জাতীয়

দুর্নীতির চেয়ে তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে সরকার তৎপর : টিআইবি

By Daily Satkhira

June 09, 2021

অনলাইন ডেস্ক : সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণের চেয়ে শত গুণ বেশি তৎপর তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে-এমন অভিযোগ করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করতেই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় করোনার ভ্যাকসিন আমদানি করা হয়েছে।

‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা : কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন ইফতেখারুজ্জামান।

ভারতে উৎপাদিত অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দিয়ে দেশে করোনার গণটিকাদান কর্মসূচি শুরু হয় গত ফেব্রুয়ারি। তবে সংক্রমণের ব্যাপকতায় মার্চেই টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত। এতে টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে দেশ। ফলে বিকল্প উৎস থেকে টিকা পাওয়ার চেষ্টা করছে সরকার। ‘করোনাভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক টিআইবির গবেষণা প্রতিবেদন উঠে আসে তৃতীয় পক্ষকে লাভবান করতেই অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় টিকা আমদানি করা হয়েছে। সংকট মোকাবিলা ও সুশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে উত্তরণের লক্ষে ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি।

দেশের আট বিভাগের ৪৩ জেলায় করা জরিপে উঠে আসা তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, টিকা কিনতে গিয়ে সরকারি ক্রয়বিধির ব্যত্যয় ঘটানো হয়েছে। এখানে তৃতীয় পক্ষকে অন্তর্ভুক্ত করে ২৩১ কোটি টাকা মুনাফা দেওয়া হয়েছে যা দিয়ে ৬৮ লাখ ডোজ টিকা কেনা যেত। দুর্নীতির চেয়ে নিয়ন্ত্রণের চেয়ে তথ্য নিয়ন্ত্রণে ছিল বেশি তৎপরতা।

৮০ শতাংশ মানুষকে কীভাবে, কোন উৎস থেকে টিকা দেওয়া হবে, তার কোনো কৌশলগত দিকনির্দেশনা নেই মন্তব্য করে বক্তারা বলেন এ নিয়ে কোনো পথরেখা এখনো তুলে ধরেনি সরকার।

টিআইবির আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের পরিচালক মনজুর-ই-আলমের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টাÑনির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান ও সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম। গবেষণা প্রতিবেদনটি উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের রিসার্চ ফেলো মো. জুলকারনাইন।

টিআইবির গবেষণার তথ্য অনুযায়ী, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার এখনো ৩০টি জেলার মধ্যে সীমিত এবং অধিকাংশ পরীক্ষাগার বেসরকারি। বিদ্যমান আরটি-পিসিআর পরীক্ষায় কিছু নতুন স্ট্রেইন শনাক্তে সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। নমুনা পরীক্ষার কিটের দাম তিনগুণ হ্রাস পেলেও বেসরকারি পরীক্ষাগারের জন্য নির্ধারিত ফি হ্রাস করা হয়নি। এখনো পরীক্ষার প্রতিবেদন পেতে কোথাও কোথাও চার থেকে পাঁচ দিন অপেক্ষা করতে হয়। পাশাপাশি চিকিৎসা ব্যবস্থা সম্প্রসারণ উদ্যোগে এখনো ঘাটতি বিদ্যমান। সংক্রমণের এক বছর তিনমাস অতিবাহিত হলেও পরিকল্পনা অনুযায়ী আইসিইউ, ভেন্টিলেটর ইত্যাদি চিকিৎসা সুবিধার সম্প্রসারণ করা হয়নি। বাজেট এবং যন্ত্রপাতি থাকা সত্ত্বেও সব জেলায় ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুতের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হয়নি। অনেক যন্ত্রপাতি ব্যবহার না করে ফেলে রাখা হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সংকটের কারণে বেসরকারি হাসপাতালে ব্যয়বহুল চিকিৎসা গ্রহণে বাধ্য হয়েছে সাধারণ জনগণ। ফলে একজন কোভিড-১৯ রোগীর গড় খরচ হচ্ছে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পরিকল্পনা অনুযায়ী ১৩ দশমিক ৮ কোটি মানুষকে (জনসংখ্যার ৮০ শতাংশ) টিকার আওতায় নিয়ে আসা ও সে অনুযায়ী টিকা সংগ্রহের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনায় ঘাটতি রয়েছে। টিকার বাফার স্টক সংরক্ষণে দূরদর্শিতার ঘাটতির কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ১৩ লাখের বেশি টিকাগ্রহীতার দ্বিতীয় ডোজ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। আবার অনলাইনভিত্তিক নিবন্ধন হওয়ার ফলে ৭৪ দশমিক ৪ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে অন্যের সহায়তায় নিবন্ধন নিতে হয়েছে। এ ছাড়া নিবন্ধনের ক্ষেত্রে ৪২ দশমিক ৬ শতাংশ টিকাগ্রহীতা বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন যাদের প্রায় ৭৮ শতাংশকে নিবন্ধন করতে ৫ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত ব্যয় করতে হয়েছে। অগ্রাধিকার তালিকায় থাকা সত্ত্বেও কিছু পেশা/জনগোষ্ঠীর মানুষের বয়স ৪০ বছর না হওয়ার কারণে তারা নিবন্ধন করতে পারেনি। আবার পেশা/জনগোষ্ঠী যাচাইয়ের সুযোগ না থাকায় অগ্রাধিকার তালিকার বাইরে থেকে অনেকে টিকা গ্রহণ করেছে বলে জানা যায়।

