জাতীয়

কয়রায় জনগণের ধাওয়ায় ট্রলার নিয়ে পালালেন এমপি

By Daily Satkhira

June 01, 2021

খুলনা ব্যুরো : খুলনার কয়রা উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া এলাকায় কপোতাক্ষ নদের ভেঙে যাওয়া বাঁধ স্বেচ্ছাশ্রমে মেরামতে করছিলেন স্থানীয় কয়েক শ মানুষ। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একটি ট্রলার নিয়ে সেখানে উপস্থিত হন খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) মো. আক্তারুজ্জামান। বাঁধে কাজ করা উত্তেজিত জনতা এমপিকে দেখেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন। কাঁদা ছুড়ে মারতে থাকেন ট্রলারের দিকে। বাধ্য হয়ে সেখান থেকে ট্রলার নিয়ে চলে যান এমপি আক্তারুজ্জামান।

তবে এমপি মো. আক্তারুজ্জামান দাবি করেছেন, তাকে বহনকারী ট্রলারে কাঁদা ছুড়ে মারা হয়নি। তিনি বলেন, স্থানীয় মানুষ চান টেকসই বেড়িবাঁধ। প্রতিবছর ভাঙনে তারা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হন। ভাঙন এলাকায় কাজ করছিলেন কয়েক হাজার মানুষ। সেখানে গেলে তাকে (সাংসদ) দেখে মানুষ ক্ষোভ প্রকাশ করে টেকসই বেড়িবাঁধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন।

তিনি আরো বলেন, তাদের ওই দাবি যৌক্তিক। বারবার বাঁধ ভাঙে আর বারবার স্বেচ্ছাশ্রমে তাদের কাজ করতে হয়। এ কারণে এমপির ওপর তাদের ক্ষোভও বেশি। পরে ওই এলাকায় নেমে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধের কাজ করা হয়েছে।

বাঁধে কাজ করা কয়েকজন মানুষের কাছ থেকে জানা গেছে, ইয়াসের পর ওই এলাকার বাঁধ ভেঙে মহারাজপুর ও পাশের বাগালী ইউনিয়নের অন্তত ২০টি গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে সাগরের নোনাপানিতে। ইয়াসের প্রভাবে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাসে গত বুধবার ভেঙে যাওয়া ওই বাঁধ এখনো মেরামত করা সম্ভব হয়নি। এ কারণে নিয়মিত জোয়ারভাটা আসা-যাওয়া করছে গ্রামগুলোর মধ্য দিয়ে। ঘূর্ণিঝড় আইলার দীর্ঘ এক যুগ পর আবার এমন দুর্ভোগে পড়েছে। চার দিন ধরে স্বেচ্ছাশ্রমে বাঁধ মেরামত করছেন এলাকার মানুষ।

মঙ্গলবার (১ জুন) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে স্থানীয় এমপি একটি ট্রলারে করে ওই ভাঙা বাঁধের স্থানে যান। যখনই তার ট্রলারটি ঘাটে ভিড়তে যায়, তখনই কাঁদা ছুড়তে শুরু করেন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা মানুষগুলো। বারবার মাইকে ঘোষণা করেও তাদের নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় ১০ মিনিট বৃষ্টির মতো কাঁদা ছুড়ে মারার একপর্যায়ে ট্রলারটি পিছু হটে নদীর অপর পাড়ে চলে যায়। প্রায় আধা ঘণ্টা পর কাজ করতে থাকা মানুষকে শান্ত করা হলে আবার এমপি সেই ভাঙা বাঁধের কাছে যান।

এ সময় এমপি মাইকে স্থায়ী বাঁধ না করতে পারায় নিজের ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে সাধারণ মানুষের সঙ্গে বাঁধ মেরামতের কাজে লেগে পড়েন। কিন্তু সেটিও পছন্দ হয়নি কাজ করতে থাকা সাধারণ মানুষের। এমপি কাজে নামার পর অধিকাংশ মানুষ কাজ ছেড়ে দিয়ে চলে যান।

এমপির ওপর ক্ষোভের কারণ হিসেবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বেড়িবাঁধের কাজ নিয়ন্ত্রণ করেন এমপি। বাঁধের কাজ আসলেই এমপি তার আত্মীয়-স্বজনদের মাধ্যমে কাজ করান। ফলে কাজ ভালো হয় না। একটু ঝড়-বৃষ্টি হলেই বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয় আর ভোগান্তির শিকার হন সাধারণ জনগণ। সে কারণে এমপির ওপর উপজেলার অধিকাংশ মানুষের ক্ষোভ রয়েছে। তার প্রকাশ ঘটেছে আজ।

মহারাজপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর দেয়াড়া ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য বাবুল হোসেন বলেন, এমপি সাহেব আসলেন ট্রলারে করে। তখন স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করতে আসা জনগণ তার (এমপি) আসার প্রয়োজন নেই বলে কাঁদা ছুড়তে থাকেন। একপর্যায়ে পুলিশ ঘটনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় স্থানীয় নেতাকর্মীদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে এমপি বাঁধের কাজ শুরু করতে গেলে অধিকাংশ জনগণ কাজ ছেড়ে চলে যান। তা না হলে আজ বাঁধের কাজ শেষ হয়ে যেত।

সকাল থেকে ভাঙা বাঁধের কাছে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কাজ করছিলেন কয়রা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম মোহসিন রেজা, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম, বর্তমান চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছোট ভাই জি এম আবদুল্লাহ আল মামুন, বর্তমান নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আবদুল্লাহ আল মাহমুদসহ আরো অনেকেই। ঘটনাটি তারা প্রত্যক্ষ করেছেন। মানুষের এমন আচরণে বিস্মিত হয়েছেন তারা।

উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম বলেন, সাধারণ মানুষের সঙ্গেই তারা কাজ করছিলেন, এমন সময় এমপি এসেছেন শুনেই দেখতে পান সাধারণ মানুষ কাঁদা ছুড়ে মারছে। এতে এমপির শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কাঁদা লাগে। চেষ্টা করেও সাধারণ মানুষকে নিবৃত্ত করা যায়নি। প্রায় এক ঘণ্টা পর মানুষ একটু শান্ত হলে এমপি আবার বাঁধের কাছে এসে সাধারণ মানুষকে উদ্দেশ করে বক্তব্য দিয়ে কিছুক্ষণ সেখানে অপেক্ষা করেন। তবে এরপর বাঁধের কাজ আর হয়নি। এ কারণে আজ বাঁধ পুরোপুরি মেরামত করা যায়নি। তবে ওই ঘটনা না ঘটলে বাঁধ পুরোপুরি মেরামত হয়ে যেত।

তবে ঘটনা অস্বীকার করে এমপি মো. আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘তুমি শুধু নেগেটিভ ঘটনাই শোনো আর কোনো পজিটিভ ঘটনা শোনো না। তুমি আমার বাড়ি নিয়ে নিউজ করে দিলে একেবারে। এসব মিথ্যা কথা বলে না।’

আপনি কাজে নামলে এলাকার মানুষ কাজ বাদ দিয়ে চলে যান কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তুমি শুধু খারাপটা শোনো কেন, ভালোটা শোনো না কেন? আমি এখন তাদের সঙ্গে কাজ করছি আর তাদের খাওয়াচ্ছি।’

এ বিষয়ে কয়রা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। তবে কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়েছে। কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ একটু সমস্যা করছিল। পরে এমপি সাহেব বক্তৃতা করলে তারা আবার শান্ত হয়ে যায়। তেমন কোনো বড় ঘটনা না।