নিজস্ব প্রতিনিধি : প্রান্তিক চাষী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পেটে লাথি মেরে শ্যামনগরের নকিপুর হাট-বাজারের জায়গা বরাদ্দের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ব্যবসায়ীরা। এঘটনায় স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, ১৯৯৭ সালে তৎকালিন চেয়ারম্যান বিশ^নাথ বাবু প্রায় ৫ বিঘা সম্পত্তি জনৈক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়ে হাটের নামে রেজিস্ট্রি করে নকিপুর হাট বাজার প্রতিষ্ঠা করেন।
সপ্তাহের প্রতি শনি ও মঙ্গলবার সেখানে বড় ধরনের হাট বসে। হাটে, কাঁচা তরকারি থেকে শুরু করে, গরু-ছাগল, সাইকেল, বাঁশসহ সকল ধরনের মালামাল ক্রয়-বিক্রয় হয়। বিশেষ করে শ্যামনগর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলসহ পাশ^বর্তী উপজেলা, কালিগঞ্জ ও নলতার প্রান্তিক চাষীরা নিজেকে সবজিসহ উৎপাদিত পন্য উক্ত হাটে নিয়ে এসে মাটিতে বসেই ক্রয়-বিক্রয় করে আসছেন।
প্রতি হাটে ২০০ থেকে ২৫০ জন ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে আসেন। এছাড়া প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ জন ব্যবসায়ী কাঁচামাল বিক্রয় করেন।
অথচ একটি স্বার্থন্বেষী মহল সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসনকে ভুল বুঝিয়ে উক্ত হাট-বাজারটি নিজেদের নামে ডিসিআর নেওয়ার পায়তারা চালাচ্ছেন। ইতোমধ্যে দোকান নির্মাণের উদ্দেশ্যে মাপজরিপও করা হয়েছে। অথচ হাট-বাজারের সম্পত্তি ক তফশীল ভুক্ত খাস সম্পত্তি না হওয়া স্বত্ত্বেও কিভাবে জেলা প্রশাসন ইজারা দিবেন। বিধবা সেলিনা বেগম বলেন, স্বামীকে হারিয়ে এই হাটের ছোট্টএকটি জায়গায় সবজি বিক্রয় করে জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। শুনেছি এখানে নাকি দোকান নির্মাণ হবে। তাহলে আমরা কোথায় যাবো। এখানে দোকান নির্মাণ হলে আমাদের মত মানুষের পেটে লাথি মারা হবে।
ব্যবসায়ী মঙ্গল মন্ডল বলেন, শ্যামনগর উপজেলা সদরের মধ্যে এধরনের বড় সম্পত্তি আর নেই। আমরা দীর্ঘদিন এখানে ব্যবসা পরিচালনা করে আসছি। কিন্তু একটি মহল বড় ধরনের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে এটির ডিসিআর নিয়ে দোকান নির্মাণের পায়তারা চালাচ্ছেন। এ পায়তারা বন্ধ করা না হলে আমাদের পেটে লাথি মারার পাশাপাশি প্রান্তিক চাষী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ক্ষতি গ্রস্থ হবে।
এবিষয়ে নকিপুর হাট-বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ আহমেদ বলেন, শ্যামনগর সদরে এধরনের বড় আর কোন জায়গা নেই। এটি বরাদ্দ দিলে ব্যবসায়ীরা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, সরকারের সম্পত্তি কেন ফাঁকা পড়ে থাকবে। সরকারি নীতিমালা অনুযায়ী যদি নকিপুর হাট-বাজার ইজারা দেওয়ার মধ্যে পড়ে তাহলে দেওয়া হবে। নীতিমালার মধ্যে না পড়লে দেওয়া হবে না। ইজারা দিলে সরকার রাজস্ব পাবে। সেখানের কিছু মানুষের দাবি জায়গাটি ফাঁকা পড়ে থাক। যদিও শুনেছি কিছু মানুষ সেখানে ঘর নির্মাণ করতে গিয়েছিল। আমি বন্ধ করে দিয়েছি। ভালোভাবে খোজ নিয়ে দেখে তারপর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে নকিপুর হাট-বাজারের জায়গা বরাদ্দ দিয়ে স্থায়ী ঘর নির্মাণ বন্ধের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর হাট-বাজার চত্বরে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করে। নকিপুর হাট-বাজারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা জাসদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ হারুন উর রশিদের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন, হাট-বাজারের ব্যবসায়ী মঙ্গল প্রসাদ মন্ডল, গোপাল চন্দ্র মন্ডল, শেখ মুজিবুর রহমান, আব্দুর রহমানসহ হাট-বাজারের সাধারণ ব্যবসায়ীবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।
০৩.০৬.২০২১