আসাদুজ্জামান : যাছাই বাছাই পরীক্ষায় পাস করতে না পারায় সাতক্ষীরা সদর উপজেলার দক্ষিণ দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাত শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে, ফরম পূরণের সময় শেষ পর্যায়ে থাকায় পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে দূশ্চিন্তায় পড়েছেন ওই শিক্ষার্থীরা। তবে, বিদ্যালয়টির শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত অর্থ আদায় করে ফরম পূরণ করা এবং অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদেরকে এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষায় অংশ গ্রহনের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ করেন ফরম পূরনে বঞ্চিত শিক্ষার্থীরা। যাদের ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি তারা হলেন, সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দেবনগর গ্রামের অরবিন্দ সরকারের ছেলে সবুজ সরকার, একই এলাকার প্রসাদ সরকারের মেয়ে মৌ সরকার, সিন্ধু সরকারের মেয়ে তিথী সরকার, নারায়ণপুর গ্রামের মো. আবদুল মালেকের ছেলে আবদুর রহমান, ভাটপাড়া গ্রামের শাহজান দালালের ছেলে ই¯্রাফিল ইসলাম, আখড়াখোলা গ্রামের সিদ্দিক গাজীর ছেলে মামুন, দেবনগর গ্রামের আমজেদ হোসেনের ছেলে আল-মামুন। এসএসসি পরীক্ষার্থী সবুজ সরকার জানান, আমরা জানতাম এবার কোন পরীক্ষা হবেনা সরাসরি এসএসসি পরীক্ষা হবে। কিন্তু স্যার হঠাৎ একদিন ফোন করে স্কুলে আসতে বলেন। স্কুলে গেলে আমাদের কাছে পরীক্ষার খাতা আর কলম ধরিয়ে দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলেন। স্কুলে আসার আগেও আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার কথা জানানো হয়নি। পরে একদিন আবারো কয়েকজনকে ফোন করে হেড স্যারের বাড়িতে ডেকে নিয়ে পরীক্ষা নেওয়া হয়। তিনি আরো জানান, আমাদের বিদ্যালয় থেকে এবার ৬৫ জন শিক্ষার্থীর এসএসসির ফরম পূরন করা হয়েছে। এর মধ্যে ২৫ জন শিক্ষার্থী আমাদের বিদ্যালয়ের। বাকী ৩০ জন শিক্ষার্থী অন্যান্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। তিনি এ সময় অভিযোগ করেন, তাদের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করে শিক্ষকরা তাদের ফরম পুরন করেছেন। আরেক শিক্ষার্থী তিথী সরকার জানান, শুনেছি কয়েকজন শিক্ষার্থীকে ফোন করে স্কুলে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়েছে কিন্তু আমাদের কোন পরীক্ষাও নেয়া হয়নি, ফোনও করা হয়নি। আমরা শ্রেণি শিক্ষকের কাছে ফরম পূরণের কথা জানতে চাইলে তিনি প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। আর প্রধান শিক্ষকের কাছে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন শ্রেণি শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করতে। এভাবে আমাদের ঘুরানো হচ্ছে। কেন তাদের ফরম পূরণ করা হবে না এমন প্রশ্নের জবাবে ওই বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম জানান, ওই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করা হচ্ছে না দুইটা সমস্যার কারণে। প্রথম সমস্যা হল গত কয়েকদিন আগে তাদেরকে একটি যাছাই বাছাই পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেখানে তারা খুবই কম নাম্বার পাওয়ায় তাদের ফরম পূরন করতে দেয়া হয়নি। এছাড়া দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে আমরা যদি শতভাগ পরীক্ষার্থীদের পরীক্ষার হলে পাঠায় তাহলে সেখান থেকে যদি ৭৫ শতাংশের কম পরীক্ষার্থী পাশ করে তাহলে আমাদের বেতন বন্ধ হয়ে যাবে। এমনকি স্কুলের এমপিও বাতিল হয়ে যেতে পারে। এজন্য তাদের ফরম পূরণ করা হবে না বলে জানান তিনি। বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান জানান, দীর্ঘ ১৮ বছর পরে আমাদের বিদ্যালয়ের এমপিও ভুক্ত হয়েছে। এমপিও নীতিমালা-২০১৮ অনুযায়ী ৪টি শর্ত সাপেক্ষে এমপিও ভুক্ত করা হয়। পাশেরর হার সরকারী নীতিমালার নিচে আসলে আমাদের এমপিও বাতিল হতে পারে। এই আশংকায় দূর্বল শিক্ষার্থীদের ফরম পূরন করতে দেয়া হচ্ছেনা। এছাড়া তারা প্রথম থেকেই বিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ রাখেনা। তবে, যোগাযোগ করলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে। তিনি আরো জানান, অবৈধ সুযোগ সুবিধার কোন প্রশ্নই আসেনা। কারন শিক্ষার্থীরা অনলাইনে তাদের পরীক্ষার ফি জমা দিয়ে ফরম পূরন করছেন। এ ব্যাপারে বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি শেখ শফি আহমেদ জানান, আমি তো এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানিনা। না জেনে তো এখন কিছু বলতে পারবোনা। অভিযোগ দিয়েছেন, এখন আমি শিক্ষকদের সাথে পরামর্শ করে বিষয়টি দেখবো। সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তাদের ফরম পূরণ না করে তা আটকে রাখার কোন এখতিয়ার শিক্ষকদের নেই। আমার কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নেবো।##