দেশের খবর : দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কর্মকর্তা মো. শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম ও অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রামে (২) থাকাকালে উপসহকারী পরিচালক শরীফের ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসদাচরণে তিন ব্যবসায়ীর জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এর প্রতিকার চেয়ে তারা দুদক চেয়ারম্যানের কাছে অভিযোগ করেছেন। এর তদন্তও শুরু করেছে দুদক। এছাড়া উচ্চ আদালতের নির্দেশে শরীফের অপকর্মের তদন্তে দুদক উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
বর্তমানে পটুয়াখালীতে কর্মরত দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ- চট্টগ্রামে থাকাকালে তিনি কক্সবাজারের সিআইপি খেতাবপ্রাপ্ত এক ব্যবসায়ীকে মিথ্যা মামলায় রিমান্ডে নিয়ে নির্যাতন করেছেন। নিয়মবহির্ভূতভাবে এক ব্যবসায়ীর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ ও নোটিশ দিয়ে ডেকে নিয়ে গ্রেফতার করেছেন। শরীফের বিরুদ্ধে নির্যাতিত ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিসসহ ভুক্তভোগী একাধিক ব্যক্তি দুদকে চিঠি দিয়েছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজারের বাহারছড়া বাজারের পিটিআই রোডের আবদুল হালিমের বাড়ির দ্বিতীয় তলায় অভিযান চালায় র্যাবের একটি টিম। এ সময় সেখান থেকে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের এলএ শাখার সার্ভেয়ার ওয়াসিম খানকে আটক এবং ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকা জব্দ করা হয়। জমি অধিগ্রহণ চেকের বিপরীতে ঘুষ হিসাবে এ সব টাকা নেন ওয়াসিম। এ ঘটনার তদন্ত করে দুদকের উপ-সহকারী পরিচালক শরীফ উদ্দিন। তদন্ত শেষে ওয়াসিমসহ তিন সার্ভেয়ারের বিরুদ্ধে তিনি মামলা করেন। ২০২০ সালের ১০ মার্চ করা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তাও হন শরীফ। অভিযোগ, এ মামলার সূত্র ধরে দুদক কর্মকর্তা শরীফ কক্সবাজারের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে যারা টাকা পেয়েছেন তাদের হয়রানি করেন। জমির মালিক না হয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষতিপূরণের টাকা নেওয়ার অভিযোগ আনেন তিনি। মামলায় জড়ানোর ভয় দেখিয়ে তিনি দালাল বা সোর্সের মাধ্যমে ঘুস দাবি করেন। যারা বেঁকে বসেন মূলত তাদের তিনি হয়রানির পথ বেছে নেন। এ মামলার সূত্র ধরে ব্যবসায়ী মোহাম্মদ ইদ্রিস, অ্যাডভোকেট নুরুল হকসহ একাধিক ব্যক্তিকে শরীফ নোটিশ দেন। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কার্যালয়ের জন্য কক্সবাজার মৌজার জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে তারা ক্ষতিপূরণের টাকা উত্তোলন করেন। ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি ব্যবসায়ী ইদ্রিসকে নোটিশ দিয়ে ৮ মার্চ সকাল সাড়ে ৯টার মধ্যে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে (সজেকা) হাজির হতে বলা হয়। কিন্তু এর আগেই ২ মার্চ তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করা হয়। ইদ্রিসকে আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেন শরীফ। নোটিশপ্রাপ্ত অ্যাডভোকেট নুরুল হককেও গ্রেফতার করা হয়। তবে তিনি আদালত থেকে জামিন নেন।
ব্যবসায়ী ইদ্রিস বলেন, পিবিআই প্রকল্পে আমার জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে বৈধমালিক হিসাবে ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছে। কিন্তু মাতারবাড়ি প্রকল্পের জমির মামলায় আমাকে গ্রেফতার করা হয়। কক্সবাজারের পিডিবি রেস্ট হাউস ও চট্টগ্রামের দুদক কার্যালয়ে নিয়ে আমাকে নির্মম নির্যাতন করেন শরীফ উদ্দিন। তার শেখানো মতে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিতে তিনি জোরজবরদস্তি করেন। প্রায় তিন মাস জেল খেটে বের হওয়ার পর হয়রানি নির্যাতনের বিবরণ দিয়ে আমি দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দিয়েছি। ভুক্তভোগী আইনজীবী নুরুল হক বলেন, শরীফ উদ্দিনের মামলার তদন্তের অধিক্ষেত্র ছিল মাতারবাড়ি কয়লা বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জমি অধিগ্রহণ নিয়ে। ওই প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত সার্ভেয়ারের বাসা থেকে ৯৩ লাখ ৬০ হাজার ১৫০ টাকাও উদ্ধার হয়েছে। কিন্তু ক্ষমতার অপব্যবহার করে দুদকের অনুমোদন ছাড়াই শরীফ কক্সবাজার মৌজায় পিবিআই কার্যালয়ের জন্য অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের গ্রেফতার ও হয়রানি করেছেন। ওই মৌজার জমি অধিগ্রহণের বিপরীতে ক্ষতিপূরণের টাকা আমিও পেয়েছি। অভিযোগ ছাড়াই এখতেয়ারবহির্ভূতভাবে শরীফ আমাকে গ্রেফতার ও হয়রানি করেছেন। এর প্রতিকার চেয়ে দুদক চেয়ারম্যান বরাবরে চিঠি দিয়েছি।
অপর ভুক্তভোগী বেলায়েত হোসেন বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই শরীফ উদ্দীন চিঠি দিয়ে আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করেন। টাকা তুলতে না পারায় এর কারণ জানতে চেয়ে শরীফ ও দুদক কর্তৃপক্ষ বরাবরে চিঠি দেই। কোনো সাড়া না পাওয়ায় উচ্চ আদালতে রিট করি। হাইকোর্টের দ্বৈত বেঞ্চ ১৬ মার্চ আদালতে তাকে সশরীরে তলব করে ব্যাখ্যা দিতে বলেন। শরীফের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় আদালত আমার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার নির্দেশ দেন। একইসঙ্গে শরীফের আচরণকে ক্ষমতার অপব্যবহার, এখতেয়ারবহির্ভূত ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে আদালত মন্তব্য করেন। এ ব্যাপারে জানতে দুদক কর্মকর্তা শরীফ উদ্দীনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হয়। এসব বিষয় তদন্তাধীন বলে তিনি কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।