খুলনা

খুলনা বিভাগে এক দিনে সর্বোচ্চ ৭১ জনের মৃত্যু, হাসপাতালে মেঝেতে রোগী

By Daily Satkhira

July 10, 2021

খুলনা ডেস্ক : খুলনা মেডিক্যাল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের করোনা ডেডিকেটেড ইউনিটের সামনে সুনসান নীরবতা। সামনে সারি করে দাঁড়ানো অ্যাম্বুল্যান্স, আছে একটি লাশবাহী গাড়িও। সারিবদ্ধভাবে রাখা মোটরসাইকেল। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের কয়েকজন স্বজনের আনাগোনা। গতকাল শুক্রবার বিকেল ৩টার দিকের এই চিত্র দেখে বোঝার উপায় নেই যে এখানে গেল ২৪ ঘণ্টায় করোনাভাইরাস কেড়ে নিয়েছে ১০টি প্রাণ।

খুমেক হাসপাতালটি ১৩০ শয্যার হলেও ভর্তি রোগীর সংখ্যা ২০০ ছুঁই ছুঁই। ফলে অনেককেই বাধ্য হয়ে মেঝেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। আবার ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতাল থেকেও মুমূর্ষু অবস্থায় এখানে রোগী পাঠানো হচ্ছে।

শুধু এই হাসপাতালেই নয়, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় খুলনার চারটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরো ২৬ জন রোগীর মৃত্যু হয়েছে। বিভাগের পরিসংখ্যানে সেই সংখ্যা ৭১, যা বিগত সময়ের মৃতের সংখ্যায় আরেক নতুন রেকর্ড।

করোনা হাসপাতালের সামনে মোবাইল ফোনে চিকিৎসাধীন স্বজনের বর্তমান অবস্থার কথা কাউকে জানাচ্ছিলেন এক যুবক। কথা শেষ করে তিনি বলেন, বাইরের অবস্থা আর হাসপাতালের ভেতরের অবস্থা এক নয়। এই হাসপাতালে শয্যা মাত্র ১৩০টি, কিন্তু রোগী প্রায় ২০০।

মানুষের কষ্টের শেষ নেই। অনেকেই বাধ্য হয়ে মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছে। রাতে আবার চিকিৎসাসেবা দেওয়ার লোকের সংকট। তাই রাত এলেই মনে বাড়তি ভয় ঢুকে যায়।

অন্য এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘ভাই, সাংবাদিকদের কাছে কিছু বলা যাবে না। হাসপাতালের ভেতরের কেউ তা টের পেলে রোগীর চিকিৎসা হবে না। তবে এখানে আর চিকিৎসা নেই। লোকসংকট, রোগীর চাপে ডাক্তার-নার্স কাহিল। প্রতিদিন রাতে মৃত্যুর মিছিল শুরু হয়। তখন তুলনামূলক একটু ভালো অবস্থায় থাকা রোগীরা আরো অসুস্থ হয়ে পড়েন। আল্লাহই জানেন, কবে এই অবস্থা থেকে মুক্তি মিলবে।’

করোনা ইউনিটের মুখপাত্র ও খুমেক হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, গেল ২৪ ঘণ্টায় এখানে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্তমানে এখানে ১৮৫ জন ভর্তি রয়েছে। তাদের মধ্যে রেড জোনে ১২৬, ইয়েলো জোনে ৩১, এইচডিইউয়ে ১৯ এবং আইসিইউয়ে ১৯ জন। তাদের মধ্যে নতুন ভর্তি রোগী ৪৬ জন।

এদিকে ২৪ ঘণ্টায় খুলনা ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে পাঁচজন, আবু নাসের হাসপাতালে একজন এবং গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১০ জনের মৃত্যু হয়।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, করোনা সংক্রমণে খুলনা বিভাগে মৃত্যুতে এক নতুন রেকর্ড হয়েছে। সর্বশেষ গেল ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ১০ জেলায় ৭১ জন মারা গেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বিভাগে সর্বোচ্চ ২৩ জনের মৃত্যু হয়েছে খুলনা জেলায়। এ ছাড়া কুষ্টিয়ায় ১৪, ঝিনাইদহে ১০, যশোরে ৯, চুয়াডাঙ্গায় ৬, মেহেরপুরে পাঁচ, বাগেরহাটে দুই এবং নড়াইল ও মাগুরায় একজন করে মারা গেছে। আর নমুনা পরীক্ষায় বিভাগে নতুন করে পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে এক হাজার ৬৫৬ জন। এ নিয়ে বিভাগে মোট আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ৬৯ হাজার ১৮৭ জন। এই সময়কালে বিভাগে মোট মৃত্যুর সংখ্যা এক হাজার ৪৮৭।

খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, লকডাউনের আগেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়েছে। সে কারণে শনাক্ত ও মৃত্যুর হার বেড়ে চলেছে। জেলায় বর্তমানে পাঁচ হাজারের মতো কভিড রোগী রয়েছে। তাদের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোগী বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছে।

কভিড চিকিৎসায় আরো হাসপাতাল :

এদিকে বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক রাশেদা সুলতানা গতকাল জানান, খুলনা শহরের চারটি হাসপাতালে কভিড রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নির্দেশনায় খুলনা শহরে আরো কয়েকটি বড় বেসরকারি হাসপাতালে কভিড রোগীর চিকিৎসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। আগামীকাল রবিবার থেকে নতুন হাসপাতালগুলো চালু হবে বলে আশা করা যায়।