কে এম রেজাউল করিম দেবহাটা ব্যুরো: সাতক্ষীরার দেবহাটায় আর কয়েকদির পরেই পবিত্র ঈদুল আযহা। এই ঈদে মুসলমানদের সবচেয়ে বড় যে কাজ সেকাজটি হলো কোরবানি দেয়া। কোরবানি দিতে যে ছুরি, চাকু, দাসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদী লাগে সেগুলো তৈরি করে দেন কামারেরা। কিন্তু মহামারী করোনার প্রভাবে লকডাউনের কারণে কামার শিল্পেও প্রভাব পড়েছে।
করোনা পরিস্থিতিতে তৈরী সরঞ্জাম তেমন একটা বিক্রি হচ্ছে না। আর কয়েক দিন বাদে ঈদুল আযহা। আসন্ন কোরবানী ঈদের কথা মাথায় রেখে নতুন আশায় বুক বেঁধে কামার শিল্পীরা ব্যস্ত সময় পার করছে। চলছে হাঁপর, পুড়ছে কয়লা, জ্বলছে লোহা। হাঁতুরী আর লোহার টুংটাং শব্দে মুখরিত হচ্ছে কামার পাড়াগুলো। কোরবানি পশু জবাই, মাংস তৈরী আর চামড়া ছাড়ানোর কাজে ব্যবহারিত চাপাতি, দা, ছুরিসহ বিভিন্ন ধারালো অস্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন দেবহাটা উপজেলার কামার শিল্পীরা। হারিয়ে যেতে বসা বাংলার প্রাচীন কামার শিল্প যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে। এখন দম ফেলার ফুসরত নেই কামার পাড়ার শিল্পীদের। দিন-রাত সমান তালে লোহার টুং-টাং শব্দ আর হাফরের ফুসফাঁস শব্দে মুখরিত হয়ে উঠেছে উপজেলার প্রতিটি কামারশালা।
তাছাড়া তাদের পছন্দমত বিভিন্ন সাইজের ছোট-বড় ধারালো অস্ত্র তৈরি করছে। সারা বছর টুক-টাক কাজ থাকলেও কোরবানির ঈদের সময় কামার শিল্প মুখরিত হয়ে ওঠে। কামার শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এসময় দোকানে পুরাতন ও নতুন ধারালো অস্ত্র বানানো ও মেরামত করার ভীড় শুরু হয়। ঈদের আগের দিন পর্যন্ত এই ব্যস্ততা থাকে।
বর্তমানে আধুনিকতার ছোয়া লেগেছে কামার শিল্পে। বৈদ্যুতিক সান দিয়ে বিভিন্ন সরঞ্জাম সান দেওয়া হয় ও হাফর বা জাতা দিয়ে বাতাস দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে মটর। পারুলিয়া এলাকার কামারশালার শিল্পী নিমাই কর্মকার বলেন, লোহা ও কয়লার দাম বেড়ে গেছে। সাধারণ লোহা ৫০ টাকা থেকে ৭০ টাকা ও গাড়ীর পাতি ৮০ টাকা দরে প্রতি কেজি ক্রয় করতে হয়।
পশু জবাই করার ছোট-বড় বিভিন্ন সরজ্ঞাম সাইজের উপর দাম নির্ভর করে। একজন কর্মকার বলেন, অর্ডার দিয়ে তৈরী করা নতুন চাপাতি তৈরীর মুজুরী ৫শ টাকা থেকে ৭শ টাকা, জবাই করা ছোরা ৩শ টাকা। আর তৈরী করা ছোট চাপাতি ৫শত টাকা, বড় চাপাতি ৭ শত থেকে ৮ শত, বড় ছোরা ৩ শত থেকে সাড়ে ৩ শত টাকা, চাকু ৫০ টাকা থেকে দেড় শত টাকা, বটি আড়াই শত থেকে ৩ শত টাকা দরে বিক্রি, হচ্ছে। তারা বলেন, এই পেশায় আমরা খুব অবহেলিত। বর্তমান দ্রব্যমূল্য বেশী হলেও সেই অনুযায়ী দাম পাই না। ফলে সারা বছর সংসার চালাতে খুবই কষ্ট হয়। কোরবানির ঈদের সময় পশু জবাইয়ের সরঞ্জামের চাহিদা থাকায় কাজও বেশি হয়। আর সারাবছর তেমন কোন কাজ থাকে না। টুক-টাক কাজ করে সংসার চালাতে হয়, তাই কামার শিল্পীরা র্বতমান এ পেশায় তাদেরকে অবহেলিত মনে করেন। তারপরও বাপ-দাদার পেশাকে টিকিয়ে রাখতে এ পেশাকে আকড়ে ধরে কাজ করে যাচ্ছেন তারা।