জাতীয়

ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান : অর্ধেক মামলার তদন্তই শেষ হয়নি

By Daily Satkhira

August 07, 2021

অনলাইন ডেস্ক : ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানের দুই বছর পূর্তি হচ্ছে আগামী সেপ্টেম্বরে। কিন্তু প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে করা অবৈধ সম্পদ অর্জনের মামলাগুলোর অর্ধেকেরই তদন্ত কার্যক্রম শেষ হয়নি। বাকি অর্ধেক মামলায় চার্জশিট (অভিযোগপত্র) দেওয়া হলেও করোনা মহামারিতে সেগুলোর বিচার কার্যক্রম অনেকটা ঝুলে আছে।

ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হওয়া প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে এক ডজনের বেশি মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এর মধ্যে ইসমাইল হোসেন সম্রাটসহ হাফ ডজন অবৈধ সম্পদশালীর বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়াসহ আরও হাফ ডজনের বিরুদ্ধে করা অবৈধ সম্পদের মামলা এখনো তদন্তাধীন। এসব অবৈধ সম্পদশালীর মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, যুক্তরাষ্ট্রসহ নানা দেশে অর্থ পাচারের তথ্য জানতে এবং পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনতে এরই মধ্যে নানা উদ্যোগ নিয়েছে দুদক।

প্রভাবশালীদের মধ্যে ইসমাইল হোসেন সম্রাট, জি কে শামীম, সেলিম প্রধান, খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া, জাকির হোসেন, কাজী আনিছ দম্পতি, পাপিয়া দম্পতির বিরুদ্ধে করা মামলায় চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। তবে করোনার কারণে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় সেসব মামলার বিচার কার্যক্রম তেমন অগ্রসর হয়নি। এছাড়া লোকমান হোসেন ভূঁইয়া, এনামুল হক এনু, রূপন ভূঁইয়া, তারেকুজ্জামান, পাগলা মিজান ও আরমানের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো তদন্তাধীন।

দুদক কমিশনার ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, যেহেতু প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হয়ে গেছে, সেহেতু যারা তেমন প্রভাবশালী নন, তাদের ক্ষেত্রেও চার্জশিট দিতে কোনো বাধা নেই বা কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতার সুযোগ নেই। আমরা যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে। আইনের আওতায় তাদের (ক্যাসিনোকারবারিদের) বিচারের সম্মুখীন করা আমাদের দায়িত্ব। আর দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে নিঃসন্দেহে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিদেশে টাকা পাচার হলে তা আনা সহজ বিষয় নয়। তদন্তকারী কর্মকর্তা তদন্ত পর্যায়ে রিপোর্ট সাবমিট করলে পরে কমিশন মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্ট রিকুয়েস্ট (এমএলএআর) পাঠানোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে। যেসব দেশের সঙ্গে আমাদের চুক্তি রয়েছে- সেসব দেশে এমএলএআর পাঠানো যাবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের মামলাগুলোর তদন্ত ও বিচারে দীর্ঘসূত্রতার নমুনা রয়েছে। সার্বিকভাবে দীর্ঘ সময়েও তদন্ত শেষ করতে না পারায় তদন্ত সংস্থার দক্ষতার ঘাটতি প্রতীয়মান হয়।

জানতে চাইলে দুদকের আইনজীবী মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর বলেন, প্রভাবশালী অনেকের বিরুদ্ধেই চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। মামলাগুলো বর্তমানে বিচারাধীন। তবে করোনার প্রাদুর্ভাবে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলাগুলোর বিচারিক কার্যক্রম তেমন অগ্রসর হয়নি। তা না হলে এতদিনে এসব মামলার বিচার অনেকটা অগ্রসর হতো।

ইসমাইল হোসেন সম্রাট :

