামিন শুনানীকালে রাষ্ট্রপক্ষ আপত্তি দেওয়ায় আসামীপক্ষের আইনজীবীর আপত্তিকর মন্তব্য করার অভিযোগকে কেন্দ্র করে আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. এম শাহ আলমকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। এ সময় জজ কোর্টের তিন তলায় তার ল. চেম্বারের আসবাবপত্র ও জানালার কাঁচ ভাঙচুর করা হয়। সাতক্ষীরা জজ কোর্টের আইনজীবী অ্যাড. গোলাম মোস্তফা জানান, প্রাইভেট পড়ানোর সময় আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা গ্রামের ১০ম শ্রেণির ছাত্রীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করে একই গ্রামের আসাদুল ইসলাম (২৫)। ওই ছাত্রী চার মাসের অন্তঃস্বত্বা হয়ে পড়ার পর জানাজানি হলে গত বছরের ৮মে ধর্ষিতার বাবা আসাদুলের নাম উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২০০০ সালের সংশোধিত ২০০৩ এর ৯(১) ধারায় মামলা দায়ের করেন। ওই ছাত্রী সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে আদালতে ২২ ধারায় জবানবন্দি দেয়। চলতি বছরের ২ এপ্রিল আসামী আসাদুলকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়। আসাদুল বিচারিক হাকিম রেজোয়ানুজ্জামানের খাস কামরায় ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়। সেখান থেকে ওই আসামী জেল হাজতে রয়েছেন। অ্যাড, রফিকুল ইসলাম ও অ্যাড. গোলাম মোস্তফা জানান, ধর্ষণ মামলার আসামী আসাদুলের জামিন শুনানীর জন্য সোমবার সাতক্ষীরা জেলা ও দায়রা জজ আদালতে দিন ধার্য ছিল। আসামীপক্ষের আইনজীবী ছিলেন অ্যাড. গোলাম মোস্তফা ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. শাহ আলম। দুপুর একটার দিকে যার যার চেম্বারে বসে ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে জামিন শুনানীকালে আসামী ও ভিকটিম বিবাহ করেছেন ও তাদের মীমাংসা হয়ে গেছে মর্মে আদালতকে অবহিত করেন অ্যাড. এম শাহ আলম। এ সময় ভিকটিম ও তার বাবা মামলার বাদি অ্যাড. এম শাহ আলমের চেম্বারে বসে আছেন জানালে রাষ্ট্রপক্ষের পিপি অ্যাড আব্দুল লতিফ আপত্তি জানান। জামিনের আপত্তি জানিয়ে তিনি ভিকটিম ও বাদিকে স্বশরীরে দেখতে চান। বাদি ও ভিকটিম প্রকৃত কিনা তা নিশ্চিত হতে তাদেরকে তার চেম্বারে আনতে বলেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে এম শাহ আলম পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফকে উদ্দেশ্য করে দালাল, খাটাল লতিফ, জাল সার্টিফিকেট নিয়ে ওকালতি করিস এমনসব মন্তব্য করেন। বিষয়টি সাতক্ষীরা সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমানসহ বেশ কিছু জেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ আইনজীবীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। আদালত ওই আসামীকে দু’ হাজার টাকার বণ্ডে চার সপ্তাহের জন্য জামিন দেন। দুপুর সোয়া একটার দিকে অ্যাড. আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা অ্যাড একলেছার আলী বাচ্চু, অ্যাড. এবিএম সেলিম, অ্যাড. নুরুল আমিন, অ্যাড খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চুসহ কয়েকজন অ্যাড. শাহ আলমের চেম্বারে ঢুকে তার উপর হামলা চালায়। হামলা চলাকালে সেখানে উপস্থিত হন সাবেক সাংসদ অ্যাড. সালাহউদ্দিন, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), অ্যাড. এসএম হায়দার আলী, অ্যাড. সাইদুর রহমান জিকোসহ ১২/১৪ জন আইনজীবী। হামলায় আহত হন অ্যাড. শাহ আলম। ভাঙচুর করা হয় তার চেম্বারের আসবাবপত্র, জানালার কাঁচের গ্লাস ও এসি মেশিন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন আইনজীবী জানান, গত বছরে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ কয়েকজন আইনজীবীর বিরুদ্ধে আদালত পাড়ায় আপত্তিকর হ্যাণ্ডবিল বিতরনকে কেন্দ্র করে অ্যাড. এম শাহ আলম ও তার কয়েকজন সহযোগী আইনজীবী বিএনপি নেতা অ্যাড, নুরুল আমিনসহ কয়েকজনকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এ ছাড়াও বার কাউন্সিল পাশ করার পরও তাদেরকে বিভিন্ন অজুহাতে আদালতে প্রাকটিস করতে না দেওয়া, বার কাউন্সিলে পাশ না করেও যারা আদালত পাড়ায় দালালির মাধ্যমে বিচার প্রার্থীদের হয়রানি করতো তাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া, বিগত নির্বাচনে ঠুনকো অজুহাতে ভোটার না করা, কল্যাণ ফাণ্ডে টাকা জমা না নেওয়াসহ বিভিন্ন কারণে বেশ কয়েকজন আইনজীবী ক্ষুব্ধ ছিলেন এম শাহ আলমের উপর। এ ছাড়া সহকারি পিপি ও অতিরিক্ত পিপি বানানোর নাম কের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ কয়েকজন আইনজীবীর কাছ থেকে মোট অংকের টাকা ঘুষ নিয়েও পদ বঞ্চিত হওয়ায় তারা লতিফকে বরখাস্তের দাবিতে একের পর এক যে আন্দোলন করে তাতে অ্যাড. এম. শাহ আলমের সমর্থন ছিল বলে মনে করেন পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ। সোমবার অ্যাড. এম শাহ আলমের উপর হামলা ওই সব পুঞ্জিভূুত ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ বলে মনে করেন ওইসব আইনজীবীরা। এদিকে অ্যাড. শাহ আলম জানান, তিনি সভাপতি থাকাকালিন গত বছরের আগষ্ট মাসে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফের বিরুদ্ধে আইন সনদ জাল মর্মে কয়েকজন আইনজীবী তার কাছে অভিযোগ করেন। আব্দুল লতিফকে নোটিশ করে তার সার্টিফিকেট দেখতে চাইলে তিনি আপত্তিকর মন্তব্য করেন। বাধ্য হয়ে তিনি তাকে সাময়িকের জন্য ডিসবার করেন। এর ঘটনায় আব্দুল লতিফ তার বিরুদ্ধে দেওয়ানী মামলা করেন। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির ডিসবারের আদেশটি গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর ঢাকা বার কাউন্সিলে স্থগিত করা হয়। এসব কারণে আব্দুল লতিফ তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। আইনজীবী সমিতির সাম্প্রতিক নির্বাচনে নতুন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তাকে দেখে নেওয়ার জন্য হুমকি দিয়ে আসছিলেন আব্দুল লতিফ ও তার সহযোগিরা। সেকারণে সোমবার একটি মামলার জামিন শুনানীতে আপত্তিকর মন্তব্য করার ঠুনকো অভিযোগে পরিকল্পিতভাবে তার চেম্বারে ঢুকে অ্যাড. আব্দুল লতিফের নেতৃত্বে বিএনপি নেতা অ্যাড একলেছার আলী বাচ্চু, অ্যাড. এবিএম সেলিম, অ্যাড. নুরুল আমিন, অ্যাড খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চু, সাবেক সাংসদ অ্যাড. সালাহউদ্দিন, আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), অ্যাড. এসএম হায়দার আলী, অ্যাড. সাইদুর রহমান জিকোসহ ১২/১৪ জন আইনজীবী হামলা চালান। হামলায় তাকে লাঞ্ছিত করা হয়। ভাঙচুর করা হয় চেম্বারের আসবাবপত্র ও জানালার কাঁচের গ্লাস। এ ব্যাপারে জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ সাংবাদিকদের বলেন, একটি ধর্ষণ মামলায় জামিন আপত্তি করায় তার বিরুদ্ধে আপওিকর মন্তব্য করার প্রতিবাদ করতে গেলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাড. এসএম হায়দাল আলী, অ্যাড. আব্দুল মজিদ(২), অ্যাড. সালাউদ্দিন, অ্যাড. এখলেচার আলী বাচ্চু, অ্যাড, এবিএম সেলিম, এ্যাড, খায়রুল বদিউজ্জামান বাচ্চুসহ কয়েকজনের সঙ্গে শাহ আলমের বচসা হয়। এতে কোন হামলার ঘটনা ঘটেনি। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাড. রেজোয়ান উদ দৌলা সবুজ তার উপস্থিতিতে সাবেক সভাপতি ও তার চেম্বারে হামলার ঘটনা ঘটার কথা স্বীকার করে বলেন, এ ঘটনা আইনজীবীদের জন্য লজ্জাজনক। সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাড. আবুল হোসেন জানান, তিণি ঘটনার সময় ছিলেন না। মঙ্গলবার আদালতে যেয়ে কমিটির সদস্যদের সঙ্গে পরামর্শ করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। সাতক্ষীরা সদর থানার পুলিশ পরিদর্শক বুরহানউদ্দিন জানান, খবর পেয়ে আদালতে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। সোমবার বিকেল ৬টা পর্যন্ত এ নিয়ে থানায় কোন লিখিত অভিযোগ করা হয়নি।