ফিচার

সাতক্ষীরায় ব্যাংকারের জমি দখল করে উল্টো মিথ্যা মামলার চেষ্টা!

By Daily Satkhira

September 19, 2021

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরায় এক ব্যাংকারের জমি দখল করে উল্টো তাদেরই বিরুদ্ধে প্রাচীর ভাঙার মিথ্যা অভিযোগ করেছেন এক লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী। শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে পুলিশের উপস্থিতিতেই ওই লন্ডন প্রবাসীর স্ত্রী ও তার স্বজনরা জমির প্রকৃত মালিক পক্ষকে মারধর করতে উদ্যত হন। এঘটনায় এখন ওই এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

ঘটনা অনুসন্ধানে জানা গেছে, বিগত ১৯৯৯ সালের ২৮শে ফেব্রæয়ারি সাতক্ষীরা সদর উপজেলার রসুলপুর মৌজার মেহেদীবাগে আলীপুর এলাকার আবদুস সবুরের কাছ থেকে ৩০৪৯ দাগে ৬.৬২+.৮৫=৭.৪৭ শতক (‘এইচ প্লট’) জমি ক্রয় করেন সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিঞ্চুপুর ইউনিয়নের মুকুন্দপুর এলাকার আবদুর রহমানের স্ত্রী ও ব্যাংক কর্মকতা আনজুমানারা। চাকরির সুবাদে তিনি স্বপরিবারে রাজধানীতে অবস্থান করায় সাতক্ষীরার এ জমি দেখাশুনার দায়িত্ব দেন একমাত্র ভাই কাটিয়া এলাকার মৃত আবুল হোসেন চৌধুরীর ছেলে রাশিদ হাসান চৌধুরীকে।

এরপর একই জায়গায় আরও ৭টি প্লটে জমি বিক্রয় করেন আবদুস সবুর। সর্বশেষ ‘জি’ প্লটটি বিক্রি করেন তিনি। সেই ‘জি প্লট’টি আরও তিনজনের হাতবদল হয়ে চতুর্থ ক্রেতা হিসেবে ২০১৮ সালে ক্রয় করেন লন্ডন প্রবাসী শফিউজ্জামানের স্ত্রী শামীমা খাতুন।

শামীমা খাতুন যখন জমি কেনেন তখন তার জমিতে চলাচলের জন্য কোন পথ না থাকায় তিনি ব্যাংকার আনজুমানারার কাছে তাদের জমির ওপর দিয়ে চলাচলের অনুমতি প্রার্থনা করেন। তার অনুরোধে মৌখিকভাবে তাদেরকে চলাচলের অনুমতি দিয়ে মহনুভবতার পরিচয় দেন আনজুমানারা। পরে জমির দেখাশুনার দায়িত্বে থাকা রাশিদ হাসান চৌধুরীর কাছে আনজুমানারার জমিতে ভবন নির্মাণের জন্য নির্মাণ সামগ্রী রাখার জন্য অনুমতি চান শামীমা খাতুন। তাদের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সরল বিশ^াসে তাদেরকে সেখানে নির্মাণ সামগ্রী রাখার অনুমতি দেন তিনি। কিন্তু তাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে ভবন নির্মাণ শেষে শামীমা খাতুন তার জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে দিয়ে চলতি বছরের ১৩ ফেব্রæয়ারি আনজুমানারার জমির প্রায় অর্ধশতক জায়গা দখল করে রাতের আধারে ঢালাই রাস্তা নির্মাণ করেন।

পরবর্তীতে আনজুমানারার ভাই তাদের জমি দখল করে রাস্তা নির্মাণের বিষয়টি জানতে পেরে শামীমা খাতুনকে অবৈধ্য দখল মুক্ত করার অনুরোধ করেন। কিন্তু তিনি দখল মুক্ত না করে বরং রাশিদ হাসান চৌধুরীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাচ করেন। একপর্যায়ে তিনি তাদেরকে মারতে উদ্যোত হন এবং খুন-জখম ও মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়ে দেওয়ার হুমকি দেন।

