সাতক্ষীরা

শ্রমিক আন্দোলনে উত্তাল ভোমরাস্থল বন্দর : শ্রমিকদের দাবি নির্বাচন

By daily satkhira

September 12, 2021

নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোমরাস্থল বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের তীব্র আন্দোলনে উত্তাল হয়ে উঠেছে ভোমরাস্থল বন্দর। বন্দরের দুটি শ্রমিক সংগঠনের নির্বাচনের দাবিতে এ আন্দোলন শুরু করেন শ্রমিকরা। যদিও সদর সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি সেপ্টেম্বরের মধ্যে সাধারণ সভা দেওয়ার ঘোষণার পর শ্রমিকরা কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজ শুরু করেছেন। শ্রমিকদের এই আন্দোলনের কারনে বন্দরের লোড আনলোড বন্ধ থাকায় প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছে বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছেন। ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন ব্যবসায়ীরাও। শ্রমিকরা জানান, সম্প্রতি ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সিলেকশন কমিটি হয়েছে। কিন্তু কমিটি গঠন করতে নির্বাচনের যে প্রক্রিয়া কোনটিই মানা হয়নি। কোটি টাকার মিশনে কোন ধরনের নির্বাচনী প্রক্রিয়া ছাড়াই ঘোষিত হয়েছে। গত ৪ সেপ্টেম্বর এসোসিয়েশনের সাধারণ সভায় নির্বাচনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা থাকলেও সাতক্ষীরার একজন জনপ্রতিনিধি সেখানে হাজির হয়ে কমিটি ঘোষণা করেন। এরপর শুরু হয় হ্যান্ডলিং শ্রমিকদের দুটি ইউনিয়নের কমিটি নিয়ে কোটি টাকার বাণিজ্য। টিকে থাকতে কোটি টাকা দর উঠেছে। বেশি দর উঠার অপেক্ষায় দেনদরবার চলছে প্রতিনিয়ত। এরমধ্যে সাধারণ সভা ও নির্বাচনের দাবীতে মাঠে নামেন শ্রমিকরা। তবে অপর পক্ষ কোটির বেশি দাম দিয়ে রাতারাতি একটি কমিটি তৈরি করে তা নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

সূত্রে জানা গেছে, ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা- ১১৫৫ এবং রেজি: নং-খুলনা-১১৫৯ কমিটির মেয়াদ শেষ। করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব হয়নি। ইতোমধ্যে করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় নির্বাচনের তোড়জোড় শুরু করতে চাচ্ছেন বর্তমান কমিটির নেতৃবৃন্দ। কিন্তু শ্রমিকদের নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠান ইতোমধ্যেই তাদেরকে মহাজনের সাথে যোগাযোগ করতে বলেছেন। মহাজনের অনুমতি ছাড়া তারা সাধারণ সভা বা নির্বাচনের অনুমতি দিতে পারবেন না বলে ছাপ জানিয়ে দিয়েছেন।

ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা-১১৫৫ এর সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম বলেন, যারা বর্তমান কমিটিতে আছে তাদের বাদ দিয়ে গোপনে অবৈধভাবে নতুন কমিটি করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা এই কমিটি মানতে চাচ্ছে না। শ্রমিকরা চাচ্ছে সাধারণ সভার মাধ্যমে তপশিল ঘোষণা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন। ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা-১১৫৯ এর সভাপতি এরশাদ আলী বলেন, আমরা নিবার্চন করে বর্তমানে কমিটিতে আছি। করোনা পরিস্থিতির কারনে আমরা নির্ধারিত সময়ে নির্বাচন করতে পারিনি। আমরা এখন শুনছি গতবার যারা নির্বাচনে ফেল করেছিলো তারা গোপনে কমিটি করেছে। এটা শুনার পর সাধারণ শ্রমিকদের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। তারা কাজ বন্ধ করে সাধারণ সভা ও শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনের দাবিতে মানববন্ধন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এদিকে, ৭ সেপ্টেম্বর সকাল থেকে নির্বাচনের দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন রেজি: নং- খুলনা- ১১৫৫ ও রেজি: নং-খুলনা-১১৫৯ কমিটির নেতা কর্মীরা। ভোমরা স্থলবন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৯ এর সহসভাপতি মোঃ নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন সাধারণ শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৯ এর সম্পাদক সম্পাদক মোঃ তরিকুল ইসলাম, শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৫ এর সাধারণ মাসুদ আলম, শ্রমিক নেতা মোঃ মনিরুল ইসলাম, শরিফুল ইসলাম খোকন, ইবাদুল হক প্রমুখ।

বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা বলেন, শ্রমিকদের একটি পক্ষ মোটা অঙ্কের অর্থের বিনিময়ে এক জনপ্রতিনিধির সহয়তায় গোপনে অবৈধভাবে শ্রম অধিদপ্তর থেকে নতুন কমিটি করে এনেছে। কিন্তু সাধারণ শ্রমিকরা এই কমিটি মানতে চাচ্ছে না। শ্রমিকরা চাচ্ছে সাধারণ সভার মাধ্যমে তপশিল ঘোষণা করে নিরপেক্ষ নির্বাচন। এদিকে, ১১ সেপ্টেম্বর সিএন্ডএফ এজেন্ট এবং পুলিশের মধ্যস্থতায় এ সমস্যার সামাধানের লক্ষ্যে শ্রমিক নেতৃবৃন্দের সাথে মতবিনিময় করা হয়। কিন্তু শ্রমিক নেতৃবৃন্দ তাদের সাথে একমত হতে পারেনি। এতে বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে শ্রমিকরা। শ্রমিকদের শান্ত করতে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে পুলিশ। এরপর শ্রমিকরা ভোমরা সড়ক আটকে বিক্ষোভ শুরু করে। সে সময় শ্রমিকরা দাবি করেন তাদের নেতৃবৃন্দকে সিএন্ডএফ অফিসে নিয়ে মারপিট করা হয়েছে এবং একটি কাগজে জোর করে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। তাদের আন্দোলনে বন্দর উত্তাল হয়ে ওঠে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের লক্ষে সাতক্ষীরা সদর সাংসদ মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এবং সাতক্ষীরা জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ¦ নজরুল ইসলাম সেখানে যান। প্রথমে এমপি রবি এমাসেই বিষয়টি নিয়ে বসাবসির প্রস্তাব দেন। কিন্তু শ্রমিকরা নির্বাচনের দাবিতে অনড় থাকে। ফলে শ্রমিকদের দাবির মুখে এ মাসের সাধারণ সভার ঘোষনা দেওয়ায় শ্রমিকরা তাদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার করে কাজে যোগদেন।

অন্যদিকে বন্দরের একাধিক ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোটি টাকা খরচ করেও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্বে আসতে চাইছেন অনেকে। শ্রমিক সংগঠনের কাছে ব্যবসায়ীরা জিম্মি হয়ে পড়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলার বড় বড় ব্যবসায়ীরা এ বন্দরে ব্যবসা করেন। কিন্তু শ্রমিক সংগঠনের নেতারা পন্যবাহী ট্রাক থেকে ইচ্ছামত মালামাল বের করে নিয়ে অন্যত্র বিক্রয় করে। কিছু বলতে গেলে শ্রমিকরা কাজ বন্ধ করে দেন। যে কারণে ব্যবসায়ীরা কিছু না বলে নিরবতা পালন করেন। অনেক ব্যবসায়ী ভোমরা বন্দর থেকে ব্যবসায় গুটিয়ে নেওয়ার চেষ্টাও করছেন বলে দাবি করেছেন তারা। তবে অনেক ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, চোরাকারবারীদের অবাধ সুযোগ সৃষ্টির উদ্দেশ্যে শ্রমিক ইউনিয়নে নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার চেষ্টা করছেন একটি মহল। যে কারণে কোটি কোটি টাকার মিশনে মেনেছেন তারা।

এবিষয়ে বন্দর হ্যান্ডলিং শ্রমিক ইউনিয়ন ১১৫৯ এর সাধারণ সম্পাদক মোঃ তরিকুল ইসলাম বলেন, সদর এমপি সাহেব, জেলা আওয়ামীলীগের সেক্রেটারী নজরুল ইসলাম সাহেব এখানে এসে আগামী ২২ তারিখের মধ্যে নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করার প্রস্তাব দিয়েছেন। যে কারণে শ্রমিকরা কর্মসূচি প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। যদি ২২ তারিখের পরে নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু না হয় তাহলে শ্রমিকদের দমিয়ে রাখা সম্ভব হবে না। তারা আবারো আন্দোলন করবে।