ফিচার

কালের বিবর্তনে হারিয়ে যাচ্ছে মসলা তৈরির সরঞ্জাম ‘শীল-পাটা-নোড়া’

By Daily Satkhira

June 04, 2017

নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘শীল-পাটা-নোড়া’- এ নামগুলো অনেকের কাছে পরিচিত আবার অনেকের কাছে কিছুটা অপরিচিত। হ্যা, অপরিচিত এ কারণে যে- বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে এগুলোর ব্যবহার কমে যাচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তির সংযোজনে। স্থানীয় ভাষায় ‘শীল-পাটা-নোড়া’ ছিল রান্নার অন্যতম প্রধান সরঞ্জাম। যে কোন পরিবারের রান্না-বান্নার জন্য মসলা অপরিহার্য। আর সেই মসলা প্রস্তুত করণের জন্য ‘শীল, পাটা কিংবা নোড়া’র ব্যবহার ছিল অবসম্ভাবী। ‘ছিল’ কথাটিরও তাৎপর্য আছে। বর্তমানে মসলা তৈরির জন্য অনেকেই আর এ ‘শীল-পাটা-নোড়া’ ব্যবহার করেন না। বাজার থেকে প্যাকেটজাত রেডিমেট মসলা পাওয়া যাচ্ছে, কিংবা আধুনিকতার ছোয়ায় ব্যালেন্ডার মেশিনেও মসলা তৈরি করছেন গৃহিনী ও রাধুনীরা। রান্না-বান্নার ক্ষেত্রে যেকোন বাটা বা বাটনার ক্ষেত্রে এ ‘শীল-পাটা-নোড়া’র ব্যবহার ছিল গ্রাম্যঞ্চল থেকে শুরু করে শহুরেও। আদা, রসুন, পেয়াজ, লবঙ্গ, এলাচ, দালচিনি (দারুচিনি), গরম মসলা, সরিষাসহ সকল মসলা ও ঘেটকলসহ বিভিন্ন সবজিও বাটার জন্য ‘শীল ও নোড়া’য় হাত বুলাতে হতো। সাধারণত পাথরের তৈরি এ ‘শীল-নোড়া’র ঘর্ষণে মসলা হতো মিহি আর চমৎকার স্বাদপূর্ণ। সেক্ষেত্রে ‘শীল-নোড়া’য় ছোট ছোট গর্ত করে ‘ধার কাটানো’ থাকতো। মসলা তৈরি লক্ষ্যে ‘শীল ও নোড়া’য় ঘর্ষণে যখন সেই ‘ধার’ ক্ষয়ে যেতো তখন কয়েক মাস পর পর ওই ‘শীল-পাটা-নোড়া’য় ‘ধার কাটানো’ হতো। আর পেশায় নিয়োজিত ছিলো এক শ্রেণির মানুষ। তারা বাড়ি বাড়ি ঘুরে ‘শীলের ধার কাটাবেনৃনোড়ার ধার কাটাবেনৃ’ বলে চিৎকার করে কাজ ‘শীল-নোড়া’য় ‘ধার কাটিয়ে’ তাদের পেশার স্বপক্ষে আয়-রোজগার করতেন। ‘শীল-পাটা-নোড়া’কাটানো কারিগররা নিপুন হাতে লোহার ছেনি-হাতুড়ি দিয়ে গৃহস্থলির ‘শীল-নোড়া’র ‘ধার কাটাতেন’ চশমা পড়ে, চোখ বুজে, চোখে কাপড় বেধে কিংবা খালি চোখেও। বর্তমানে বিশ্বায়নের আধুনিক যুগে অধিকাংশ গৃহবধূরা রান্নার ক্ষেত্রে মসলা বাটেন বা মিহি করেন ব্যালেন্ডার মেশিনে কিংবা বাজার থেকে কেনা প্যাকেটজাত মসলা দিয়ে। ফলে কমে এসেছে ‘শীল-পাটা-নোড়া’র ব্যবহার। কয়েক বছর আগেও এমন চিত্র সচারচার দেখা মিললেও এখন তেমনটা আর দেখা মেলে না। তবু এ পেশার ‘কিছু মানুষ’ তাদের পেশা ছাড়েন নি। অনেক গৃহিনী কিংবা রাধুনিরাও ‘শীল-পাটা-নোড়া’র ব্যবহার ছাড়েন নি। ভবিষ্যতে হয়তো বা আর এই কারিগরদের দেখা মিলবে না, খুজে পাওয়া যাবে না ‘শীল-পাটা-নোড়া’ও। আজকের শিশুদেরও ভবিষ্যতে হয়তো এগুলো সম্বন্ধে অজানা থাকতে পারে। হয়তো স্মৃতি হয়ে বেঁচে থাকবে আজকের এই ‘শীল-পাটা-নোড়া’ ও এর কারিগররা। তবে কালের বিবর্তনে যতই মিলিয়ে যাক না কেন এগুলো ধরে রাখারও চেষ্টাও থাকবে অনেকের। এমনটাই প্রত্যাশা আমাদের।