পরে নিরুপায় হয়ে রাশিদ হাসান চৌধুরী মার্চের প্রথম সপ্তাহে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তার সে অভিযোগের প্রেক্ষিতে ঘটনা তদন্তের দায়িত্ব পড়ে কাটিয়া টাউন ফাঁড়ির ইনচার্জের উপর। তিনি উভয় পক্ষকে কাটিয়া ফাঁড়িতে হাজির হওয়ার আহবান জানিয়ে বিষয়টি মিমাংসা করে নেওয়ার অনুরোধ জানান। তার সে আহবানে আনজুমানারার পক্ষ হাজির হলেও সাড়া দেননি শামীমা খাতুন।

পরে সমাধান না পেয়ে রাশিদ হাসান চৌধুরী বাবু জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে আরও একটি অভিযোগ করেন। সেখানেও হাজির হননি শামীমা।

সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৭ সেপ্টেম্বর) আবারও রাশিদ হাসান চৌধুরী অবৈধ্য দখল মুক্ত করার জন্য শামীমাকে অনুরোধ করলে তিনি দখল মুক্ত না করে বরং তাদেরকেই মারতে উদ্যোত হন। একপর্যায়ে সেখানে উভয় পক্ষের মধ্যে বাকবিতÐা চলাকালীন পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে উভয় পক্ষকে যার যার বৈধ কাগজপত্রসহ পরদিন ১৮ সেপ্টেম্বর সকাল ১০টায় সাতক্ষীরা সদর থানায় বসে বিষয়টি মিমাংসার প্রস্তাব দেন। পুলিশের সে প্রস্তাবে সে সময় উভয় পক্ষ রাজি হয়ে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রপরায়ন শামীমা খাতুন সেদিন রাতে সাংবাদিকদের ভুল তথ্য দিয়ে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন সংবাদ প্রকাশ করান।

এরপর পূর্ব নির্ধারিত মিমাংসার দিনে সাতক্ষীরা সদর থানায় আনজুমানার পক্ষ উপস্থিত হলেও সেখানে উপস্থিত হননি শামীমা খাতুন বা তার কোন প্রতিনিধি। সেসময় পুলিশের পক্ষ থেকে শামীমা খাতুনকে থানায় এসে মীমাংসা বৈঠকে অংশগ্রহণের জন্য বারবার অনুরোধ করা হলেও তিনি তাতে সাড়া না দিয়ে বিভিন্ন অজুহাত দিয়ে সেদিন আর থানায় উপস্থিত হননি। সেদিন শামীমা খাতুন মিমাংসা বৈঠকে অংশগ্রহণ না করায় পুলিশের পরামর্শে সাতক্ষীরা সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (ডায়েরি নং: ১০৭৯, তারিখ: ১৮.০৯.২০২১) করেন আনজুমানারার একমাত্র ভাই রাশিদ হাসান চৌধুরী।

তবে এসব বিষয়ে জানার জন্য শামীমা খাতুনের কাছে ফোন করা হলে তিনি তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি কোন জমি দখল করিনি। সবার যে পথ আমারও সে পথ। বরং রাশিদ হাসান আমার কাছে চাঁদা দাবি করেছেন।

রাশিদ হাসান আপনার কাছে কত টাকা চাঁদা দাবি করেছেন এমন প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তোর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

পরবর্তীতে তার কাছে আবারও ফোন করে থানায় বসাবসির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমিও পৌরসভায় অভিযোগ করেছিলাম কিন্তু ওনারা সেখানে আসেননি। আর আমাদের পৌর কাউন্সিলর সাগর ভাই আমাকে ‘মীমাংসার জন্য বসলে আগে পৌরসভায় বসবেন অন্য কোথাও নয়’ বলে জানান। এজন্য আমি আর কোথাও বসিনি।