দেশের খবর : রাজধানীর বনানীর রেইনট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ছাত্রীকে ধর্ষণের মামলায় আপন জুয়েলার্সের মালিকের ছেলে সাফাত আহমেদসহ পাঁচ আসামিকে খালাস দিয়েছেন আদালত। আজ বৃহস্পতিবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭-এর বিচারক মোসাম্মৎ কামরুন্নাহার এ রায় ঘোষণা করেন।
এদিন বিচারক দুপুর সাড়ে ১২টায় আদালতের এজলাসে রায় দেওয়ার জন্য উঠেন। এরপরে তিনি নিজ হাতে রায় লেখা শুরু করেন। প্রায় দেড় ঘণ্টা লেখার পর তিনি দুপুর ২টায় রায় পড়া শুরু করেন। রায় পড়ার সময় বিচারক প্রথমে বলেন, ‘আপনারা বলেন মামলাটা আলোচিত। কিন্তু আমার কাছে সব মামলা একই।’
এর পরে, সাক্ষীদের জবানবন্দি বিচারক আদালতে পড়ে শুনান। এ সময় তিনি প্রথমে রেইনট্রি হোটেলে কর্মরত কর্মচারীদের জবানবন্দি পড়ে শুনান। তিনি বলেন, ‘কোনো সাক্ষী ঘটনার দিন ধর্ষণের কোনো ঘটনা দেখেননি। এমনকি কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে, তাও দেখেননি। ঘটনার ৩৮ দিন পরে পুলিশ এসে বললে, তারা ঘটনার কথা শুনেন। সাক্ষীদের এমন বক্তব্যে প্রতীয়মান হয় যে, ধর্ষণের কোনো ঘটনা ঘটেনি বা ভিকটিমরা সেখানে গিয়েছিলো কি না তাও স্পষ্ট নয়।’
এর পরে বিচারক ডাক্তারি রিপোর্টের পর্যালোচনা করেন। এ সময় বিচারক বলেন, ‘ঘটনার ৩৮ দিন পরে মামলা হয়েছে। এত দীর্ঘদিন মামলা করার কারণে, মেডিকেলে কোনো ধর্ষণের আলামত আসেনি। এ ছাড়া ভিকটিম শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্থ বলে প্রতীয়মান হয়েছে। তাই মেডিকেল রিপোর্টেও কোনো ধর্ষণের প্রমাণ হয়নি। এবার ভিকটিমের ঘটনার দিন পরিহিত লং কামিজ পুলিশ জব্দ করে এবং তা কেমিকেল টেস্ট করানো হয়েছে। সেখানেও কোনো ধরনের বীর্য পাওয়া যায়নি। অতএব এতেও স্বীকৃত যে, ধর্ষণ হয়নি।’
বিচারক পরবর্তীতে আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি পর্যালোচনা করে বলেন, আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেওয়ার সময় সংশ্লিষ্ট ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের আশ্বস্ত করেননি, আসামিরা যদি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দেন তাহলে তাদের আর রিমান্ড দেওয়া হবে না। এতে স্বীকারোক্তি স্বেচ্ছায় দেওয়া ছিলো বলে প্রতীয়মান হয় না। এ ছাড়া আসামিরা স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রত্যাহারের আবেদন করেছেন। সেখানে তারা বলেছেন, তাদের নির্মমভাবে নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়েছে। এ ছাড়া, ধর্ষণ সংক্রান্ত বিষয়ের সঙ্গে কে কীভাবে জড়িত তা আসামিরা ১৬৪ ধারা জবানবন্দিতে সুষ্পষ্টভাবে বলেননি। স্বীকারোক্তিমূলক বক্তব্যে জোরপূর্বক ধর্ষণ বা প্রতারণামূলকভাবে কোনো শারীরিক সম্পর্ক হয়েছে কি না তা পরিষ্কার হয়নি।
বিচারক এ সময় বলেন, ‘মামলা ফাইল হয়েছে ঘটনার ৩৮ দিন পর। মেডিকেলে ধর্ষণের কোনো আলমত নেই এবং কাপড়ে বীর্যের আলামত নেই। এ মামলায় আদালতের সময় অনেক নষ্ট হয়েছে। ৯৩টি কার্যদিবসে আদালতের সময় নষ্ট হয়েছে। এ মামলায় ভিকটিম আগে থেকে শারীরিক সম্পর্কে অভ্যস্থ। এ মামলায় প্রভাবিত হয়ে তদন্ত করেছেন তদন্ত কর্মকর্তাও।’
বিচারক এ সময় পর্যালোচনায় বলেন, ‘ঘটনার ৭২ ঘণ্টার পরে কেউ মামলা নিয়ে এলে পুলিশ যাতে মামলা রেকর্ড না করে সে বিষয়ে পর্যালোচনায় নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। হোটেলে ভিকটিমরা স্বেচ্ছায় থাকতে গিয়েছেন। তারা ধর্ষণের শিকার হয়নি। এ ছাড়া, এক নম্বর আসামি (সাফাতের) সদ্যডিভোর্সি স্ত্রী ফারিয়া মাহবুব পিয়াসার প্ররোচনায় এ মামলা দায়ের করা হয়েছে।’
বিচারক আরও বলেন, ‘ভিকটিমরা যদি সত্যিকারের ধর্ষণের শিকার হতেন তাহলে সর্বপ্রথম তাদের কাজ হতো আগে থানায় যাওয়া। তাই অত্র আদালত মনে করে অত্র মামলায় আসামিরা নির্দোষ। আসামিদের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষ সন্দেহাতীতভাবে মামলা প্রমাণ করতে পারে নাই, তাই আসামিদের খালাস দেওয়া হলো।’
রায় শোনার পর আসামিরা বিচারককে সালাম দেন এবং আলহামুদিল্লাহ বলে একে অপরকে জড়িয়ে ধরেন। এরপরে তাদের আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। আজ তাদের খালাসের আদেশ কারাগারে পোঁছালে আগামীকাল শুক্রবার সকালে মুক্তি দেওয়া হবে।