এম. শাহীন গোলদার : পবিত্র কাবা শরিফের পরই বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল অনুষ্ঠিত হয় সাতক্ষীরা জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার নলতা শরীফে। দিন দিন এই ইফতার মাহফিলের পরিধি আরো বাড়ছে। প্রতিদিন গড়ে ১০ হাজার রোজাদার এখানে ইফতার প্রস্তুত করছেন। নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে ৫ থেকে ৬ হাজার এবং জেলার বিভিন্ন মসজিদ,মিশন ও মহাল্লায় ৪ হাজার ইফতারির প্লেট সরবরাহ করা হচ্ছে। এখানে ফকির, মিসকিন, গরীব, ধনী শ্রেণীর মানুষ সকল ভেদাভেদ ভূলে প্রতিদিনই অংশ গ্রহণ করেন এই ইফতার মাহফিলে। সওয়াব হাসিলের জন্য দুর দুরন্ত থেকেও ইফতারের উদ্দেশ্যে রোজাদাররা ছুটে আসেন নলতা রওজা শরীফ প্রাঙ্গনে। ১৯৫০ সাল থেকে প্রতিবছর রমজানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত নলতা শরীফ রওজা চত্বরে বিশাল ছাউনি নির্মান করে ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রমজান মাসব্যাপী এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করতেন। পরবর্তীতে তার মৃত্যুর পরও মিশন কর্তৃপক্ষ এ মাহফিলকে অব্যাহত রেখেছে। নলতা কেন্দ্রীয় আহছানিয়া মিশনের ব্যবস্থাপনায় ও নলতা শরীফের খাদেম আলহাজ্ব আনছার উদ্দিন আহমেদের বিশেষ তত্বাবধান এই ইফতার আয়োজনের করা হয়েছে। বর্তমানে এই ইফতার মাহফিল এর পরিধি বেড়ে এখন দশ হাজারে পৌঁছেছে। বর্তমানে শাহ সুফি হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহর (রহ.) রওজা প্রাঙ্গনেই এ ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়। রোজার শুরু থেকেই প্রতিদিন সেখানে একত্রিত হয়ে ইফতার করছেন প্রায় দশ হাজার মানুষ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মপ্রাণ মুসল্লীরা ইফতারের জন্য ছুটে যান সেখানে। বৃষ্টি থেকে রক্ষার জন্য অস্থায়ীভাবে টিনের ছাউনি দেওয়া হয়েছে। এছাড়া ইফতারি বিলি-বন্টন ও তদারকির জন্য রয়েছে ৪ শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক। ইফতারি সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে খেজুর, ছোলা,সিংগড়া, ফিন্নি, চিড়া, কলা ও ডিম। এত মানুষের ইফতারির আয়োজনের পরও জেলার বিভিন্ন মসজিদে এক বার করে ইফতারি পৌঁছে দেওয়া হয়। ছোলা, ডিম ও ফিন্নি বাবুর্চি বাবু হোসেন জানান, প্রতিদিন ৮০০শত কেজি দুধ দিয়ে ফিন্নি রান্না করা হয়। সিদ্ধ করা হয় ১০ হাজার ডিম। প্রতি বছরই আমি এখানে রান্নার কাজ করে থাকি। এ মাসটি আমরা রোজাদারদের খেদমত করি। সিঙ্গাড়া বাবুর্চি মুক্তার হোসেন বলেন,আমি এখানে ৩৩ বছর ধরে সিঙ্গাড়া বানাই। ১৫-থেকে ২০ জন একত্রে কাজ করি। আসরের নামাজের আগেই সিঙ্গাড়া প্রস্তুত শেষ করে ফেলি। স্বেচ্ছা সেবকরা বলেন,আমরা প্রতিদিন ৪টি গ্রুপে ৪শত স্বেচ্ছা সেবক রয়েছি এখানে। সকলেই নিজ উদ্যোগে এখানে এসেছি। বিকাল ৪টার পর থেকে বণ্টন কাজ শুরু করি। চেষ্টা করি যেন আগত কোনো রোজাদারের কোনোরূপ অসুবিধা না হয়। ৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ইফতারিতে অংশ নিতে আসা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার মো.রেজাউল ইসলাম বলেন,শুনেছি এখানে ১০ হাজার মানুষ একসঙ্গে ইফতারি করে। তাই আজ আমি অংশ গ্রহণ করতে আসলাম। অনেক জ্ঞানী-গুনী মানুষ এখানে আসেন। নলতা কেন্দ্রীয় আহ্ছানিয়া মিশনের নির্বাহী সদস্য শফিকুল আনোয়ার রনজু জানান,ক্রমান্বয়ে এটার পরিধি বেড়েই চলেছে। নতুন মসজিদটা নির্মাণ হয়ে গেলে ওখানে প্রায় ২৫ হাজার মানুষের বসার স্থান হবে। বর্তমানে অস্থায়ীভাবে টিন ও বাশ দিয়ে ছাউনি করা হয়েছে। এখানকার সকল কর্মকর্তাদের ইচ্ছা কেউ যেন খালি মুখে ফিরে না যায়। কেউ যেন কষ্ট না পায়। এটিই আমাদের মুর্শিদ মাওলা হজরত খানবাহাদুর আহ্ছানউল্লাহ (রহ.) চাওয়া। প্রতিদিন দশ হাজার প্লেট প্রস্তুত করা হয় রোজাদারদের জন্য। কারো কোনো সমস্যা হয়েছে বলে এখনও পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করতে পারিনি। যতদুর পযর্ন্ত জানা গেছে-পবিত্র মক্কা শরিফের পর এটি বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইফতার মাহফিল। প্রতিদিন ইফতারের পূর্বে প্রতিদিন ধর্মপ্রান মুসলি¬¬রা দেশ ও জাতীর কল্যানে বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেয়।