গবেষণায় দেখা যায়, যথাযথভাবে এলাকাভিত্তিক টিকার চাহিদা যাচাই না করার ফলে সরবরাহ না থাকায় কোনো এলাকায় আকস্মিক সংকট এবং কোনো এলাকায় টিকা উদ্বৃত্ত থাকা ও ফেরত দেওয়ার ঘটনা লক্ষ করা যায়। যথাযথভাবে চাহিদা যাচাইয়ের মাধ্যমে বিদেশগামী কর্মীদের যথাসময়ে টিকার আওতায় আনা হয়নি এবং টিকা সনদ না থাকায় প্রত্যেকের গড়ে ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা অতিরিক্ত খরচ বহন করতে হয়। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে স্বল্প আয়ের ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্তির হার খুবই কম। টিকায় অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে নারীদের হারও কম। প্রচারে ঘাটতি, প্রাতিষ্ঠানিকভাবে নিবন্ধনের ব্যবস্থা না করায় অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মরত সব কর্মীকে টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। টিকাদান কেন্দ্রেও নানা অব্যবস্থাপনা দেখা গেছে। নির্ধারিত কেন্দ্রে টিকা নিতে গিয়ে জরিপে অন্তর্ভুক্ত ২৭ দশমিক ২ শতাংশ টিকাগ্রহীতা নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হয়েছেন। ৫০ দশমিক ২ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে উপকারিতা ও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবহিত করা হয়নি এবং ৫৬ দশমিক ২ শতাংশ টিকাগ্রহীতাকে টিকা দেওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পর্যবেক্ষণ ও রেকর্ড করা হয়নি। টিকা কেন্দ্রে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা হয়নি। ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থাই নেই। টিকাগ্রহীতার ৬৫ দশমিক ৮ শতাংশ কোনো অভিযোগ করতে পারেনি এবং ২২ দশমিক ১ শতাংশ কীভাবে অভিযোগ জানাতে হয় তা জানে না বলে জানিয়েছেন।

গবেষণায় দেখা যায়, টিকা সংগ্রহ এবং ক্রয়ের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা, সমন্বয়হীনতা ও ক্রয় চুক্তিতে স্বচ্ছতার ঘাটতি বিদ্যমান। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাপে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও একটি উৎস ছাড়া বিকল্প উৎস অনুসন্ধানে উদ্যোগের ঘাটতি ছিল। জাতীয় কমিটি এবং বিএমআরসি একটি চীনা প্রতিষ্ঠানের টিকা ট্রায়ালের অনুমোদন দিলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে যথাযথ সাড়া না দেওয়ায় ট্রায়াল প্রচেষ্টা বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়া দেশীয় প্রতিষ্ঠানের উদ্ভাবিত টিকা ট্রায়ালের অনুমোদনেও দীর্ঘসূত্রতা লক্ষ করা যায়।