ক্যাসিনো গডফাদার যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন সম্রাটের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদের মামলায় চার্জশিট দিয়েছে দুদক। সেখানে বলা হয়েছে, অবৈধ কার্যক্রমের মাধ্যমে সম্রাট ২২২ কোটি ৮৮ লাখ ৬২ হাজার ৪৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা নিজে ভোগদখলে রেখেছেন। অপরাধলব্ধ আয়ের ২১৯ কোটি ৪৮ লাখ ৫৮ হাজার ৫০০ টাকা সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ায় পাচার করেছেন।

জি কে শামীম :

প্রভাবশালী ঠিকাদার জি কে শামীমের (এসএম গোলাম কিবরিয়া শামীম) বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে ২৯৭ কোটি ৩৯ লাখ ১২ হাজার ৭৮৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়েছে। চার্জশিটে জি কে শামীমের সঙ্গে তার মা আয়েশা আক্তারকেও আসামি করা হয়েছে।

সেলিম প্রধান :

অবৈধভাবে ১২ কোটি ২৭ লাখ ৯৫ হাজার ৭৫৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা মো. সেলিম প্রধানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক মো. গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে এ বছরের ১৭ জানুয়ারি মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া :

জ্ঞাত আয়বহির্ভূত পাঁচ কোটি ৫৮ লাখ ১৫ হাজার ৮৫৯ টাকার সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বহিষ্কৃত সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ২১ অক্টোবর দুদকের উপপরিচালক জাহাঙ্গীর আলম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর আদালতে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়।

জাকির হোসেন :

যুবলীগ নেতা সম্রাটের কথিত ‘ডানহাত’ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে পাঁচ কোটি ৪৯ লাখ তিন হাজার ৯৩৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে এ বছরের ১৮ জানুয়ারি আদালতে মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। চার্জশিটে পাঁচ কোটি ৮৬ লাখ সাত হাজার ৬৯ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ করা হয়।

কাজী আনিছুর রহমান :

যুবলীগের বহিষ্কৃত দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১২ কোটি ৮০ লাখ ৬০ হাজার ৯২০ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। তদন্ত শেষে চলতি বছর শুরুর দিকে আদালতে এ মামলার চার্জশিট দেওয়া হয়। চার্জশিটে আনিছুর রহমানের ১৪ কোটি ৯৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৩৬ টাকা এবং তার স্ত্রী সুমী রহমানের দুই কোটি ৬১ লাখ ৬২ হাজার ২১৮ টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগ করা হয়েছে।

পাপিয়া দম্পতি :

নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক শামীমা নূর পাপিয়া ওরফে পিউ দম্পতির বিরুদ্ধে দেওয়া চার্জশিটে পাঁচ কোটি ৮৪ লাখ ১৮ হাজার ৭১৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।

লোকমান হোসেন ভূঁইয়া :

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) পরিচালক ও মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লোকমান হোসেন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে চার কোটি ৩৪ লাখ ১৯ হাজার ৬৪৮ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক সাইফুল ইসলাম বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্তাধীন।

এনামুল হক এনু :

গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনুর বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ২১ কোটি ৮৯ লাখ ৪৩ হাজার ৭৭৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্তাধীন।

রূপন ভূঁইয়া :

গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক রূপন ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে ১৪ কোটি ১২ লাখ ৯৫ হাজার ৮৮২ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ২৩ অক্টোবর দুদকের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলাটিও তদন্তাধীন।

তারেকুজ্জামান রাজীব :

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিল মো. তারেকুজ্জামান রাজীবের বিরুদ্ধে ২৬ কোটি ১৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দুদকের সহকারী পরিচালক মামুনুর রশীদ চৌধুরী বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটি তদন্তাধীন।

পাগলা মিজান :

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাবিবুর রহমান মিজান ওরফে পাগলা মিজানের বিরুদ্ধে ৩০ কোটি ১৬ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। ২০১৯ সালের ৬ নভেম্বর দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এ মামলাটিও তদন্তাধীন।

আরমান :

সম্রাটের সহযোগী যুবলীগ নেতা আরমানের বিরুদ্ধে দুই কোটি পাঁচ লাখ ৪০ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হয়। দুদকের উপপরিচালক মো. সালাহউদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি করেন। মামলাটির তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।সূত্র:যুগান্তর