কে এম রেজাউল করিম, দেবহাটা ব্যুরো : দেবহাটায় একাধিক নীরিহ পরিবারের জমি দখল, বসতবাড়ি ভাংচুর, মৎস্য ঘের লুট, হামলা, মারপিট সহ অবৈধ অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে মানুষকে জিম্মি ও ত্রাস সৃষ্টিকারী আলফাজ হোসেন সুরুজ নামের এক ছাত্রলীগ নেতা গণধোলাইয়ের শিকার হয়েছেন।
গণধোলাইয়ের একপর্যায়ে পাশ্ববর্তী খালের পানিতে ঝাপিয়ে পড়ে অস্ত্র ফেলে সাঁতরে খাল পাড়ি দিয়ে এযাত্রায় প্রান বাঁচে তার। সে উপজেলার কুলিয়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি ও এলাকার চিহ্নিত মাস্তান।
এসময় আরোও গণধোলাইয়ের শিকার হন ছাত্রলীগ নেতা আলফাজের সাথে থাকা ধর্ষণ, হত্যাচেষ্টা সহ একাধিক মামলার আসামী আবু সুফিয়ান নামের অপর আরেক মাস্তান । বুধবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার কদমখালি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
এলাকাবাসী জানায়, অবৈধ অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নীরিহ মানুষদের ওপর অত্যাচার ও জমি দখল সহ নানা অপকর্ম চালিয়ে আসছিল ছাত্রলীগ নেতা আলফাজ-সুফিয়ান বাহিনী। কিছুদিন আগে কুলিয়ার শ্যামনগর গ্রামের বৃদ্ধ আবুল কাশেম শেখের ছেলে মিলন শেখের বসতভিটার জমি দখলে নিতে হামলা চালায় আলফাজ ও সুফিয়ান বাহিনীর লোকজন।
এসময় তারা বৃদ্ধ কাশেম শেখ, তার ছেলে মিলন শেখ ও পুত্রবধু ফতেমা ফারহানাকে বেধড়ক মারপিট করে। হামলাকারীরা কাশেম শেখ ও ফারহানাকে গাছের সাথে বেঁধে নির্যাতনসহ ফারহানার একটি হাত ভেঙে দেয়। সর্বশেষ বুধবার সকালে ফের হামলা চালিয়ে তাদেরকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে কাশেম শেখের মৎস্য ঘের লুট করে আলফাজ, সুফিয়ান, আছাবুর, এলাহী বকস, জাহা বকস সহ অস্ত্রধারী বাহিনীর সদস্যরা।
এছাড়া পাশ্ববর্তী কদমখালি গ্রামের সংখ্যালঘু বৃদ্ধ মনিন্দ্র কে ৫০ বছরের পৈত্রিক ভিটেবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে মুহুমুহু হুমকি ও চাপপ্রয়োগ করে যাচ্ছে আলফাজ, সুফিয়ান, ছইলউদ্দীন সহ ওই বাহিনীর লোকজন। আরেক ভুক্তভোগী কদমখালি গ্রামের বাবুরাম জানান, তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়ার সুযোগে তার ২৫ শতক জমিও জোরপূর্বক ছইলউদ্দীন, আলফাজ ও সুফিয়ানরা দখলে নিয়ে নিয়েছে। জমিটিতে থাকা তার মায়ের শ্মশানটিও ভেঙে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছে এসব অস্ত্রবাজ সন্ত্রাসীরা।
বুধবার বিকেলে এসব ঘটনার ভুক্তভোগীদের সাথে সরেজমিনে দেখা করতে যান সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও কুলিয়ার সাবেক চেয়ারম্যান আছাদুল হক। এসময় ছাত্রলীগ নেতা আলফাজ-সুফিয়ান সহ তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা সেখানে গিয়ে অবৈধ অস্ত্র দেখিয়ে ত্রাস সৃষ্টি করতে চাইলে ভুক্তভোগী ও স্থানীয়রা তাদেরকে গণধোলাই দেন।
এদিকে অত্যাচারী এ বাহিনীর জবরদখল, হামলা, লুটপাটের ভুক্তভোগীদের আর্তনাদ এবং গণধোলাইয়ের একটি ভিডিও প্রতিবেদন বৃহষ্পতিবার সকালে ভাইরাল হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এর কয়েক ঘন্টার মধ্যে সাতক্ষীরা জেলা ও দেবহাটা উপজেলা ছাত্রলীগের নির্দেশে কুলিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদক লিখিতভাবে অভিযুক্ত অস্ত্রবাজ ছাত্রলীগ নেতা আলফাজ হোসেন সুরুজকে দলীয় পদ থেকে অব্যহতি দিয়ে তার মেয়াদোত্তীর্ন কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেন।
দীর্ঘদিন ধরে আলফাজ-সুফিয়ান বাহিনীর অত্যাচারে অতিষ্ট ভুক্তভোগীরা অবিলম্বে ছাত্রলীগ নামধারী এসব অস্ত্রবাজদের আইনের আওতায় আনার জন্য সাতক্ষীরা পুলিশ সুপারের কাছে দাবি জানিয়েছেন।
এব্যাপারে দেবহাটা থানার ওসি বিপ্লব সাহা বলেন, এব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।