জাতীয়

খালেদা জিয়ার মুক্তির আবেদনে মত দিল আইন মন্ত্রণালয়

By Daily Satkhira

September 08, 2021

রাজনীতির খবর : বিএনপির চেয়ারপাসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি চেয়ে তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে করা আবেদনের বিষয়ে মতামত দিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়।

এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক মঙ্গলবার বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি আবেদন করা হয়েছিল। আবেদনে খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে তাঁর সুচিকিৎসার জন্য মুক্তির প্রার্থনা জানানো হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আবেদনটির আইনি মতামত চেয়ে আমাদের কাছে (আইন মন্ত্রণালয়ে) এসেছে। আমরা এ আবেদনের আইনি বিষয় পর্যালোচনা করে দেখে মতামত দিয়েছি। মতামতটি আজই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের অনুমোদন সাপেক্ষে আবেদনটি নিষ্পত্তি করবে।’

আবেদনের বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে আইনমন্ত্রী বলেন, অসুস্থতার গ্রাউন্ডে খালেদা জিয়ার মুক্তি চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

এর আগে গত ৯ মে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে বিদেশে যাওয়ার অনুমতি দেয়নি সরকার। এ বিষয়ে খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে করা আবেদন ‘মঞ্জুর করা যাবে না’ মর্মে মতামত দেয় আইন মন্ত্রণালয়। আইন মন্ত্রণালয়ের এ মতামতের ওপর ভিত্তি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আবেদনটি নাকচ করে দিয়েছে।

খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে করা এ আবেদন মঞ্জুর না করার বিষয়ে তখন আইনি ব্যাখ্যা দেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী টেলিফোনে বিদ্যমান ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার বিধানের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘ফৌজদারি কার্যবিধির ৪০১ ধারার আলোকে খালেদা জিয়ার সাজা ও দণ্ডাদেশ আগেই স্থগিত করে সাময়িক মুক্তি দেওয়া হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির একই ধারা অনুযায়ী, দ্বিতীয়বার তাঁকে অনুরূপ সুযোগ দিয়ে বিদেশে যেতে দেওয়ার সুযোগ নেই।’

আইনমন্ত্রী আরও বলেন, ‘খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য যে আবেদনটি করা হয়েছিল সেটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে আইনি মতামত চেয়ে পাঠিয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে যতটুকু জানতে চেয়েছিল আমরা ততটুকুর বিষয়েই মতামত দিয়েছি।’

‘আমরা বিদ্যমান আইন ও বিধিবিধান পর্যালোচনা করে দেখেছি, দণ্ডপ্রাপ্ত খালেদা জিয়াকে নির্বাহী আদেশে শর্তসাপেক্ষে দণ্ড স্থগিত করে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল। ওই সময়েও খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদন দণ্ডবিধির ৪০১ ধারা অনুযায়ী নির্বাহী আদেশে মঞ্জুর করা হয়েছে। এখন অনুরূপ আরেকটি আবেদনে উন্নত চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে বিদেশে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ৪০১ ধারা অনুযায়ী, একই ব্যক্তিকে একবার যে সুবিধা দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয়বার ওই সুবিধা দেওয়ার সুযোগ নেই’, যোগ করেন আইনমন্ত্রী।

গুরুতর অসুস্থ বিএনপির চেয়ারপারসনকে বিদেশে নেওয়ার বিকল্প কোনো উপায় আছে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, ‘স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে যতটুকু বিষয়ে মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে আমরা ততটুকু বিষয়ে মতামত দিয়েছে। বিকল্প কী পদ্ধতি থাকতে পারে এটি খালেদা জিয়ার পরিবারই বলতে পারবে।’

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া গত ১০ এপ্রিল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন। ২৭ এপ্রিল তাঁকে এভার কেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ৫৪ দিন পর ১৯ জুন তিনি গুলশানের বাসায় ফেরেন। একমাস পর ১৯ জুলাই তিনি করোনা টিকার প্রথম ডোজ নেন। ২৮ আগস্ট নেন দ্বিতীয় ডোজের টিকা।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিশেষ আদালতের রায়ে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড নিয়ে কারাবন্দি হন খালেদা জিয়া। তারপর নাজিমউদ্দিন রোডের সাবেক কেন্দ্রীয় কারাগারে শুরু হয় তাঁর কারাজীবন। একই বছরের ৩০ অক্টোবর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ মামলায় খালেদা জিয়ার সাজা পাঁচ বছর বাড়িয়ে ১০ বছরের আদেশ দেন বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ।

অন্যদিকে, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত। পুরান ঢাকার পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অবস্থিত ঢাকার ৫ নম্বর অস্থায়ী বিশেষ জজ ড. মো. আখতারুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে সাত বছরের কারাদণ্ড ছাড়াও খালেদা জিয়াকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। জরিমানা অনাদায়ে আরও ছয় মাসের কারাদণ্ডাদেশ দেন আদালত।

পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে এক বছরের বেশি সময় বন্দিজীবন কাটানোর পর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়াকে নিয়ে আসা হয় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) কেবিন ব্লকের প্রিজন সেলে।

গত বছর সারা বিশ্বে মহামারি করোনা ছড়িয়ে পড়লে শর্তসাপেক্ষে সরকার প্রধানের নির্বাহী আদেশে জামিন পান খালেদা জিয়া। প্রায় ২৫ মাস (কারাগার ও বিএসএমএমইউর প্রিজন সেল) কারাভোগের পর তিনি ২০২০ সালের ২৫ মার্চ মুক্ত হন। বিএসএমএমইউ প্রিজন সেল থেকে মুক্তির পর গুলশানে নিজের ভাড়া বাসা ‘ফিরোজা’য় অবস্থান করছেন সাবেক এ প্রধানমন্ত্রী।