নিজস্ব প্রতিনিধি : আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে নড়ে চড়ে বসেছেন লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের তৃণমুলের কর্মীরা। কে পাবেন দলীয় মনোয়ন এটি নিয়ে রয়েছে সংশয়। সরেজমিনে তৃণমুলের মতামত নিয়েই প্রার্থী নির্বাচনের জন্য উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন নেতাকর্মীরা। দীর্ঘ ৩৩ বছর বিএনপি নেতার দখলে থাকা ইউনিয়নটি শহরের উপকণ্ঠে হলেও উন্নয়ন বঞ্চিত। আওয়ামীলীগের যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে না ওঠায় বার বার ইউনিয়নটিতে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলিম চেয়ারম্যান হন। আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী মনোনয়নেও রয়েছে জটিলতা। এ পর্যন্ত যে সব প্রার্থীরা নৌকার মনোনয়ন পেয়েছেন তারা কেউ জনসম্পৃক্ত নন। দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও এসব প্রার্থীরা মানুষের দু:খে পাশে দাড়ানো তো দুরের কথা খোঁজ খবরও রাখেন না। যে কারণে জনগণ তাদের কে সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন লাবসা ইউনিয়নের প্রবীণ আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীরা।
তবে ত্যাগী জনবান্ধব প্রার্থী বাছাই করতে পারলে লাবসা ইউনিয়নে আওয়ামীলীগের প্রার্থীকে বিজয়ী করা সম্ভব হবে বলে মনে করে অনেকে। ইউনিয়নের একাধিক নেতাকর্মীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে ভূমিদস্যুতা, হাট বাজারের টাকা আত্মসাথ, প্রকল্পের অর্থ তছরুপ করাসহ হাজারো অভিযোগ রয়েছে। সারা বছর ইউনিয়নের মানুষ প্রকাশ্যে তাকে গালমন্দ করলেও ভোটের সময় তাকেই ভোট দেন। এর কারণ হিসেবে ইউনিয়নবাসী মনে করেন, এ ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ জামায়াত-বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত থাকার পাশাপাশি দীর্ঘদিনেও এখানে আওয়ামীলীগের কোন যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে উঠেনি। যোগ্য, জনসম্পৃক্ত ও কর্মী বান্ধব নেতৃত্ব এখানে চরম সংকট। যে কারণেই মানুষ আলিম কে বেছে নেন। এদিকে, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আব্দুল আলিমের বিরুদ্ধে প্রকল্পের অর্থ আত্মসাথের অভিযোগে দুদকে মামলা চলমান রয়েছে। এছাড়াও ৮টি নাশকতা মামলার আসামী আব্দুল আলিম। কিন্তু তারপরও বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে বহাল তবিয়তে রাজনীতি করে যাচ্ছেন তিনি। বিগত সময়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছেন সরদার নজরুল ইসলাম, সাইফুল হাসান খোকন ও লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি এড.মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ। কিন্তু তিনজনই আলিমের কাছে পরাজিত হয়েছেন। বিশেষ করে গত নির্বাচনে এড.মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেও বিপুল ভোটে পরাজিত হন। নির্বাচনী পরিসংখ্যান অনুযায়ী আলিমের বিরুদ্ধে আওয়ামীলীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহন করে সরদার নজরুল মাত্র ১ হাজার ৩শ ভোট পান। অথচ সরদার নজরুলও এবার নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। এছাড়া গত নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ প্রায় ১০ হাজার ভোটের ব্যবধানে পরাজিত হন। কিন্তু এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজও পুনরায় নৌকার মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন। মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে এড. মোস্তাফিজুর রহমান শাহনেওয়াজ, সরদার নজরুল সহ মাঠে রয়েছে যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বাবু। তিন প্রার্থীর মধ্যে তৃণমুলে এড. শাহনেওয়াজ ও সরদার নজরুলের কোন গ্রহণ যোগ্যতা নেই মর্মে ইউনিয়নের একাধিক নেতৃবৃন্দ জানিয়েছেন।
