নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কম্পানিতে (ওজোপাডিকো) বিদ্যূতের নতুন সংযোগ নিতে ইঞ্জিনিয়ারকে আগে ঘুষ দিতে হয়। না দিলে নতুন সংযোগ পাওয়া যায় না। এই ঘুষের টাকা জনগণের নিকট থেকে নিয়ে ইঞ্জিনিয়ার পর্যন্ত পৌছে দেয়ার জন্য রয়েছে নির্ধারিত ২০ জন কর্মী।
এ অফিস থেকে নতুন সংযোগ গ্রহণের জন্য নির্ধারিত ফি তিন হাজার টাকা হলেও বাস্তবতায় দেখা যায় ছয় হাজার টাকা থেকে দশ হাজার টাকা পর্যন্ত গুনতে হয় সাধারণ জনগণকে। অনিয়মের বিষয়টি জানা সত্বেও অজানা কারণে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অপারগ নির্বাহী প্রকৌশলী।
নতুন মিটার গ্রহণের প্রলোভন দেখিয়ে কথা হয় সেই ঘুষ গ্রহণে নির্ধারিত লাইনম্যান পরিচয়দানকারি এক সেচ্ছাসেবক কর্মীর সঙ্গে। তিনি জানান, ‘বাড়তি টাকা না দিলে আপনার ফাইল কখোনোই পাস হবে না। আবেদন স্যারেদের সামনে পড়ে থাকবে কিন্তু আপনাকে বলবে ফাইল আসেনি, ব্যস্ত আছি, পরে আসেন ইত্যাদি’।
এই টাকার ভাগ কে কে পায় এমন প্রশ্নের জবাবে সেই কর্মী বলেন, ‘প্রথমে ভাগ দিতে হয় ইঞ্জিনিয়ারকে, তারপর ভাগ দিতে হয় সাব অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ারকে তারপর আর.ই. সাহেবকে’।
ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের ভয় দেখালে সেই কর্মী বলেন, আমাদের পেটে লাথি মারবেন না। আমাদের পকেটে থাকে মাত্র ৫শ টাকা। আমাদের অফিস থেকে বাড়তি কোনো বেতন দেওয়া হয় না।
তিনি আরো জানান, তার মত এরকম মোট ২০ জন কর্মী রয়েছে সাতক্ষীরা ওজোপাডিকোতে। স্যারেরা শুধু এদের মাধ্যমেই টাকা গ্রহণ করে।
তবে জনগণের কাছ থেকে ঘুষের টাকা নিয়েও মাসের পর মাস ভোগান্তি দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
সাতক্ষীরা সদরের মাছখোলা গ্রামের বিল্লাল হোসেন সম্প্রতি নির্বাহী প্রকৌশলী বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়ে জানিয়েছেন, লাইনম্যান সহকারী পরিচয়দানকারী এক কর্মচারির কাছে ছয় হাজার তিনশো টাকা দিয়েছেন সাড়ে তিন মাস আগে কিন্ত এখোনো তার সংযোগ দেওয়া হয়নি। তবে অভিযোগ দিতে গেলে তার অভিযোগ অফিসিয়ালি রিসিভ করেননি তিনি। এক সপ্তাহ পেরিয়ে গেলেও অফিস কর্তৃক উক্ত সমস্যার সমাধান করা হয়নি।
সাতক্ষীরা শহরের ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ঘুষ ছাড়া এ অফিস থেকে সেবা পাওয়া যায় না, তাই ঝামেলা না করে ছয় হাজার টাকা ঘুষ দিয়েই নতুন সংযোগ নিয়েছি।
শহরের আতাউর রহমান বলেন, ঘুষ না দিয়ে সংযোগ পেতে চেয়েছিলাম। অসহনীয় ভোগান্তি পেতে হয়েছে। তাছাড়া কর্মচারীদের ব্যবহার অনেক খারাপ। তাই ওয়েবসাইট থেকে নম্বর নিয়ে হেড অফিসে অভিযোগ করেছিলাম।
মুনজিতপুর এলাকার মোর্শেদুল ইসলাম জানান, এই অফিসে স্বাভাবিকভাবে সেবা পাওয়া যায় না। নানা অযুহাতে ভোগাতে থাকে কর্মকর্তারা। আমি আবেদনের দেড় মাস পর নানান চড়াই উৎরাই পেরিয়ে সংযোগ পেয়েছি। একজন সরকারি কর্মচারী হয়েও আমাকে এতো বেগ পেতে হলো, তাহলে সাধারণ জনগণ কেমন সেবা পায় সেটা অনুমেয়।
এ ব্যাপারে নির্বাহী পরিচালক জিয়াউল হক জানান, ‘আমরা ঘুষ গ্রহণ করি না। অনলাইনে নতুন সংযোগের আবেদন গ্রহণ করি।’ তবে, এ অফিসের সুবিধাভোগী নির্ধারিত ২০ জনের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওরা আমার অফিসের কর্মচারী না।
প্রকৌশলীদের বরাত দিয়ে কেউ ঘুষ গ্রহণ করলে তিনি ব্যবস্থা নিবেন কিনা জানতে চাইলে তিনি ব্যাস্ততার কথা বলে ফোনের লাইন কেটে দেন।
সচেতন জনগণের দাবি, এসব কর্মকর্তাদের জনগণের মুখোমুখি দাঁড়ানোর সাহস নাই। কারণ এরা জানে এরা অপরাধী। এসব কর্মকর্তাদের শাস্তির আওতায় না আনলে সরকারের উন্নয়ন জনমনে জায়গা তৈরী করতে পারবে না।