অনলাইন ডেস্ক : আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গৃহহীনদের জমি ও ঘর উপহার দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে চলতি বছরের জানুয়ারি ও জুনে দুই দফায় প্রায় ১ লাখ ২৩ হাজার ঘর উপহার দেওয়া হয়। পাকা ঘরে আনন্দেই বাস করছিলেন অনেকে। কিন্তু বছর না ঘুরতেই হাসি মলিন হতে শুরু করে। কয়েকমাস না যেতেই ভেঙে পড়ে ভিটি, ফাটল ধরে মেঝে ও দেয়ালে। এমন খবর পেয়ে ক্ষুব্ধ স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। ঘর নির্মাণে অনিয়মে জড়িতদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। যেসব জেলায় অনিয়ম-দুর্নীতির সত্যতা পাওয়া গেছে তার মধ্যে সাতক্ষীরাও রয়েছে।
চলতি বর্ষা মৌসুমে ২২টি জেলার ৩৬টি উপজেলায় হস্তান্তর করা ঘর নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুর্ভোগের নানা খবর উঠে আসে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নজরেও আসে বিষয়টি। যার সূত্র ধরে প্রাথমিক তথ্য নিয়ে বগুড়া, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, হবিগঞ্জ, সিলেটসহ কয়েকটি জেলায় ঘর পাওয়া মানুষগুলোর দুর্ভোগের সত্যতা পেয়েছেন আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের কর্মকর্তারা।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, এ দুর্ভোগের নেপথ্যে স্থানীয় প্রশাসনের অবহেলার কথা জেনে হতবাক ও ক্ষুব্ধ হয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। অনিয়মে কারা জড়িত জানতে চেয়েছেন। দোষীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশও দিয়েছেন তিনি।
ইতোমধ্যে অনিয়মে যুক্ত অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া শুরু হয়েছে। প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান, ঘরগুলো নির্মাণের আগে স্থানীয় প্রশাসনকে নীতিমালা হস্তান্তর করা হয়েছিল। সেটা অনুসরণ করা হলে এমন অভিযোগ আসতো না।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস বলেন, ‘কিছু অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। দায়িত্বপ্রাপ্ত স্থানীয় প্রশাসনের পাঁচ কর্মকর্তাকে ইতোমধ্যে ওএসডি করা হয়েছে।’
আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই প্রজেক্টে ঘর পাওয়া মানুষগুলোর দুর্ভোগ আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। বেশকিছু উপজেলায় অনিয়ম, অবহেলার প্রমাণও এসেছে। অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘জেলা প্রশাসককে (ডিসি) প্রধান করে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। অনিয়মের সত্যতা পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের পদোন্নতি ও ইনক্রিমেন্ট বাতিল করা হবে। অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় চাকরি থেকে অব্যাহতিও দেওয়া হবে।’
মাহাবুবুর রহমান আরও বলেন, প্রকল্পের লোকবল কম বলে তদন্তে ডিসিকে প্রধান করা হয়েছে। তবে আমরাও কিছু কিছু জায়গায় তদন্ত করবো।
তিনি বলেন, ‘নীতিমালায় স্পষ্ট বলা আছে ঘরের আকার কত হবে, কী ধরনের জমিতে নির্মাণ করা যাবে এবং ইট, বালি, রড, সিমেন্ট কতটুকু লাগবে ও কী পরিমাণ ব্যয় হবে। নীতিমালা নিয়ে নয়-ছয় হয়েছে কি-না দেখা হবে। ঘরে কেন ফাটল ধরলো বা ভেঙে পড়লো তা জানতে চাওয়া হবে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে।’
স্থানীয়ভাবে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে ৫ সদস্যের কমিটি করা হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) প্রধান করে কমিটিতে রাখা হয়েছে টিআইও সদস্য সচিব, সদস্য এসিল্যান্ড (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান। প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘কমিটির গাফিলতি ছিল কি-না সেটাও তদন্ত করা হবে। এখানে শুধু ইউএনও-ই অভিযুক্ত হবেন না।’
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঘর নির্মাণে সম্পৃক্ত সাবেক ও বর্তমান যে পাঁচ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে ওএসডি করা হয়েছে, তাদের দুজনের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যে প্রশাসনিক ব্যবস্থাও শুরু হয়েছে। একজনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন মামলা দায়ের করেছে। অন্যদেরও খোঁজ-খবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে প্রশাসনিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নীতিমালায় যা আছে :
অনুচ্ছেদ-৬ অনুযায়ী ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য পাকা/সেমিপাকা ব্যারাক নির্মাণ এবং যার ১-১০ শতাংশ জমির সংস্থান আছে, কিন্তু ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ করা হবে।
এ পুনর্বাসনে সরকারি খাস জমি ব্যবহার করা হবে।
অনুচ্ছেদ ৫ (ক) ও (খ)-এ বর্ণিত উপকারভোগী ছাড়া অন্য কেউ তালিকাভুক্ত হলে আশ্রয়ণ সম্পর্কিত জেলা টাস্কফোর্স যাচাই-বাছাই করে সংশোধিত তালিকা অনুমোদনের জন্য প্রকল্প কার্যালয়ে পাঠাবে।
নীতিমালায় আরও বলা আছে, অনুমোদিত নকশা ও প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণকাজ শেষ করতে হবে। কাজ শেষে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে সাত দিনের মধ্যে সচিত্র সমাপ্তি প্রতিবেদন জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রকল্প পরিচালক, আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় বরাবর পাঠাবে।
নির্মাণকাজে নিয়োজিত শ্রমিক হিসেবে উপকারভোগী পরিবারের লোকজনকে অগ্রাধিকার দেওয়া যাবে।
১৯৮৮ সালের বন্যার বিপৎসীমার উপর পর্যন্ত মাটি ভরাট করে অনুমোদিত নকশা মোতাবেক ভিটি প্রস্তুত নিশ্চিত করতে হবে। তথ্যসূত্র: বাংলাট্রিবিউন