নিজস্ব প্রতিনিধি : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার ১২ ইউপির নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানরা শপথ গ্রহন করেছেন। তবে শপথ নিতে পারেননি কৃষ্ণনগর ইউপির আলোচিত সাফিয়া পারভীন। ২৫ জানুয়ারি ২২ তারিখ সকাল ১১ টায় সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে কালিগঞ্জের নব নির্বাচিত চেয়ারম্যানগণ শপথ গ্রহণ করেন। শপথ পাঠ করান জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির।
তবে ১২ ইউপির মধ্যে নলতা এবং কৃষ্ণনগর ইউপির চেয়ারম্যান শপথ নেন নি। নলতার চেয়ারম্যানের গেজেট আসলেও তিনি দেশের বাইরে থাকায় শপথ নিতে পারেননি। অন্যদিকে গেজেট না আসায় শপথ নেওয়া হয়নি কৃষ্ণনগরের সাফিয়া পারভীনের। আদৌ শপথ গ্রহণ করতে পারবেন কি না তা নিয়ে রয়েছে সংশয়। যদিও সাফিয়া পারভীন খুব দ্রুতই শপথ নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যক্রম শুরু করবেন বলে শতভাগ আশাবাদী তিনি। জানা গেছে, গত ২৮ নভেম্বর কালিগঞ্জ উপজেলার ১২ ইউপিতে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে দৃশ্যমান কোন অনিয়ম দেখা যায়নি। তবে নির্বাচনের পর ভোট গননা এবং ফলাফল নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ তোলে কৃষ্ণনগর ইউপির ঘোড়া প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী জি,এম রবিউল্যাহ বাহার। ২ ডিসেম্বর ২১ তারিখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রবিউল্যাহ বাহার বলেন, কৃষ্ণনগর ইউপির নির্বাচন শেষে ভোট গননার সময় এবং পরে অধিকাংশ কেন্দ্রে প্রিজাইডিং অফিসারগণসহ কতিপয় কর্মকর্তারা লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয়ে করতে সুকৌশলে ভয়ানক অনিয়মের অবতারণ করেন।
এ কারনে ৬টি ভোট কেন্দ্রে গননা সময় ঘোড়া প্রতীকের ব্যালট বেশি থাকলেও পরবর্তীতে লাঙ্গল প্রতীকের ব্যালট বেশি এবং ঘোড়ার কম দেখা গেলে নিয়োগকৃত এজেন্ট ব্যালটের বান্ডেল চেকিং করার অনুরোধ করলে প্রিজাইডিং অফিসার আপত্তি জানান এবং বার বার বলা স্বত্বেও তিনি ব্যালটের ব্যান্ডেল চেকের অনুমতি না দিয়ে দ্রুত বস্তাবন্দি করেন। প্রিজাইডিং অফিসারের সহযোগিতায় এজেন্টদের বের করে দিয়ে একটি রুমে ব্যালট বক্স রেখে প্রায় ১ ঘন্টা পর ভোট গননা শুরু করে। এর প্রতিবাদ করেও কোন লাভ হয়নি উল্টো প্রশাসনের কর্মকর্তারা এজেন্টদের কে বিভিন্নভাবে চাপপ্রয়োগ করে ভোট গননার বিবরণীতে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করে ১ ঘণ্টা দেরিতে ফলাফল প্রকাশ করেন। সামান্য ভোটের ব্যবধানে লাঙ্গল প্রতীকের প্রার্থীকে বিজয় ঘোষনা করেন। নির্বাচনে অনিয়মের বিষয়ে ২৮ নভেম্বর রাতে কালিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে ভোট পুনরায় গননার দাবিতে লিখিত অভিযোগ জমা দিতে গেলেও অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি। উপায়ন্তর হয়ে রবিউল্যাহ বাহার হাইকোর্টে একটি রীট পিটিশন দাখিল করেন। হাইকোর্ট বিভাগ তার পিটিশনের প্রেক্ষিতে আদেশ প্রাপ্তির ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিবাদীদের আইনগত ব্যাখ্যা আদালতে উপস্থাপন করাসহ বিজয়ী ঘোষিত চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীনের গেজেট স্থগিত করেন। এদিকে ইউনিয়নবাসী সূত্রে জানা গেছে, বিজয়ী হওয়া চেয়ারম্যান সাফিয়া পারভীনের পিতা কৃষ্ণনগর ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের কন্যা। মোশাররফ হোসেন দুর্বৃত্তের হাতে নিহতের পর তার মাতা আকলিমা খাতুন চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। কিন্তু মা চেয়ারম্যান হলেও ইউনিয়নের বিচার শালিস থেকে শুরু করে পরিষদের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতে থাকে সাফিয়া পারভীন। এমনকি বিভিন্ন কাগজপত্রে মায়ের স্বাক্ষর নিজেই করেন তিনি। এছাড়া থানাকেও ইচ্ছামত ব্যবহারের অভিযোগ ওঠে সাফিয়া পারভীনের বিরুদ্ধে। এঘটনায় ২০২০ সালের ৯ জানুয়ারি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে নড়ে চড়ে বসে সাফিয়া পারভীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকাবাসী জানান, এবার নির্বাচনে সাফিয়া পারভীন অংশগ্রহণ করেন। নির্বাচনে পরাজিত হতে পারেন এমনটি ভেবে কতিপয় কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে ভোট গননায় অনিয়ম করে বিজয়ী হওয়ার চক্রান্ত করেন। প্রকাশ্যে তিনি সাফিয়ার কর্মীরা প্রচার দিতেন ভোট দিবেন ঘোড়ায় আর জিতবে লাঙ্গল। এবিষয়ে সাফিয়া পারভীন নির্বাচনের পর ভোট গননায় কারচুপির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন। পরাজিত প্রার্থী আমাকে হয়রানি করতে হাইকোর্টে একটি পিটিশন দাখিল করেছেন। যে কারণে আমার শপথ গ্রহণ স্থগিত রয়েছে। তবে আদালতে আপিল করেছি। আদালত আমার পক্ষে রায় দিয়েছেন। নির্বাচন কমিশনে সেই কপি জমা দিয়েছি। গেজেট হতে একটু সময় লাগবে।