আমির হোসেন খান: কালিগঞ্জের বিষ্ণুপুর ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের বিরুদ্ধে নূর মোহাম্মদ সরদার (৫২) নামে এক ব্যক্তিকে অপহরণ ও নির্যাতনের ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। ভুক্তভোগী ব্যক্তি আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। থানা ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ২নং বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বন্ধকাটি গ্রামের মৃত নুরু মোড়লের ছেলে মজনুর রহমানের (৪৫) সাথে প্রতিবেশী মৃত সৈয়দ আলী সরদারের ছেলে নূর মোহাম্মদ সরদারের জমির সীমানা নিয়ে দীর্ঘদিন বিরোধ চলছিল। একাধিকবার মাপ জরিপ করে বিরোধীয় ওই জমির একটি তালগাছের বিষয়ে নূর মোহাম্মদের মালিকানা নিশ্চিত হয়। কিন্তু সবকিছু উপেক্ষা করে চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের পোষা লাঠিয়াল বাহিনীর সহযোগিতায় গত শুক্রবার সকাল ৮টার দিকে জোরপূর্বক তালগাছটি কেটে নেয় মজনুর রহমান। ভূক্তভোগী নূর মোহাম্মদ সরদার বিষয়টি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের নিকট জানালে তিনি আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেন। এর প্রেক্ষিতে নূর মোহাম্মদ সরদার ওই দিনই মজনুর রহমানকে প্রধান আসামি করে মোট ৬ জনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। থানার উপ-পরিদর্শক রাজিব কুমার রায় সরেজমিন তদন্ত করে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে প্রতিবেদন দেয়ার পর রোববার (০৪/০৬/১৭ তারিখ) মামলা রেকর্ড হয়।
বিষয়টি জানতে পেরে নূর মোহাম্মদের উপর ক্ষেপে যান চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন। এক পর্যায়ে রোববার রাতে নূর মোহাম্মদ সরদার তারাবী পড়ার উদ্দেশ্যে বন্ধকাটি মোড়ল বাড়ি মসজিদে যেয়ে ওজু করে মসজিদে প্রবেশের সাথে সাথে চেয়ারম্যানের আলোচিত ক্যাডার বাহিনীর অস্ত্রধারী সদস্যরা তাকে জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায়। শেখ রিয়াজ উদ্দীন নূর মোহাম্মদ সরদারকে নিজের বাড়িতে নিয়ে ঘরে আটক করে বেধড়ক মারপিট করে। খবর পেয়ে নূর মোহাম্মদের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন (৪২) চেয়ারম্যানের বাড়িতে যেয়ে স্বামীকে নির্যাতন থেকে রেহাই দিতে কাকুতি মিনতি জানায়। কিন্তু চেয়ারম্যান এতে কর্ণপাত না করায় তিনি স্থানীয় এক ইউপি সদস্যের নিকট থেকে থানার মোবাইল নাম্বাার নিয়ে অফিসার ইনচার্জ লস্কর জায়াদুল হকের সাথে স্বামীকে অপহরণ ও নির্যাতনের বর্ণনা দিয়ে তাকে রক্ষার জন্য অনুরোধ করেন। খবর পেয়ে থানা থেকে পুলিশ ঘটনাস্থলে যেয়ে একটি ঘরে আটক অবস্থায় থাকা নূর মোহাম্মদ সরদারকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসেন এবং প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এ ঘটনায় নির্যাতিত নূর মোহাম্মদের স্ত্রী ফিরোজা খাতুন বাদী হয়ে অপহরণ ও নির্যাতনের অভিযোগে রাতেই ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন (মামলা নম্বর: ১০, তারিখ: ০৪/০৬/১৭ খ্রিঃ)। নির্যাতিত নূর মোহাম্মদ সরদার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোমবার সাতক্ষীরা আদালতে উপস্থিত হয়ে বিজ্ঞ বিচারকের নিকট ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছেন বলে জানা গেছে। কালিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ লস্কর জায়াদুল হক ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ইউপি চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যক্তিকে ভয়ভীতি দেখানো, নির্যাতন করা, অবৈধ ভাবে জমি দখলসহ বিভিন্ন অভিযোগ রয়েছে। এলাকার লোকজন তাকে নব্য এরশাদ শিকদার হিসেবে অভিহিত করে। দীর্ঘদিন যাবত একটি লাঠিয়াল বাহিনী তৈরি করে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। বাড়িতে প্রতিপক্ষের লোকজনকে ধরে এনে টর্চার সেলে নির্যাতন চালাচ্ছে বলে জানতে পেরেছি। রোববার রাতের ঘটনার খবর পেয়ে তার বাড়ি থেকে নূর মোহাম্মদ সরদারকে যে অবস্থায় উদ্ধার করেছি তাতে জনগণের অভিযোগ যে সত্য তা প্রমাণিত হয়েছে। এব্যাপারে চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীনের নিকট জানার জন্য তার মোবাইলে (০১৭৫২২৭৪৭৩৭) একাধিকবার ফোন করলেও সেটি বন্ধ পাওয়া যায়।