শ্যামনগর প্রতিনিধি : সাতক্ষীরায় যৌতুকের দাবিতে গৃহবধূ খুনের ঘটনায় এক মাত্র কন্যা শিশুর নিরাপত্তা চেয়ে শ্যামনগর থানায় সাধারণ ডায়েরী করেছেন কন্যা শিশুর নানা আব্দুল বারী মোড়ল। ৬ নভেম্বর শ্যামনগর থানায় ২৯১ নং জিডিটি করেন তিনি।
সুত্রে জানা যায়, গত ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ ইং তারিখে সাতক্ষীরা সদরের মুন্সীপাড়ায় মুজিদ সানার ভাড়া প্রদত্ত বাসায় গৃহবধূ রিপুনা (২৫) নৃশংসভাবে খুন হন। গৃহবধূ রিপুনা সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার কাশিমাড়ী গ্রামের আব্দুল বারী মোড়লের জ্যোষ্ঠ কন্যা।
২০১৭ সালের দিকে পার্শ্ববর্তী কালিগঞ্জ উপজেলার মুকুন্দ মধুসুদনপুর গ্রামের হোসেন আলী গাজীর দ্বিতীয় পুত্র জিয়াউর রহমান (৩৫) এর সাথে নগদ টাকা সহ যথেষ্ট উপহার সামগ্রী দিয়ে বিবাহ সম্পন্ন হয়। দাম্পত্য জীবনে তাদের জান্নাতুল মাওয়া ঐশী (২.৫) নামের একটি কন্যা সন্তান আছে। জিয়াউর রহমানের মুন্সিপাড়ায় “ঐশী অটো” নামের একটি খুচরা যন্ত্রাংশের দোকান ছিল। ঐ দোকানে জিয়াউর রহমানের আপন ভাগ্নে শফিউল্লাহ (২৫) পার্টনার হওয়ায় মুন্সিপাড়ায় মামা ভাগ্নে একই বাসায় থাকত।
এদিকে দোকানের সম্প্রসারণের লক্ষে আরও এক লক্ষ টাকা যৌতুকের দাবীতে স্ত্রী রিপুনার উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি সহ তাকে শারিরীক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করত বলে জানা যায়।
গত ১৫ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান স্ত্রী সন্তান কে সাথে নিয়ে শ্বশুরবাড়ি কাশিমাড়ী গ্রামে বেড়াতে আসে এবং দাবীকৃত যৌতুকের টাকা না পেয়ে স্ত্রী রিপুনা কে মারপিট করে একমাত্র শিশু কন্যা সহ স্ত্রী কে ফেলে সাতক্ষীরায় চলে যায়। এরপর গত ২৯ সেপ্টেম্বর জিয়াউর রহমান পরিকল্পনা মাফিক তার ভাগ্নে শফিউল্লাহ কে দিয়ে মোবাইল ফোনে স্ত্রী কে সাতক্ষীরা বাসায় ডাকে।
পরদিন অর্থাৎ ঘটনার দিন (৩০ সেপ্টেম্বর) রিপুনা সাতক্ষীরা বাসায় পৌছায় এবং যৌতুকের টাকা না পাওয়ায় জিয়াউর রহমান ক্ষিপ্ত হয়। সহযোগী শফিউল্লাহ কে দিয় শিশু কন্যা ঐশী কে বাহিরে পাঠায়ে জিয়াউর রহমান এই সু্যোগে স্ত্রী রিপুনা কে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে এবং খুনের ঘটনাকে আত্মহত্যায় রুপদানের লক্ষে ঘরের মধ্যে সিলিং ফ্যানে ওড়না বেধে রিপুনার মৃতদেহ কে ঝুলিয়ে রাখে। এবং চোকি খাটের ধারে রিপুনার মৃতদেহ টাকে এমন ভাবে রাখে যাতে দেখলেই মনে হয় ওড়নার পেচ খুলে লাশ নিচে পড়েছে।
এরপর কৌশলে সুতার সাহায্যে ভিতরের সিটকানী দিয়ে সে আত্মগোপন করে। লাশের ময়না তদন্তের ব্যবস্থা সহ ভিকটিমের নানাজী আলাউদ্দিন সানা বাদী হয়ে সাতক্ষীরা বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে জিয়াউর রহমান ও শফিউল্লাহ কে আসামী করে পিটিশন ৪৩৯/২১ দায়ের করেন। রিপুনার পিতা আব্দুল বারী মোড়ল শ্যামনগর থানায় উপস্থিত হয়ে ৬ নভেম্বর ২৯১ নম্বর জিডিটি দায়ের করেন।
জিডি সুত্রে জানা যায়, হত্যা মামলা থেকে পরিত্রাণের লক্ষে আসামীদ্বয় তাদের অসৎ সহযোগী অলিউল্যাহ, আজিজুল গাজী, রেজাউল গাজী, হোসেন আলী ও সুফিয়া বিবি মিলে বাদী পক্ষ কে ফাঁসানোর লক্ষে আব্দুল বারী মোড়লের দায়িত্বে থাকা শিশু ঐশী কে অপহরণ, গুম, খুন এবং তাদের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করার ঘোরতর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ভিকটিমের ময়নাতদন্ত সহ ঘটনার তথ্য উদ্ধৃারে ব্যাপকভাবে তদন্ত কার্য অব্যাহত রয়েছে বলে বাদী পক্ষ তথ্য নিশ্চিত করেছে।