আসাদুজ্জামান : সাতক্ষীরায় মেডিকেল কলেজ, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি, টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার ও যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং শ্যামনগর কলেজ জাতীয়করণসহ বেশ বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে বর্তমান সরকার। কিন্তু সরকারের সব উন্নয়ন কর্মকা- ম্লান করে দিচ্ছে সড়ক-মহাসড়কের বেহাল দশা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা। এতে একই সাথে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে সাতক্ষীরার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য। সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, জেলার সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়ক, সাতক্ষীরা-যশোর সড়ক, সাতক্ষীরা-আশাশুনি সড়ক ও সাতক্ষীরা শহরের অধিকাংশ সড়কের পিচ উঠে গিয়ে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। খানা-খন্দে চলাচলে দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েকগুণ। আর এ দুর্ভোগের জন্য জনপ্রতিনিধিদের অবহেলা ও অপরিনামদর্শিতাকে দায়ী করছেন স্থানীয়রা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জেলার সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে স্থানীয় সংসদ সদস্যরা গত আট বছরে কোন ভূমিকাই রাখেননি। এর মধ্যে সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ডা. আ ফ ম রুহুল হক পাঁচ বছর মন্ত্রী ছিলেন। তার প্রচেষ্টাতেই সাতক্ষীরা পেয়েছে একটি মেডিকেল কলেজসহ অনেক প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তিনি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি। সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের বড় অংশ বয়ে গেছে তার সংসদীয় এলাকা দিয়ে। চলাচলের অযোগ্য সড়ক উন্নয়নে তিনি বারংবার সংশ্লিষ্ট বিভাগকে তাগদা দিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এ অবস্থা থেকে উত্তরণের কোন নজির চোখে পড়েনি জেলাবাসীর। তবে, সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে সাতক্ষীরা-২ নির্বাচনী এলাকাতেও নেই কোন উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত। সাতক্ষীরা শহরের কদমতলা থেকে বাকাল পর্যন্ত সড়কের বেহাল দশাই তার প্রমাণ। যা সরকারের ভাবমূর্তিকে চরমভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন করে তুলেছে। আর কালিগঞ্জ উপজেলার আটটি ইউনিয়ন ও শ্যামনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা-৪ নির্বাচনী এলাকার উপর দিয়ে বয়ে চলা কালিগঞ্জ-মুন্সীগঞ্জ সড়কের করুণ অবস্থাই বলে দেয় স্থানীয় জনপ্রতিনিধির ভূমিকা। জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের মতে, সাতক্ষীরা-মুন্সীগঞ্জ সড়কের ৬৫ কিলোমিটারের মধ্যে ৮-৯ কিলোমিটার, সাতক্ষীরা সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ২৭ কিলোমিটারের মধ্যে ৭-৮ কিলোমিটার চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। যদিও বাস্তবে অবস্থা আরও করুণ। আর সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বেহাল দশার কারণেই বিকশিত হতে পারছে না সাতক্ষীরার সম্ভাবনাময় পর্যটন শিল্প। যদিও একমাত্র সাতক্ষীরা দিয়েই সড়কপথে সুন্দরবন দেখা যায়।
বউ-বাচ্চা নিয়ে রাজশাহী থেকে সুন্দরবন দেখতে আসা এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এই পথে কেউ ভ্রমণে আসে। বউ-বাচ্চা নিয়ে কি যে বিপদে পড়েছি? রাস্তা-ঘাটের যে অবস্থা, আসতে গিয়েই তো সবাই অসুস্থ। ফিরতে পারলে বাচি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এতো সম্ভাবনাময় একটা জায়গা। অথচ কি বেহাল অবস্থা। এখানকার নেতারা কি করে, প্রশ্ন করেন তিনি। স্থানীয় একাধিক একজন পর্যটক গাইড নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ভাই যারাই আসে, সবার মুখে একই কথা, রাস্তা ভাল না। আসলেই তো, সড়কের উন্নয়নে গত এক দশকে কোন পদক্ষেপই চোখে পড়ে নি। মাঝে-মধ্যে ইট-পাথর দিয়ে দায়সারাভাবে পট্টি দেওয়া হয়, কিন্তু তা থাকে এক সপ্তাহ। এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আলী নুর খান বাবুল বলেন, সাতক্ষীরার একটি সড়কও চলাচলের উপযোগী নেই। এখানকার সংসদ সদস্যরা বিষয়টি দেখেন ওনা, শোনেন ওনা। সরকার জেলায় অনেক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করলেও একমাত্র সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাই সব উন্নয়ন খেয়ে ফেলছে। সড়ক ও যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্তমান অবস্থা নিয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মুহাম্মদ মুনজুরুল করিম বলেন, ভালভাবে সংস্কারে যে পরিমান বরাদ্দ প্রয়োজন, তা নেই। তবে, খুব দ্রুত সাতক্ষীরা-কালিগঞ্জ সড়কের কিছু অংশে রিপেয়ারিংয়ের ৩০ লাখ টাকার কাজ শুরু হবে। আর সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের কিছু অংশ পুনর্নির্মাণে নয় কোটি টাকার কাজ শুরু হবে বলে তিনি আরো জানান।