অর্থনীতি

প্রতি ঘণ্টায় ছাপা হয় কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প

By Daily Satkhira

June 26, 2021

দেশের খবর : দুই বছর আগে রাজধানীর মাতুয়াইল এলাকায় উন্নতমানের ছাপাখানা বসিয়ে গোপনে জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি শুরু করে একটি চক্র। প্রতি ঘণ্টায় তারা প্রায় কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প ছাপতো। পরে এগুলো নিজস্ব এজেন্টের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হতো সারাদেশে। যথাযথ নজরদারির অভাবে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানেও বিক্রি হত এসব জাল স্ট্যাম্প। দেখতে হুবহু আসলের মতো হওয়ায় বোঝারও কোনো উপায় ছিল না। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারিয়ে আসছিল সরকার।

জাল স্ট্যাম্প তৈরিতে জড়িত একটি বড় চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি)পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন, আবু ইউসুফ ওরফে পারভেজ ওরফে রানা, আতিয়ার রহমান সবুজ, নাসির উদ্দিন ও নুরুল ইসলাম ওরফে সোহেল। বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবার সকাল পর্যন্ত ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় এ অভিযান চালায় ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের ওয়েব বেইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০ কোটি দুই লাখ ২৪ হাজার টাকা মূল্যমানের (১৩ লাখ ৪০ হাজার পিস) জাল স্ট্যাম্প এবং এক লাখ ৯৪ হাজার ৮০০ টাকার (১৯ হাজার ৪৮০টি) কোর্ট ফি জব্দ করা হয়। সেইসঙ্গে পাওয়া গেছে শতাধিক কোটি টাকার জাল স্ট্যাম্প তৈরির কাগজও।

রাজধানীর মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ডিবি) একেএম হাফিজ আক্তার বলেন, চক্রটি ২০১৭ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত কম্পিউটার ও রঙিন প্রিন্টার ব্যবহার করে সীমিত পরিসরে জাল স্ট্যাম্প ছাপিয়ে আসছিল। এরপর দ্রুত বড়লোক হওয়ার আশায় তারা মাতুয়াইলে জার্মানির ছাপাখানা বসিয়ে বড় পরিসরে জালিয়াতি শুরু করে। নজরদারির দুর্বলতার কারণেই তারা এ ধরনের কাজ চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়। প্রথম পর্যায়ে তারা কোনো ছাপাখানায় বিভিন্ন মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প ছাপায়। দ্বিতীয় পর্যায়ে ছাপানো স্ট্যাম্পগুলো চক্রের সদস্যদের মাধ্যমে পাইকারি বিক্রেতা ভেন্ডারদের কাছে পৌঁছানো হয়। তৃতীয় পর্যায়ে তা যায় সারাদেশের খুচরা বিক্রেতাদের কাছে। চক্রটি বিভিন্ন গার্মেন্টস, ফ্যাক্টরি, সরকারি-বেসরকারি দপ্তর, বীমা ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, ডাকঘর, আদালত, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও হাসপাতালে এসব জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি বিক্রি করে আসছিল। এসব স্ট্যাম্প অফিস টু অফিস নগদ টাকায় বিক্রি ও সরবরাহ করা হত। সাধারণত কেউ স্ট্যাম্পের দিকে বিশেষ খেয়াল করেন না। কোনো সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানেরও বিশেষ নজরদারি নেই।

ডিবির এ শীর্ষ কর্মকর্তা জানান, জাল স্ট্যাম্প তৈরির ধাপগুলো এতটাই নিখুঁত ছিল, খালি চোখে তা ধরার কোনো সুযোগই ছিল না। কাগজগুলো হুবহু একই রকম। আসল স্ট্যাম্প আল্ট্রাভায়োলেট রশ্মির মেশিনের নিচে ধরলে কালো রেখা দৃশ্যমান হয়। জাল স্ট্যাম্পের ক্ষেত্রে তা হয় না। এছাড়া আসল স্ট্যাম্পের ‘জিওবি’ লেখাটি চকচক করে, জাল স্ট্যাম্পের করে না। নকল এড়াতে স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ডাকঘর, ব্যাংক ও রেজিস্টার্ড কোনো স্থান থেকে কেনার পরামর্শ দেন তিনি।

ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এ ঘটনায় এখনও জিপিও বা পোস্ট অফিসের কারও সম্পৃক্ততার বিষয়টি পাওয়া যায়নি। তবে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদে এ চক্রের সঙ্গে আরও কারা জড়িত, সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাবে। তারা জাল স্ট্যাম্প- কোর্ট ফি বানানোর কাগজ কোথায় থেকে সংগ্রহ করত, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গ্রেপ্তার চারজনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে।

না জেনে জাল স্ট্যাম্প ব্যবহারকারীরা কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন কি-না? জানতে চাইলে ডিবির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, এখনই এ ব্যাপারে বলা যাচ্ছে না।

ডিবি জানায়, রাজধানীর মাতুয়াইল দক্ষিণপাড়ার ৬৮/৩ নম্বর ‘জননী হাউজে’ জনৈক শাহ আলমের বাসার নিচতলায় জাল স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি তৈরির ছাপাখানা বসিয়েছিল জালিয়াতি চক্র। সেই ছাপাখানাটি সিলগালা করা হয়েছে। চক্রের মূল হোতা আবু ইউসুফসহ গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছে।

তাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্প ও কোর্ট ফি ছাড়াও আরও পাওয়া গেছে, জাল স্ট্যাম্প বিক্রির নগদ তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা, ১১৪ গ্রাম ওজনের স্বর্ণালঙ্কার, আটটি মোবাইল ফোন, একটি পেনড্রাইভ, ডাক বিভাগ ও বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ১১টি নকল সিল, দু’টি স্ট্যাম্প পরীক্ষার ইলেকট্রিক মেশিন, ডাক বিভাগের রশিদের কপি ৩০০ পাতা, দুইটি কাটিং মেশিন, একটি ডাই কাটিং মেশিন, একটি পোলার পেপার কাটিং মেশিন, তিনটি মাল্টি ফাংশন ম্যাগনিফায়িং মানি ডিটেক্টর, এক কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকার ১৮টি চেকের পাতা ও আসামি আবু ইউসুফ রানার নামের তিনটি ব্যাংকের চেকবই।