গবেষণায় আরও দেখা যায়, বিভিন্ন হাসপাতালের কোভিড মোকাবিলায় বরাদ্দ ব্যয়ে দুর্নীতি অব্যাহত ছিল। যেমন পাঁচটি হাসপাতালে ক্রয়, শ্রমিক নিয়োগ ও কোয়ারেন্টিন বাবদ ৬২ দশমিক ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ৫ কোটি টাকার দুর্নীতি; ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করে এক লাখ কিট ক্রয়; বিধি লঙ্ঘন করে অনভিজ্ঞ প্রতিষ্ঠানকে ক্রয়াদেশ প্রদানের ঘটনা দেখা গেছে। করোনাকালে কারিগরি জনবলের ঘাটতি মেটাতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়োগে জনপ্রতি ১৫-২০ লাখ টাকা ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে। উপযোগিতা যাচাই না করে হাসপাতাল নির্মাণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার না করে হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়ায় ৩১ কোটি টাকার অপচয় হয়েছে। স্বাস্থ্যখাতের ক্রয়ে সংঘটিত দুর্নীতির কারণে বারবার পরিচালক পরিবর্তন, ধীরগতির তদন্ত কার্যক্রমের প্রভাবে ‘কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ার্ডনেস’ প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে এক বছরে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে যেমন শৈথিল্য রয়েছে, তেমনি সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত ও বিচারেও ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। দুর্নীতিতে জড়িত কিছু ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।

গবেষণায় দেখা যায়, কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে এখনো চ্যালেঞ্জ বিদ্যমান। সরকার ঘোষিত মোট ২৩টি প্রণোদনা প্যাকেজে বরাদ্দকৃত ১ লাখ ২৮ হাজার ৩ শত ৩ কোটি টাকার প্রায় ৩৫ শতাংশ বিতরণ করা হয়নি। বৃহৎ ও রপ্তানিমুখী শিল্প প্রণোদনার অধিকাংশ বিতরণ হলেও কৃষি, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প এবং নিম্নআয়ের জনগোষ্ঠীর প্রণোদনা বিতরণে ধীরগতি লক্ষ করা গেছে। এ ছাড়া করোনাকালীন তথ্য প্রকাশের কারণে গণমাধ্যমকর্মীদের হয়রানি, নির্যাতন ও মামলার শিকার হওয়া অব্যাহত ছিল। অতিমারী নিয়ে লেখালেখির কারণে ২০২০ সালে ৮৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে। সম্প্রতি স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে প্রতিবেদন করা সাংবাদিক স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে তথ্য সংগ্রহের সময় নির্যাতনের শিকার ও আটক হন, তার বিরুদ্ধে অযৌক্তিকভাবে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯২৩-এ মামলা দায়ের করে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘করোনা সংক্রমণের শুরু থেকে বিগত দেড় বছর যাবৎ স্বাস্থ্যখাতে যে ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি ছিল, তা এখনো অব্যাহত আছে। সরকারি ক্রয়বিধি লঙ্ঘন করা হয়েছে, জনবল নিয়োগে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের তথ্য প্রকাশিত হয়েছে, উপযোগিতা নিশ্চিত না করে হাসপাতাল সাময়িকভাবে প্রস্তুত এবং তা বন্ধ করার ফলে সরকারের কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অন্যদিকে তথ্য প্রকাশের ক্ষেত্রেও প্রতিবন্ধকতা অব্যাহত ছিল, তথ্য নিয়ন্ত্রণের প্রবণতা আরও ঘণীভূত হয়েছে। সরকার দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে যতখানি তৎপর তার চেয়ে দুর্নীতির তথ্য প্রকাশ নিয়ন্ত্রণে শতগুণে বেশি তৎপর ছিল। যা আত্মঘাতী বিষয়, এ থেকে সরকারকে সরে আসতে হবে।’

