নিজস্ব প্রতিনিধি : নির্যাতন চালিয়ে হত্যার ঘটনার চার মাস ১৪ দিন পর অবশেষে মৃতের লাশ কবর থেকে উত্তোলন করা হয়েছে। আদালতের নির্দেশে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) শাহারিয়ার কবীরের উপস্থিতিতে সোমবার সকাল ১০টায় উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নের কালুয়া গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করা হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক তাপস কুমার দত্ত, উপপরিদর্শক বন্দনা রানী পাল, উপপরিদর্শক নিরুপম নন্দী, উপপরিদর্শক আল আমিনসহ কালুয়া, লক্ষীখোলা, কাটাবুনিয়া, ব্দাুড়িয়া, গজালিয়া, হাড়িয়ারডাঙা, কমলাপুর ও মৌখালি এলাকার কয়েক হাজার এলাকাবাসী। এদিকে ভাটা শ্রমিকের মেয়েকে হত্যা ও ছোট মেয়েকে অপহরণের পর আটকে রেখে ধর্ষণের অভিযোগে দায়েরকৃত মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোমবার সকালে দক্ষিণ গজালিয়া বাজারে মানববন্ধন করেছে গ্রামবাসি। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মানবাধিকার কর্মী রঘুনাথ খাঁ, চাঁদখালি ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আক্কাজ ঢালী, কলেজ ছাত্র শাহীন আলম, মাছুম বিল্লাহ, মানবাধিকার কর্মী মুনসুর আলী, যুবলীগ নেতা বিএম ইকরামুল ইসলাম, নিহতের পিতা প্রমুখ। মানববন্ধন চলাকালে নিহতের পিতা বলেন, তার মেয়েকে হত্যা করা হলেও থানায় অভিযোগ করলেও পুলিশ আসেনি। পরে ৯৯৯ এ ফোন করেন। তার বড় মেয়ে হত্যাকারি ও ছোট মেয়েকে অপহরণের পর ধর্ষণকারি মশিয়ারের আত্মীয় উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সিহাবউদ্দিন ফিরোজ বুলুর কারণে চার আসামী এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। এমনকি আসামীরা প্রভাবশালী হওয়ায় ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ও ফরেহনসিক প্রতিবেদন পরিবর্তন হতে পারে বলে তিনি আশঙ্কা করছেন। এক মেয়েকে হত্যা ও এক মেয়েকে অপহরণের পর দু’দিন আটকে রেখে ধর্ষণের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির জন্য রোববার রাতে শেষ সম্বল ১০ কাঠা জমি বন্ধক রেখেছেন। গ্রামবাসি তাকে সহযোগিতা করছেন।
মামলার বিবরনে জানা যায়, চলতি বছরের ১৭ জানুয়ারি গভীর রাতে নির্যাতন চালিয়ে খুলনা জেলার পাইকগাছা উপজেলার চাঁদখালি ইউনিয়নের কালুয়া গ্রামের এক ভাটা শ্রমিকের মেয়ে ও একই গ্রামের ব্যবসায়ি মশিয়ার রহমানের স্ত্রীকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। প্রভাব খাটিয়ে বিষয়টি আত্মহত্যার প্রচার দিয়ে ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। পরবর্তীতে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে গত ৪ মে মৃতের বাবা ভাটা শ্রমিক বাদি হয়ে পাইকগাছা থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। বিচারক এজাহারটি মামলা হিসেবে রেকর্ড করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাইকগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেন। ৬ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক তরুন কুমার দত্ত লাশ উত্তোলন ও জেল হাজতে থাকা মশিয়ারকে ৯ মে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানান। আদালত লাশ উত্তোলনের পর ময়না তদন্ত প্রতিবেদন না পাওয়া পর্যন্ত রিমাণ্ড আবেদন শুনানী স্থগিত করেন।
মামলায় চাঁদখালি ইউনিয়নের কালুয়া গ্রামের মশিয়ার রহমান সরদার, মশিয়ারের ভাই মহসিন সরদার, তার বাবা কামরুল ইসলাম সরদার, মা সানোয়ারা বেগম ও তাদের আত্মীয় চাঁদমুখী গ্রামের মোজাম সরদারের ছেলে মান্নান সরদারকে আসামী করা হয়। অপরদিকে স্ত্রীকে হত্যার পর মশিয়ার রহমান শ্বশুর বাড়ির সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখে। গত ১১ এপ্রিল সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গোয়ালডাঙা গ্রামের অসুস্থ শ্বাশুড়িকে দেখতে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে কাটাবুনিয়ার একটি বাড়িতে আটক রেখে দু’দিন আটক রেখে শালিকাকে ধর্ষণ করে মশিয়ার। এ ঘটনায় ধর্ষিতার বাবা বাদি হয়ে মশিয়ারের নাম উল্লেখ করে ২০ এপ্রিল পাইকগাছা থানায় পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন তৎসহ ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের সংশোধিত ২০০৩ এ জিআর-১০৭ নং মামলা দায়ের করেন। ওইদিন পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। এ মামলায় পুলিশ তাকে তিন দিন রিমাণ্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে।
মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পাইকগাছা থানার উপপরিদর্শক তাপস কুমার দত্ত নিহতের বোনকে অপহরণকে ধর্ষণ মামলায় জেল হাজতে থাকা মশিয়ার রহমানকে স্ত্রী হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ৬ মে লাশ উত্তোলন করার অনুমতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম পলাশ কুমার দালাল আবেদন মঞ্জুর করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য খুলনা জেলা প্রশাসককে নির্দেশ দেন। গত ৯ মে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা একই আদালতে মশিয়ার রহমানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাত দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানান। মঙ্গলবার শুনানী শেষে লাশের ময়না তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর রিমাণ্ড শুনানীর জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়। সে অনুযায়ি সোমবার লাশ উত্তোলন শেষে ময়না তদন্তের জন্য খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলে জানা তিনি।