তরুণ নেতৃত্বই পারবে বিজয় নিশ্চিত করতে। আলিমের দীর্ঘদিনের মসনদ ভাঙ্গতে। তবে যদি এবারও প্রার্থী বাছাইয়ে সামান্য ভুল হয় তা হলে হয়ত এবারও আওয়ামীলীগের হাত ছাড়া হতে পারে ইউনিয়নটি।
ইউনিয়নবাসী জানিয়েছেন, তিন প্রার্থীর মধ্যে তরুণ নেতৃত্ব যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বাবু একজন সৎ,যোগ্য এবং জন ও কর্মী বান্ধব হওয়ায় তাকে মনোনয়ন দিলে ইউনিয়নটি নৌকার দখলে আনা সম্ভব হবে। আলিম চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়ে ইউনিয়নটি উদ্ধার করার মত একমাত্র প্রার্থী গোলাম কিবরিয়া বাবু।
গত নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেম্বর নির্বাচিত হয়ে জনগনের ভালোবাসা অর্জন করেছেন। বর্তমানে তিনি প্যানেল চেয়ারম্যানের দায়িত্বও পালন করছেন। এবারের নির্বাচনে লাবসা ইউনিয়নে আলিম কে রুখতে করতে গোলাম কিবরিয়া বাবু বিকল্প নেই।
লাবসা ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করি। কিন্তু বিএনপি নেতা নির্বাচিত হয়। এর একমাত্র কারণ ইউনিয়নের আওয়ামীলীগের প্রার্থী বাছাই করা হয় না। ভালো প্রার্থী ছাড়া আলিমের কবল থেকে ইউনিয়নটি উদ্ধার করা সম্ভব না। এটি শুধু মাত্র আমার একার কথা না। পুরো ৩নং ওয়ার্ডবাসীর কথা। তবে এবার যদি গোলাম কিবরিয়া বাবুকে নৌকার মনোনয়ন দেওয়া হয়। তাহলেই আলিমকে পরাজিত করা সম্ভব হবে। অন্যথায় আবারও হাতছাড়া হবে। আমাদের দাবি একটাই যাচাই-বাছাই করে ভালো প্রার্থীকে যেন উর্দ্ধতন নেতৃবৃন্দ নৌকার প্রার্থী মনোনীত করেন।
লাবসা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক রহমত আলী বলেন, আমাদের ইউনিয়নটি দীর্ঘদিন বিএনপির চেয়ারম্যান থাকায় উন্নয়ন বঞ্চিত। সারা দেশে উন্নয়নের ছোয়া লাগলেও পৌরসভার একেবারে পাশের ইউনিয়ন হওয়ার শর্তেও উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি। আমরা আওয়ামীলীগের রাজনীতি করলেও এখানে নেতৃত্ব সংকট চরম। বিশেষ করে ভোটের সময় যোগ্য প্রার্থী দিতে না পারায় বার বার ইউনিয়নটি বিএনপির দখলে চলে যায়। এবার তিনজন মনোনয়ন প্রত্যাশীর মধ্যে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি শাহনেওয়াজ একজন ভদ্র মানুষ হলেও জন সমর্থন নেই এবং থানা আওয়ামীলীগ নেতা নজরুল ইসলাম দীর্ঘদিন আওয়ামীলীগ করলেও জন সমর্থন না থাকায় তারা মনোনয়ন পেলে আবারো পরাজয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে যুবলীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বাবু ইতোমধ্যে ইউনিয়নের সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছেন। তাকে মনোনয়ন দিলে আলিমকে খুব সহজেই পরাজিত করা সম্ভব হবে। ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম বলেন, আলিম বার বার নির্বাচিত হওয়ার একমাত্র কারন আমাদের প্রার্থী বাছাই করা হয় না। যোগ্য প্রার্থী বাছাই করতে পারলে নৌকার বিজয় সম্ভব হবে। পূর্বে যারা দাড়িয়েছেন তাদের দিয়ে আলিমকে হারানো অসম্ভব। তবে গোলাম কিবরিয়া বাবু যদি নৌকার মনোনয়ন পান তাহলেই ইউনিয়ন আলিমের কবল থেকে উদ্ধার করা সম্ভব হবে।