বিশেষ ডেস্ক: কয়েকবছর আগে ইউটিউবে ‘ভাঙ্গা তরী ছেড়া পাল’ শিরোনামের একটি মিউজিক ভিডিও প্রকাশ হয়। ওই ভিডিওতে কয়েক সেকেন্ডের জন্য এক বাউলকে দেখানো হয়। কিন্তু কে জানতো বাউল ছদ্মবেশী ওই ব্যক্তি একজন দুর্ধর্ষ সিরিয়াল কিলার। তবে ভিডিও জের ধরেই র্যাবের হাতে ধরা পড়েছেন একাধিক হত্যা মামলার ওই পলাতক আসামি।
র্যাব জানিয়েছে, হেলাল হোসেনের বিরুদ্ধে তিনটি হত্যা মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজাও দিয়েছেন আদালত। এছাড়া আরও দুটি ফৌজদারি অপরাধের মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলছেন, মাস ছয়েক আগে এক ব্যক্তি র্যাবকে জানায়, বগুড়ায় ২০০১ সালে চাঞ্চল্যকর বিদ্যুৎ হত্যাকাণ্ডের আসামি হেলাল হোসেনের চেহারার সঙ্গে ওই বাউল মডেলের চেহারার মিল রয়েছে। তদন্তে নেমে র্যাব জানতে পারে গানটির শুটিং হয়েছিল নারায়ণগঞ্জের রেল স্টেশনে। সেখান থেকে ওই ব্যক্তি সম্পর্কে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যায়। সেসব তথ্য যাচাই-বাছাই করে র্যাব-৩ এর একটি দল বুধবার রাতে ভৈরব স্টেশন থেকে মিউজিক ভিডিওতে বাউল বেশধারী ওই ব্যক্তিকে, অর্থাৎ হেলাল হোসেনকে গ্রেফতার করে।
হেলাল হোসেন তার নিজ এলাকা বগুড়ায় বাউল সেলিম, সেলিম ফকির, খুনি হেলাল ও হাত লুলা হেলাল নামে পরিচিত।
হেলালকে গ্রেফতারের পর বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত একটি সংবাদ সম্মেলনে কথা বলেন খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হেলাল হোসেন আমাদের চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, বগুড়ায় ২০০১ সালের বিদ্যুৎ হত্যাকাণ্ডের চার আসামির মধ্যে সে একজন। ওই হত্যাকাণ্ডের মামলায় তার যাবজ্জীবন সাজা হয়েছে। বগুড়ায় ১৯৯৭ সালে সংঘটিত আরও একটি হত্যা মামলারও আসামি তিনি। একইসঙ্গে ২০০৬ সালে রবিউল হত্যা মামলারও আসামি তিনি। এছাড়াও নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের একটি মামলা এবং চুরির একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
র্যাব বলছে, হত্যা মামলায় সাজা হওয়ার পর এলাকা ছেড়ে আত্মগোপনের জন্য বাউলের বেশ বেছে নেয় হেলাল। এভাবেই দেশের বিভিন্ন স্টেশনে গত সাত বছর আত্মগোপনে ছিলেন হেলাল। বাউলের বেশ ধরে গান গেয়ে জীবিকাও নির্বাহ করেছেন তিনি।
র্যাব কর্মকর্তা খন্দকার আল মঈন বলেন, ১৯৯৭ সালে ২১ বছর বয়সে বিশু হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে অপরাধ জগতে পা রাখেন হেলাল হোসেন। পরে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মারামারিতে যোগ দেন তিনি। এর ফলে তিনি এলাকায় দুর্ধর্ষ হেলাল নামে পরিচিতি পায়। ২০০০ সালে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হামলায় তার বাম হাত প্যারালাইজড হয়ে যায়, যার ফলে তার নাম হয়ে যায় ‘হাত লুলা হেলাল’।
তিনি আরও বলেন, ২০১০ সালে একটি চুরির মামলায় সে জেলে যায়। ২০১১ সালে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে তার বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। চুরির মামলায় জামিনে বের হওয়ার সময়ই বিদ্যুৎ হত্যা মামলার রায়ে আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এই রায়ের পর তিনি পালিয়ে যান এবং ফেরারি জীবন শুরু করেন। মূলত ২০১৫ সাল থেকে তার এই ফেরারি জীবন শুরু হয়।
যাবজ্জীবন দণ্ডের পর পলাতক হেলাল প্রায় সাত বছর ফেরারি জীবনযাপন করেছেন। সর্বশেষ চার বছর তিনি কাটিয়ছেন কিশোরগঞ্জের ভৈরব রেলওয়ে স্টেশনে। সেখানে স্টেশনের পাশেই এক নারীকে বিয়ে করে সংসার শুরু করেন। স্টেশনে বাউল গান শুনিয়ে মানুষের কাছ থেকে পাওয়া অর্থেই চলতো তার সংসার।