জাতীয়

২৬ বছরের মধ্যে ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড

By Daily Satkhira

April 26, 2021

দেশের খবর : ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙে এখন ৬১ বছর আগের রেকর্ড ভাঙতে চলেছে ঢাকার তাপমাত্রা। ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সোমবার (২৬ এপ্রিল) ঢাকায় তাপমাত্রা উঠেছে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। দেশজুড়ে বয়ে যাওয়া তীব্র তাপাদায়ের এই অবস্থা থাকবে অব্যাহত থাকবে আেো ৩-৪ দিন। ফলে এ যাত্রায় ৬১ বছর আগের রেকর্ড ভেঙে ফেলা তেমন অস্বাভাবিক নয় বলে মনে করছেন আবহাওয়াবিদরা।

সোমবার দেশের আটটি বিভাগের মধ্যে ৫টি বিভাগেই ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের উপরে অবস্থান করে তাপমাত্রা। আগের দিন যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ডটি ভঙেে ফেলে রাজশাহী। এদিন রাজশাহী বিভাগের বাদলগাছিতে সর্বোচ্চ দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠে ৪১ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এদিন খুলনা বিভাগের তাপমাত্রাও ৪১ ডিগ্রী সেলসিয়াসে উঠে যায়। তবে এই তিন বিভাগের পেছনেই অবস্থান করে ময়মনসিংহ এবং বরিশাল। সোমবার ময়মনসিংহে বিভাগে তাপমাত্রা উঠে ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং বরিশাল বিভাগে উঠে ৪০ দশমিক ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এছাড়া সিলেট এবং রংপুর বিভাগের তাপমাত্রাও ৩৯ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াসে অবস্থান করে।

অর্থাৎ এই তাপমাত্রা থেকেও অনুভব করা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহে পুড়ছে সারাদেশ। এতে তীব্র গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে সাধারণ মানুষের জনজীবন। এমনিতেই লকডাউন। তার ওপর যারা বাধ্য হয়ে কাজে বের হচ্ছেন, দুপুরের গরমে তাদের অবস্থা কাহিল। বিশেষ করে রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষগুলোর নাভিশ্বাস উঠছে। করোনায় মুখে মাস্ক পরার কথা থাকলেও রিকশাওয়ালা বা শ্রমজীবীদের গরমে-ঘামে মুখে মাস্ক রাখতে কষ্ট হচ্ছে। ভ্যান নিয়ে সবজি, ফল যারা বিক্রি করছেন তারাও চেষ্টা করছেন একটু ছায়ায় দাঁড়াতে। রোদ সরাসরি না লাগলেও তাপদাহে পুড়ছেন তারাও।

বর্তমানে দেশের পাঁচ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে তীব্র তাপপ্রবাহ। তাছাড়া ৮ বিভাগের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ। রোজার সঙ্গে তীব্র গরম যুক্ত হয়ে জনজীবনের ভোগান্তি চরমে উঠেছে। গত ২৫ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছে ৪১ দশমিক ৩ ডিগ্রিতে, যা রেকর্ড হয়েছে যশোরে। এটি গত সাত বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অন্তত পাঁচ জায়গায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিপ্রির ওপরে উঠেছে। একই অবস্থা রাজধানীরও। গত ২৬ বছরের মধ্যে রবিবার ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। তীব্র গরমে ওইসব এলাকার জনজীবন হাঁসফাঁস করছে। আবহাওয়াবিদ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুষ্ক আবহাওয়ায় অস্বস্তি বাড়াচ্ছে আপেক্ষিক আর্দ্রতা।

মাত্রাতিরিক্ত এই গরম পোহাতে হবে আরও তিন দিন। এসময় তাপমাত্রা এক থেকে দুই ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। তবে তিন দিন পর অর্থাৎ শুক্রবার থেকে কিছুটা স্বস্তি ফিরতে পারে গরম থেকে। আবহাওয়া অধিদফতর বলছে, আগামী ৩ দিন পর দেশে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এতে সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস কমে যেতে পারে।

আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া এবং খুলনা অঞ্চলের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। রাজশাহী ও খুলনা বিভাগের অবশিষ্টাংশসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ, রংপুর, সিলেট ও বরিশাল বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী পাঁচ দিনের আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও বলা হয়েছে, এই সময়ের শুরুতে বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পূর্বাভাসে আেো বলা হয়েছে, অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ সারাদেশের আবহাওয়া শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশের দিনের তাপমাত্রা সামান্য বাড়তে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ এ কে এম নাজমুল হক বলেন, চলমান তাপপ্রবাহ আগামী তিন-চার দিন অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ৩০ এপ্রিল বা তার পরদিন থেকে প্রায় সারাদেশেই বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তখন প্রায় সপ্তাহজুড়েই বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বৃষ্টির হলে তাপমাত্রা অনেকটাই কমে আসবে। এ ছাড়া গত তিন-চার দিন সর্বোচ্চ তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। তবে রাজশাহী ও খুলনা অঞ্চলে কিছুটা বাড়তে পারে। সেটা সর্বোচ্চ এক ডিগ্রি পর্যন্ত।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৫ এপ্রিলের (রবিবার) আগে সর্বশেষ ২০১৪ সালের ঠিক এই দিনে অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল চুয়াডাঙ্গায় এরচেয়ে বেশি ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। তারপর থেকে গত রবিবারেরটাই সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এ ছাড়া দেশের ইতিহাসে এযাবৎ সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড হয়েছে ৪৪ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৭২ সালের ১৮ মে তারিখে রাজশাহীতে রেকর্ড করা হয়েছে।

অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত ২৫ এপ্রিল রাজধানীর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা ঢাকায় গত ২৬ বছরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড ভেঙেছে। এর আগে ঢাকায় ১৯৯৫ সালে সর্বশেষ ৩৯ ডিগ্রিতে উঠেছিল তাপমাত্রা, ২৬ বছর পর গত ২৫ এপ্রিল তা ছাড়িয়েছে। তবে ঢাকায় ইতিহাসের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস, যা ১৯৬০ সালের ৩০ এপ্রিল রেকর্ড হয়।

আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, ২৫ এপ্রিলের আগে চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ২০ এপ্রিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাছাড়া ১৯ ও ২৪ এপ্রিল ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল। এছাড়া দেশের একাধিক জায়গায় ৩৯ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রার পারদ উঠেছে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, গত দুই দিনের ব্যবধানে তাপমাত্রা বেড়েছে ১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এই সময়ে গরম পড়ার কথা। এই সময়টাতে সূর্য একদম মাথার উপরে অবস্থান করে ও লম্বাভাবে কিরণ দেয়। এখন দিন আগের তুলনায় বড় হয়ে গেছে। তাই গরম পড়াটা স্বাভাবিক। তবে অন্যান্য বার এই সময়ে বৃষ্টি হয়ে থাকে। সাধারণত এমন গরম অব্যাহত থাকলে বৃষ্টি হবেই। আমরা আশা করছি আগামী দুই-তিন দিন পরে বৃষ্টি হয়ে এই গরম ভাব দূর হবে। আমাদের আশা শুক্রবারের পর থেকে এই দাবদাহ কমতে থাকবে।