চলমান টিকাদান কার্যক্রমের সমালোচনা করে ড. জামান বলেন, ‘পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা এবং বাস্তবায়নে সরকারের সমন্বিত ও সুনির্দিষ্ট পথরেখার অভাবে টিকাদান কার্যক্রমেও ব্যপক ঘাটতি বিদ্যমান। টিকা নিবন্ধন ও ব্যবস্থাপনা সুবিধাবঞ্চিত মানুষের প্রতিকূলে হওয়ায় এলাকা, শ্রেণি, লিঙ্গ ও পেশাভিত্তিক বৈষম্য তৈরি হয়েছে; ফলশ্রুতিতে ঝুঁকিপূর্ণ ও সুবিধাবঞ্চিত মানুষের মধ্যে অনেকেই টিকার আওতার বাইরে রয়ে গেছে। যা সার্বজনীন টিকাদান কর্মসূচির অঙ্গীকারকে ঝুঁকিপূর্ণ করেছে। তাই অবিলম্বে সমন্বিত টিকাদান পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্ভাব্য সমস্ত উৎস থেকে টিকা সংগ্রহ ও তা প্রদানের সুনির্দিষ্ট পথরেখা প্রস্তুত করতে হবে।’

সীমান্তবর্তী এলাকায় নতুন ধরনের করোনা সংক্রমণ বৃদ্ধির সময় ইউপি নির্বাচন আয়োজন বিষয়ে নির্বাচন কমিশনে উদ্যোগ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন বিভিন্ন সময় জনগণের উদ্বেগের বিষয়গুলো বিবেচনায় না নিয়ে জনস্বার্থবিরোধী বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করেই যাচ্ছে। এখন নির্বাচনের সময় না। তাই আমরা আশা করব, কমিশন অবিলম্বে এ ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবে। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষেত্রে সবার আগে মানুষের কল্যাণ বিবেচেনা করবে এবং এই এখতিয়ার কমিশনের আছে।’

গবেষণা প্রতিবেদনে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সুশাসনের ঘাটতি নিরসনে টিকা কার্যক্রম সম্পর্কিত ১১টি এবং অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত ৮টিসহ মোট ১৯ দফা সুপারিশ প্রদান করে টিআইবি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: দেশের ৮০ শতাংশ জনসংখ্যাকে কীভাবে, কত সময়ের মধ্যে টিকার আওতায় আনা হবে তার সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনা করা; উন্মুক্ত প্রতিযোগিতার মাধ্যমে সক্ষমতাসম্পন্ন কোম্পানিগুলোকে নিজ উদ্যোগে স্থানীয়ভাবে টিকা উৎপাদনের সুযোগ প্রদান করা; সরকারি ক্রয়বিধি অনুসরণ করে সরকারি-বেসরকারি খাতের সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সরাসরি আমদানির অনুমতি প্রদান করা; রাষ্ট্রীয় গোপন তথ্য ব্যতীত টিকা ক্রয় চুক্তি সম্পর্কিত সব তথ্য সবার জন্য উন্মুক্ত করা; টিকা কেন্দ্রে অভিযোগ নিরসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করা এবং অভিযোগের ভিত্তিতে অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা। অন্যান্য কার্যক্রম সম্পর্কিত সুপারিশের মধ্যে কোভিড-১৯ মোকাবিলা কার্যক্রমে সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির ক্ষেত্রে দ্রুততার সঙ্গে তদন্ত ও সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা; স্টোরে ফেলে রাখা আইসিইউ, ভেন্টিলেটরসহ অন্যান্য যন্ত্রপাতি অতি দ্রুততার সঙ্গে ব্যবহারযোগ্য করা; সব জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার স্থাপন করা; কোভিড-১৯ চিকিৎসার খরচ সর্বসাধারণের আয়ত্তের মধ্যে রাখতে চিকিৎসা ফির সীমা নির্ধারণ করা; এবং স্বল্প আয়ের জনগোষ্ঠীর বিকল্প জীবন-জীবিকার সংস্থান করে সংক্রমণ পরিস্থিতি বিবেচনায় এলাকাভিত্তিক ‘লকডাউন’ দেওয়া এবং সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যাসহ নিষেধাজ্ঞার আওতা নির্ধারণ করা উল্লেখযোগ্য।