রাঙামাটির লংগদু উপজেলায় যুবলীগের এক নেতাকে হত্যার প্রতিবাদে সেখানকার পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সময় গুনমালা চাকমা (৭৫) নামে এক নারী মারা গেছেন। এছাড়া এই হামলার ঘটনায় লংগদু উপজেলায় ১৪৪ ধারা জারি করেছে রাঙামাটি জেলা প্রশাসন। লংগদু উপজেলার আটারকছড়ার ইউপি চেয়ারম্যান মঙ্গল কান্তি চাকমা এ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বিক্ষোভ মিছিলের সময় প্রশাসনের আশ্বাস পেয়ে তারা ঘরবাড়িতে ছিলেন। কিন্তু তারপরও তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেওয়া হয়েছে। এতে তারা সহায় সম্বলহীন হয়ে পড়েছেন। এসময় আগুনে পুড়ে গুনমালা চাকমা নামে এক বৃদ্ধ নারী মারা গেছেন। এদিকে জনসংহতি সমিতির জেলা শাখার তথ্য ও প্রচার সম্পাদক মঙ্গল কুমার চাকমা বলেন, ‘এক মোটরসাইকেল চালকের লাশ উদ্ধারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১ জুন) আনুমানিক রাত ১০টার দিকে লংগদু সদরের তিনটিলা এলাকায় মিছিল পৌঁছালে কোনও উসকানি ছাড়াই জনসংহতির সমিতির অফিসসহ এলাকার বাড়িঘর ও দোকানগুলোতে আগুন ও লুটপাট করা হয়।’ মঙ্গল কুমার চাকমার দাবি- আগুনে তাদের প্রায় ২০০টি ঘরবাড়ি ও দোকানপাট সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের সবাইকে গ্রেফতারেরও দাবি জানান তিনি। এদিকে পাহাড়িদের ওপর হামলার ঘটনায় মো. সবুজ, মো. খায়ের ও মামুন নামে তিনজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। লংগদু থানার ওসি মো. মোমিনুল ইসলাম এ ঘটনা জানিয়েছেন। তিনি জানান, সেনাবাহিনীর সদস্যরা তাদেরকে আটক করে পুলিশের কাছে সোপর্দ করেছে। জানা গেছে, বৃহস্পতিবার (১ জুন) লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুইজন যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার দিকে রওনা হন। দুপুরের পর দীঘিনালার চার মাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে তার মৃতদেহের ছবি দেখে সনাক্ত করে পরিবার ও বন্ধুরা। শুক্রবার সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। সেখান থেকে লংগদুবাসীর ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি বিশাল শোকমিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাওয়ার পথে হঠাৎ একই উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলী নামে এক বাঙালির বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে এমন খবর পেয়ে এই মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়া হয়। এ ঘটনার পরপরই সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়। পরবর্তী নির্দেশ দেওয়া না পর্যন্ত এ আদেশ বলবৎ থাকবে বলে জানানো হয়। এদিকে কোনও ধরনের নাশকতা এড়াতে বর্তমানে ঘটনাস্থলে বিপুল পরিমাণ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।