জাতীয়

সুপ্রিম কোর্টের ভাস্কর্য পুনঃস্থাপন করা হলো

By Daily Satkhira

May 28, 2017

সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে সরিয়ে নেওয়া গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্য অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপনের কাজ শেষ হয়েছে। শনিবার রাত আটটা থেকে পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হয় এবং রাত পৌনে একটায় শেষ হয়েছে। মৃণাল হক এ তথ্য নিশ্চিত করেন। এর আগে শনিবার রাত সোয়া এগারোটার দিকে মৃণাল হক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আজ সকালেই ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন করতে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ পাই। এরপর রাত আটটা থেকে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে। আর একঘণ্টার মধ্যে ভাস্কর্য পুরোপুরি পুনঃস্থাপিত হবে।’ গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য স্থানান্তরের বিষয়ে মৃণাল হক বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের সামনে থেকে অ্যানেক্স ভবনের সামনে আনা আর একজায়গা থেকে আরেক জায়গায় আনা এক জিনিস না। সামনে থাকা এক জিনিস, ভেতরে থাকা আরেক জিনিস।’ তিনি বলেন, ‘এই সাবজেক্ট নিয়ে আমি মুখ খুলতে চাই না। মুখ খুললে এটা আরও বড় হবে।’ ভাস্কর মৃণাল হক জানান, ‘আমার ত্রিশ জন কর্মী ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের কাজ করছেন। ’ এ প্রসঙ্গে অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, ‘আমি কিছু শুনিনি। আমি তো জানতাম না। এ বিষয়ে কথা বলা বিপজ্জনক।’ এর আগে রাত এগারোটার কিছু আগে, একটি গোয়েন্দা সংস্থার একজন সদস্য জানান, ‘ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এটি পুনঃস্থাপিত হবে।’’ বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর ভাস্কর মৃণাল হকের নেতৃত্বে ১৩ জন কর্মীসহ মোট ২০ জন শ্রমিক ভাস্কর্যটির ভিত ভাঙার কাজ শুরু হয়। ভোর পাঁচটার দিকে ঢাকা মেট্রো ন-১৬-১৫০৪ নম্বরের পিকআপ ভ্যানে করে হাইকোর্টের অ্যানেক্স ভবনের ভেতর পানির পাম্পের পাশে ভাস্কর্যটি রাখা হয়। সরেজমিনে দেখা গেছে, রাত সাড়ে বারোটার দিকে বেদীর সঙ্গে ভাস্কর্যের ঝালাইয়ের কাজ চলছে। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের শেষ দিকে গ্রিক দেবী থেমিসের ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এরপর প্রায় দুই মাস এ বিষয়ে পক্ষে-বিপক্ষে কোনও মত প্রকাশ করা না হলেও ফেব্রুয়ারিতে মুখ খোলেন হেফাজতে ইসলামের আমির শাহ আহমদ শফী। এক বিবৃতিতে তিনি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ভাস্কর্যটি অপসারণের দাবি জানান। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে বাংলাদেশের সবগুলো ধর্মভিত্তিক সংগঠন ভাস্কর্যটি সরানোর দাবিতে আন্দোলন করছিল। হেফাজতের ঘোষণা ছিল, অপসারণ করা না হলে শাপলা চত্বরে আবারও সমাবেশ করবে তারা। এরই ধারাবাহিকতায় গত গত ১১ এপ্রিল গণভবনে কওমি মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সরকারি স্বীকৃতি ঘোষণার রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই প্রশ্ন তোলেন গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য নিয়ে। সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে এই গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য থাকা উচিত না বলেও মন্তব্য করেন তিনি। পরবর্তী সময়ে আরও কয়েকবার প্রশ্ন তোলেন ভাস্কর্যের বাস্তবতা নিয়ে। তার প্রশ্ন, গ্রিক দেবীর গায়ে শাড়ি কেন? বৃহস্পতিবার সকালেও বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন রমজানের আগেই ভাস্কর্য সরানো আহ্বান জানায়। এর আগে ইসলামী ঐক্যজোট হরতালের ঘোষণা দেয়, রমজানের আগে গ্রিক দেবীর ভাস্কর্য না সরালে তারা কঠোর কর্মসূচি দেবে। অব্যাহত হুমকি আসে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক রাজনৈতিক দল, ওলামা লীগসহ সুন্নিপন্থী একাধিক সংগঠনের পক্ষ থেকে। যদিও ভাস্কর্য রক্ষার দাবিতে দেশের প্রগতিশীলদের একটি অংশ বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে আসছিল। এদিকে, বৃহস্পতিবার ভাস্কর্য সরানোর প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। এছাড়া গণজাগরণমঞ্চকর্মী ও বামপন্থী ছাত্র সংগঠনগুলোও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে।