কেউ পারেনি, আগে চারটি দল টানা দ্বিতীয় ফাইনাল খেলেও চ্যাম্পিয়নস লিগে শিরোপা ধরে রাখার মিশনে সফল হয়নি। রিয়াল মাদ্রিদ সেটা করে দেখাল। জুভেন্টাসের বিপক্ষে কার্ডিফ ফাইনালে ইতিহাস গড়ল রিয়াল। শনিবার ৪-১ গোলে জিতে টানা দ্বিতীয় ও ১২তম চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা জিতল তারা।
এর আগে এসি মিলান, আয়াক্স, জুভেন্টাস ও ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড টানা দ্বিতীয় ফাইনালে উঠেও শিরোপা হাতে নিতে পারেনি। ইতিহাস তাই ছিল রিয়ালের বিপক্ষে। কিন্তু দুর্দান্ত রক্ষণভাগের বিপক্ষে সেরা আক্রমণভাগ সেই ইতিহাসকে উল্টে দিয়ে নতুন ইতিহাস গড়ল। শুরুটা কিন্তু রিয়ালের বিপক্ষেই ছিল। মাত্র ৬ মিনিটে গনসালো হিগুয়েইন দুইবার ও মিরালেম পিজানিচ কঠিন পরীক্ষা নেন রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের। প্রত্যেকবার জুভেন্টাসের এ প্রচেষ্টাকে সহজে ব্যর্থ করেছেন কোস্টারিকান গোলরক্ষক। বিশ্বের সেরা রক্ষণভাগের দল প্রথম ১৫ মিনিট আক্রমণভাগেও ছিল ক্ষুরধার। কিন্তু হঠাৎ করে ভেঙে পড়ে ইতালিয়ান আক্রমণভাগ, আর কাউন্টার অ্যাটাকে সুযোগ পেয়ে যায় রিয়াল। ২০ মিনিটে দানি কারভাহালের সঙ্গে ওয়ান-টু-ওয়ান পাসে সফল হন রোনালদো। তার নিচু শটটি খুব চেষ্টা করেও থামাতে পারেননি গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন।
২৬ মিনিটে ইস্কো ব্যবধান দ্বিগুণ করার সুযোগ পেয়েও সফল হননি। বরং পরের মিনিটে চমৎকার গোলে সমতায় ফেরে জুভেন্টাস। সান্দ্রোর দূরপাল্লার ক্রসে বল পান হিগুয়েইন। আর্জেন্টাইন তারকার চতুর পাস বুক দিয়ে ঠেকিয়ে ওভারহেড কিকে নাভাসকে পরাস্ত করেন মারিও মানজুকিচ। ৩০ মিনিটে একইভাবে গোলের চেষ্টা করে বুফনের কাছে প্রতিহত হন রোনালদো। প্রথমার্ধের বাকি সময় দুই দল আর কোনও গোলের দেখা পায়নি।
৫৮ মিনিটে সান্দ্রোর বাধায় রোনালদো ২-১ করতে পারেননি। তিন মিনিট পরই অবশ্য এগিয়ে যায় রিয়াল। জুভেন্টাসের ডিবক্স থেকে একটি ক্রস ফিরে এলে ৩০ গজ দূর থেকে শট নেন কাসেমিরো। সামি খেদিরার গায়ে আলতো স্পর্শ করে বল গতিপথ পাল্টে গোলপোস্টের বাঁপ্রান্ত দিয়ে কোনাকুনি হয়ে ঢুকে যায় জালে। বুফন অসহায় ছিলেন। ভুগতে থাকা জুভেন্টাসের ফেরার শেষ আশাটুকুও জলে ভেস্তে যায় ৬৪ মিনিটে। ডান উইং থেকে মোডরিচের ক্রসে পোস্টের খুব কাছ থেকে ৩-১ করেন রোনালদো। পেশাদার ক্যারিয়ারে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলিয়ে এটি ছিল তার ৬০০তম গোল।
৭৩ মিনিটে হ্যাটট্রিক করার বেশ কাছে ছিলেন রোনালদো। মার্সেলোর পাসে পাওয়া বলে একটু বেশিই জোরে শট নেওয়ায় ক্রসবার দিয়ে চলে যায় আরেকটি সুবর্ণ সুযোগ। শেষ ৮ মিনিট জুভেন্টাসকে একজন কম নিয়ে খেলতে হয়েছে। সের্হিয়ো রামোসকে ফাউল করে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখেন হুয়ান কুয়াদরাদো। ১০ জনের জুভেন্টাস আরও ভেঙে পড়ে। ৯০ মিনিটে রোনালদোর ফ্রিকিক প্রতিপক্ষের রক্ষণদেয়ালে লেগে ফিরে গেলে মার্সেলোর নিখুঁত পাসে দলের চতুর্থ গোল করেন আসেনসিও।
ফাইনালে রোনালদোর ইতিহাস: ইউরোপের সবচেয়ে বড় প্রতিযোগিতায় সবচেয়ে বেশি ফাইনালে গোল করার তালিকায় দুই নম্বরে উঠে এলেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো। এনিয়ে তিনটি চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে লক্ষ্যভেদ করেছেন পর্তুগিজ ফরোয়ার্ড। দুটি ভিন্ন আসরের ফাইনালে গোল করা লিওনেল মেসিকে পেছনে ফেলেছেন ব্যালন ডি’অরজয়ী।
ইউরোপিয়ান কাপ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ হিসাবে আনলে এ তালিকায় রোনালদোর উপরে কেবল রিয়ালের আরেক লিজেন্ড আলফ্রেদো দি স্তেফানো। ১৯৫৬ থেকে ১৯৬০ সালে টানা ৫টি ইউরোপিয়ান কাপজয়ের পথে ফাইনালে গোল করেছিলেন তিনি।
২০০৮ সালে চেলসির বিপক্ষে প্রথম ফাইনাল গোল করেছিলেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের রোনালদো। ৬ বছর পর অ্যাতলেতিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে অতিরিক্ত সময়ের ৪-১ গোলের জয়ে লক্ষ্যভেদ করেন রিয়াল ফরোয়ার্ড।
মানজুকিচের মাইলফলক:
অসাধারণ এক স্ট্রাইকে সমতা ফেরানো গোলে সম্মানজনক এক ক্লাবে জায়গা পেলেন মারিও মানজুকিচ। দুটি ভিন্ন ক্লাবের জার্সিতে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনালে গোল করা তৃতীয় খেলোয়াড় হলেন এ ক্রোয়েশিয়ান।
২০১৩ সালের ফাইনালে বায়ার্ন মিউনিখের জার্সিতে বরুশিয়া ডর্টমুন্ডের জালে বল জড়ান মানজুকিচ। তার আগে এ কীর্তি অর্জন করেছেন ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো (ম্যানইউ ২০০৮, রিয়াল ২০১৪ ও ২০১৭) এবং ভেলিভোর ভাসোভিচ (পার্টিজান ১৯৬৬, আয়াক্স ১৯৬৯)।
৫০০ গোলের ক্লাবে রিয়াল: প্রথম দল হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগে ৫০০তম গোলের মাইলফলকে রিয়াল। টুর্নামেন্টে সবচেয়ে বেশি গোলের তালিকায় অনেক আগেই বার্সেলোনা (৪৫৯) ও বায়ার্ন মিউনিখকে (৪১৫) পেছনে ফেলেছিল সান্তিয়াগো বার্নাব্যুর ক্লাব। এ মৌসুমে রোনালদোর প্রথম গোলে ৫০০’র ক্লাবে ঢুকে গেল রিয়াল।