ফিচার

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জালে ভুঁইফোড় সংগঠনের ২৩ ‘কথিত নেতা’

By Daily Satkhira

August 07, 2021

রাজনীতির খবর : শতাধিক ভুঁইফোড় সংগঠনের বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট নেতাদের তালিকা করে আর্থিক দুর্নীতির খোঁজ নিতে শুরু করেছে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক উপকমিটির সদ্য সাবেক সদস্য হেলেনা জাহাঙ্গীর ও মনির খান ওরফে দরজি মনির গ্রেপ্তার হয়েছেন। এর বাইরে কথিত নেতা লিটন গাজীসহ আরো অন্তত ২৩ জন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর জালে বন্দি। তাঁরা যেকোনো সময় গ্রেপ্তার হতে পারেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা গত বৃহস্পতিবার বলেন, তালিকাভুক্ত এসব কথিত নেতার বিরুদ্ধে পাওয়া কিছু দুর্নীতির মৌখিক তথ্য যাচাই-বাছাই চলছে। নামের আগে ও পরে ‘আওয়ামী লীগ’ যুক্ত করে ২০০৯ সালের পর যেসব সংগঠন গড়ে উঠেছে, প্রাথমিক তদন্তে তার বেশির ভাগই ‘ভুঁইভোড়’ সংগঠন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এমন ভুঁইফোড় সংগঠনের সংখ্যা শতাধিক। এসব সংগঠনের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে শুরু করেছেন তাঁরা। দলের নাম ভাঙিয়ে তারা বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সরকারের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এসব সংগঠনের উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ড ও সম্পদের খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। খোঁজ চলছে তাঁদের পৃষ্ঠপোষকদের ব্যাপারেও।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (গোয়েন্দা উত্তর) যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘আওয়ামী লীগের নাম করে কিছু ভুঁইভোড় সংগঠনের অপতৎপরতা বেড়েছে। নামসর্বস্ব এসব সংগঠনের নামে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল ও রাজধানীতে চাঁদাবাজি চলছে। এর সঙ্গে জড়িত ভুঁইভোড় নেতাদের বিরুদ্ধে পাওয়া অভিযোগগুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। তথ্য যাচাই-বাছাই করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

একাধিক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, কথিত সংগঠনগুলোর শতাধিক নেতার গতিবিধির ওপর নজরদারি চলছে। দলের ভাবমূর্তি নষ্ট করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে নানা সময়ে দেওয়া তাঁদের বক্তব্য খোঁজা হচ্ছে। বিএনপি, জামায়াত-শিবিরসহ দেশের বাইরের কোনো সংগঠনের সঙ্গে যোগসূত্র থাকার তথ্যও জানার চেষ্টা চলছে।

র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ভুঁইফোড় নেতাদের বিরুদ্ধে পাওয়া নানা অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। অপরাধের সত্যতা পেলেই সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।

এর আগে ‘বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদ’ নামে ভুঁইফোড় সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মনির খান ওরফে দরজি মনিরকে গত রবিবার রাতে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে এরই মধ্যে চাঁদাবাজি ও প্রতারণার অভিযোগে ইসমাইল হোসেন নামের এক ব্যক্তি রাজধানীর কামরাঙ্গীর চর থানায় একটি মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাঁকে চার দিনের রিমান্ডে নিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মামলার অভিযোগে বলা হয়, দরজি মনির ও তাঁর সহযোগীরা ঢাকা মহানগর এবং বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় বাংলাদেশ জননেত্রী শেখ হাসিনা পরিষদের কমিটি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেন।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মনির একেক সময় একেক রাজনৈতিক পদবি ব্যবহার করে প্রতারণা করতেন। এ ছাড়া বিশেষ বিশেষ দিনে নিজেই মন্ত্রী-এমপিদের বাণী লিখে তাতে জাল স্বাক্ষর দিয়ে ফেসবুকে প্রচার করে বেড়াতেন। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি শেয়ার করেছেন তিনি। ফেসবুক আইডিতে তাঁর পরিচয় অংশে লেখা আছে- তিনি ২০১৩ সালে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটিতে সহসম্পাদক ছিলেন। পরে আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য হন। ফেসবুকের কাভার ফটোতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর একটি ছবি দিয়েও নিজেকে বড়মাপের নেতা হিসেবে প্রমাণের চেষ্টা করতেন তিনি।

ডিবি পুলিশ সূত্র জানায়, প্রতারণার উদ্দেশ্যে এডিট করে শীর্ষস্থানীয় নেতাদের ছবি ব্যবহার করতেন দরজি মনির। ভুঁইফোড় সংগঠন গড়ে তোলে আওয়ামী লীগের নাম ভাঙিয়ে সদস্য সংগ্রহের নামে অর্থ আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে।

এছাড়া ভুঁইফোড় সংগঠনগুলোর মধ্যে ‘জয়বাংলা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগ’-এর কথিত নেতা লিটন গাজীও আলোচনায় রয়েছেন। কিছুদিন আগেও কথিত এই নেতা বিদেশে থেকে ফেসবুক লাইভে সরকারপ্রধানসহ আওয়ামী লীগকে গালাগালি করতেন। পরে দেশে ফিরে তিনি বনে যান জয়বাংলা মুক্তিযুদ্ধ প্রজন্ম লীগের নেতা। সাংবাদিক পরিচয়েও তাঁর বিরুদ্ধে নানা প্রতারণার অভিযোগ রয়েছে।